বরগুনায় বেড়েই চলছে বাল্যবিবাহ

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এমএ সাইদ খোকন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় বেড়েই চলেছে বাল্যবিবাহ। বছরে এই উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসার ৮ম থেকে ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া অধর্শত ছাত্রী বাল্যবিবাহের শিকার হয়। প্রশাসন, বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ও সে¦চ্ছাসেবী সংগঠন বাল্যবিবাহ সাময়িকভাবে বন্ধ করতে সক্ষম হলেও শেষ পযর্ন্ত স্থানান্তরিত হয়ে বিবাহ সম্পন্ন করে। পাথরঘাটা পৌর শহর কিংবা পাথরঘাটা উপজেলার গ্রামে প্রতিনিয়ত কিশোরী মেয়েদের বাল্যবিয়ে হচ্ছে। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ওই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে। যে বয়সে ছেলেমেয়েদের বই-খাতা হাতে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা এবং সাথীদের নিয়ে বাড়ির উঠোন কিংবা বাগানে খেলাধুলা করবে, ঠিক সেই বয়সেই লেখাপড়া কিংবা খেলাধুলার পরিবতের্ স্বামীর বাড়িতে সংসার বুঝে নেয়ার দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের। ফলে বছর পেরুতে না পেরুতেই বিচ্ছেদের ঘটনাও ঘটে। সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, যৌতুকপ্রথা, দরিদ্রতা ও কাজীদের অসহযোগিতার কারণে পাথরঘাটায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না বলে অভিজ্ঞ মহলের মতামত। যে কারণে বেড়ে চলছে বাল্যবিবাহ। তবে সরকারি ঘোষণা, বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনের সভা-সেমিনারে সচেতনতা বাড়ানোর কারণে নিকাহ রেজিস্ট্রাররা (কাজী) অনেকটাই সচেতন হয়েছে। পাথরঘাটা উপজেলার বাদুরতলা, চারলাঠিমারা, হরিণঘাটা, রুহিতা, পদ্মা, হাজিরখাল, কালমেঘা, কাকচিড়াসহ গ্রাম অঞ্চলে ১৪ বা ১৫ বছর বয়সের বা তার চেয়ে একটু বেশি বয়সের শিশুদের বিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই অনেকে আবার মা হয়েছে। বিচ্ছেদের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। পাথরঘাটা উপজেলা টাস্কফোসর্ কমিটির সদস্য ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আস্থার সভাপতি সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং আমাদের সাবির্ক প্রচষ্টায় তাৎক্ষণিক বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সক্ষম হলেও অনেকে স্থানান্তরিত হয়ে বিবাহ সম্পন্ন করে ফেলছেন। তিনি আরও বলেন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ১৯ ধারাটি অপব্যাখ্যা করে প্রান্তিক জনপদে বাল্যবিবাহ হঠাৎ বেড়ে গেছে। পাথরঘাটা পৌরসভার কাউন্সিলর ও নারীনেত্রী মুনিরা ইয়াসমিন বলেন, মূলত বিশেষ বিধান রেখে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাস হওয়ার পর জনমনে ধারণা হয়েছে, ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ে দিলেও আইনগত তেমন সমস্যা হবে না। এ কারণে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকারি কমর্কতার্ বা বেসরকারি সংস্থার আগ্রহ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এটি প্রতিরোধে বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধিও তেমন ভ‚মিকা পালন করছেন না। পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সরকারি কেঁৗসুলি মো. জাবির হোসেন বলেন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ রাখা হলেও বিশেষ ক্ষেত্রে মেয়েদের ‘সবোর্ত্তম স্বাথের্ আদালতের নিদেের্শ’ এবং মা-বাবার সম্মতিতে যে কোনো ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ মেয়ের বিয়ে হতে পারবে। আর ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ নারীর বিবাহ মানেই তা বাল্যবিবাহ। বিশেষ ধারার সুযোগ নিয়ে অভিভাবকরা প্রায়ই তাদের ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ মেয়েদের বাল্যবিবাহ দিয়ে থাকেন। তাই এ বিশেষ ধারার কারণে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বাড়ছে। পাথরঘাটা উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ টাস্কফোসর্ কমিটির সভাপতি শাহ মো. কামরুল হুদা বলেন, সম্প্রতি তিন দিনে নয়টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছি। তারপরও বাল্যবিবাহ হচ্ছে। অভিভাবকরা সচেতন না হলে এভাবে প্রতিরোধে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব হবে না।