নৈতিক শিক্ষার দায় কী শুধু অভিভাবকের?

প্রকাশ | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

রুমান হাফিজ
ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনা আমাদের আলোড়িত করেছে। পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করা এবং নকল করার অভিযোগে তাকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়। স্কুল কতৃর্পক্ষ তার বাবা-মাকে ডেকে নেয় এবং অরিত্রীর সামনেই তাদের দুজনকে অপমান করা হয় বলেও অভিযোগ এসেছে। মা-বাবা দুজনই সেদিন মেয়ের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলেও সেদিকে কতৃর্পক্ষ কণর্পাত করেনি উল্টো অরিত্রীকে টিসি দেয়ার হুমকি দেয়। এতসব অপমান সইতে না পেরে শান্তিনগরে নিজের বাসায় গলায় ফঁাস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে অরিত্রী। যেসময়টাতে মানুষ রঙিন হতে শেখে, ভুল করতে করতে সঠিক পথ চিনতে পারে, সেটি নবম-দশম শ্রেণি। এই বয়সটা ভুল করার, আবার ভুল থেকে শিক্ষাও নেয়ার। আর সেই শিক্ষাটা দিতে হয় শিক্ষক, অভিভাবকদের। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।’ কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো শিক্ষক-শিক্ষাথীর্র মধ্যকার সম্পকর্ কেমন হবে, কেমন হওয়া উচিত এ নিয়ে সঠিক কোনো বিধি বিধান নেই। যা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। ফলে কখনো শিক্ষক হয়ে উঠছেন প্রতিপক্ষ; কখনো কখনো শিক্ষাথীর্রা হয়ে উঠছে প্রতিপক্ষ। এটি কখনোই কাম্য নয়। শ্রেণি কক্ষে শিক্ষক-শিক্ষাথীর্র মধ্যকার পরিবেশেও রয়েছে জটিলতা। একজন আদশর্ শিক্ষক কখনো তার বিশ্বাস ও মূল্যবোধকে শিক্ষাথীর্র ওপর চাপিয়ে দেন না। শিক্ষাথীের্দর পাঠ্য বিষয়ে মনোযোগ আকষর্ণ করা একজন আদশর্ শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য, তাদের মেরে ও বকা দিয়ে সাময়িকভাবে ভীতি সঞ্চার করা যায় কিন্তু প্রকৃত লক্ষ্য অজর্ন হয় না। জিপিএ-৫ কিংবা ভালো রেজাল্ট করলেই ভালো মানুষ হওয়া যায় না একথা তাদের বুঝাতে হবে। শুধুমাত্র অথর্ উপাজর্ন করা যে সব শিক্ষকের মূল উদ্দেশ্য তাদের শিক্ষক না হয়ে ব্যবসায়ী হওয়া উচিত। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষকের দায়িত্ব এবং মযার্দা আরো ওপরে। তিনি হবেন নিলোর্ভ, উদার ও সহযোগী মনোভাবাসম্পন্ন। তিনি যেমনি শিক্ষাথীের্ক ভালোবাসবেন তেমনি প্রয়োজনে শাসনও করবেন। তাদের আদশর্ হবেন, কখনো প্রতিপক্ষ হবেন না। মনে রাখতে হবে নৈতিক শিক্ষার দায়িত্ব শুধু পরিবারেরই নয়, এ ক্ষেত্রে শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভ‚মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্। আমাদের বতর্মান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা প্রচুর মেধাবী, এ কথা বলার অবকাশ রাখে না। তারা অনেক এগিয়ে, তাদের কাছে আছে উন্নতি প্রযুক্তি, গোটা বিশ্ব তাদের হাতের মুঠোয়। তারা দেশকে নিয়ে, দেশের মানুষকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে, অনেক বড় স্বপ্ন। তারা তাদের জায়গা থেকে কাজ করে, সফল হয়। তখন শিক্ষক, অভিভাবক আমরা সবাই খুশি হই, আহ্লাদিত হই। তারা হেঁাচট খায়, উঠে দঁাড়াতে গিয়ে যখন কাউকে পাশে পায় না তখনই হতাশ হয়। জীবনের মানে শুধু জয় নয়, পরাজয় থেকেও শিক্ষা নেয়া। পিছলে পড়ে থেমে যাওয়া নয়, এখান থেকে উঠে আসা এবং এগিয়ে যাওয়া। হেঁাচট খেতে খেতে সফল হতে হয়। একথাগুলো তাদের বুঝতে দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অভিভাবকের সাবর্ক্ষণিক সহযোগিতা। পাশাপাশি তাদের কোমল চিন্তাচেতনাকে লালন করতে হবে এবং এর বিকাশে ভ‚মিকা রাখতে হবে। দীঘির্দন ধরে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার নানাদিক নিয়ে আলোচনা চলছে। শিক্ষা পদ্ধতির পূণর্তার জন্য শিক্ষার পরিবেশ আরো উন্নত আরো সমৃদ্ধ হওয়া এখন সময়ের দাবি। শিক্ষকরা হবেন শিক্ষাথীের্দর আদশর্, তাদের আচরণ হবে বন্ধুসুলভ, কখনো অসহনশীল কিংবা প্রতিপক্ষ হবেন না। আমরা অরিত্রীকে ফিরিয়ে আনতে পারব না ঠিক। তবে আর যেন কাউকে অরিত্রীর মতো ভুলের মাসুল আরো বড় ভুলের মাধ্যমে দিতে না হয়, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।