বিশ্ব বিবেক স্তম্ভিত করা হত্যাযজ্ঞ

প্রকাশ | ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

নন্দিনী ডেস্ক
বাংলাদেশের নারীরা যে দেশপ্রেমিক ছিলেন, রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন তার প্রমাণÑ তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যারা প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি তারা নিজের স্বামী, সন্তান, ভাই, প্রতিবেশীকে উৎসাহিত করেছিলেন শত্রæর মোকাবেলা করতে। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও লাঠিসেঁাটা নিয়ে যুদ্ধে যেতে সন্তানকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিল হাসিমুখে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন বহু নারী অথচ সেই তুলনায় বীরপ্রতীক খেতাব বা বীরের সম্মান তেমনভাবে দেয়া হয়নি অথচ পুরুষরা পেয়েছেন আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বীরের সম্মান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মেয়েরাও অংশ নেন সাহসের সঙ্গে। অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেন তারা। নারীরা সম্ভ্রমহানি হলেও পৌঁছে দেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূণর্ গোপন খবর। পাকিস্তানিদের গতিবিধির খবর জোগাড় করা এসবই ছিল মুক্তিযুদ্ধের অতি গুরুত্বপূণর্ অংশ। এই অতি গুরুত্বপূণর্ অংশটির সিংহভাগ করেছিলেন নারীরা। তারা এই ভূমিকা পালন করেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, চরম নিযার্তনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা নিয়েই। শুধু তাই নয়, কাজ করেন চিকিৎসক হিসেবে, সেবিকা হিসেবে। স্বাধীনতা যুদ্ধে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ ক্ষেত্রে পাকিস্তানিদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন অনেক নারী। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কঁাকন বিবি, তারামন বিবি, শিরিন বানু মিতিল, আশালতা, রওশন আরার মতো অনেক নারী সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এবং তারা বীরাঙ্গনা বেশে অসীম সাহসে পাকিস্তানি হানাদারদের গুলি করে হত্যা করেছেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গোবরা ক্যাম্পে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন অনেক নারী। ভারতে শরণাথীর্ শিবিরে ডাক্তার, নাসর্ এবং স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অসংখ্য নারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শরণাথীের্দর সেবা করেছেন। বিশ্বে যুগে যুগে বহু যুদ্ধ হয়েছে যেমনÑ গৃহযুদ্ধ, স্বাধীনতাযুদ্ধ, বিশ্বযুদ্ধ ইত্যাদি। ভয়ঙ্কর সেসব যুদ্ধের মধ্যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতাযুদ্ধ ইতিহাসের অন্যতম বীভৎস মানবাধিকার হরণ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পাশবিকতা ও নিমর্মতা বিশ্ব বিবেককে স্তম্ভিত করে এখনো। বাঙালিদের দোষ ছিল তারা বাঙালি এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। নিবির্চারে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তারা তৎকালীন সাড়ে সাত কোটি বাঙালির ওপর। দীঘর্ নয় মাসের মরণপণ লড়াইয়ে সশস্ত্র মানুষ্যত্বহীন ববর্র পাকিস্তানি সেনাদের পরাজিত করতে শহীদ হয়েছিলেন ৩০ লাখ বাঙালি, সম্ভ্রম বিসজির্ত হয়েছিল চার লাখ নারীর।