বেগম রোকেয়া

নারী ক্ষমতায়নের কিংবদন্তি

প্রকাশ | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনুবাদ: মোহাম্মদ অংকন মূল: পারভেজ বাবুল
নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের কিংবদন্তি বেগম রোকেয়া ৯ ডিসেম্বর, ১৮৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৯ ডিসেম্বর, ১৯৩২ সালে মারা যান। আমরা ডিসেম্বরের ৯ তারিখকে ‘রোকেয়া দিবস’ হিসাবে পালন করে থাকি। বেগম রোকেয়া মাত্র ৫২ বছর জীবনযাপন করেছেন। আমাদের দেশে শিক্ষিত, ক্ষমতায়ন ও আলোকিত নারীদের বেগম রোকেয়ার উদার অবদানকে যে কোনো বয়সের নারীদের মাইলফলক হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। বেগম রোকেয়া রংপুর জেলার পায়রাবন্দের সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবারিক নাম রোকিয়া খাতুন; কিন্তু তিনি বেগম রোকেয়া নামে সুপরিচিত। বেগম রোকেয়ার বড় ভাই কলকাতার সেন্ট জেভিয়াসর্ কলেজে পড়াশোনা করেন; কিন্তু রোকেয়া ও তার বড় বোন করিমুন্নেছাকে স্কুলে পাঠানো হয়নি। তবুও রোকেয়া বাড়িতে তার ভাইদের সাহায্যে বাংলা ও ইংরেজি ভাষা শিখেছিলেন। তার ভাই ও বোন তাকে লেখালেখি করতেও অনুপ্রাণিত করেছিলেন। বেগম রোকেয়া ১৯১৬ সালে ‘আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতীন-ই-ইসলাম’ (একেআই) বা ‘মুসলিম নারী সমাজ’ প্রতিষ্ঠা করেন যাতে নারীরা তাদের অধিকার সম্পকের্ সচেতন হয়। নারীদের শিক্ষা, কমর্সংস্থান, ক্ষমতায়ন, আইন, রাজনৈতিক অধিকার প্রভৃতির জন্য সংগ্রাম করার পক্ষে এই সংগঠনটি পুরোপুরিভাবে নিয়োজিত ছিল। ‘মুসলিম নারী সমাজ’ বিপুলসংখ্যক নারীর শিক্ষার খরচ নিরসন করে এবং অনেক দরিদ্র নারীর জন্য বিয়ের ব্যবস্থা করে। এটি অনাথ, নিঃস্ব নারী এবং বিধবাদের আথির্ক সাহায্যের পাশাপাশি আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করেছে। এটি মহিলাদের জন্য উপাজর্ন এবং আত্মনিভর্রশীল হতে কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। ‘মুসলিম নারী সমাজ’ কলকাতায় মুসলমান নারীদের বিকাশে, রক্ষণশীল জনগণের নেতিবাচক মন্তব্য ও অভিযোগ মোকাবেলায় অবদান রাখে। বেগম রোকেয়া তার উদার চিন্তা, ধমির্নরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি এবং শক্তিশালী লেখনির জন্য স্মরণীয়। তার কিছু লেখার মধ্যে সামাজিক উন্নয়ন প্রচেষ্টার জন্য নারী ও পুরুষের একাত্মতার পক্ষে তার সমথর্ন পাওয়া যায়। তিনি সমসাময়িক রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করেও লিখেছেন। বেগম রোকেয়ার লেখনিতে নারী নিযার্তনের প্রতিবাদ এবং সামাজিক বাধাসমূহ ভেঙে দেয়ার আহŸান জানানো হয়েছে, যা তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের ছিল। তার ‘অবরোধবাসিনী’ বইটি নারীর জীবনকে বাধাগ্রস্ত করে অন্য নারীদের কাছ থেকে দূরে রাখা নারীদের পদার্ প্রথার বিরুদ্ধে চরমভাবে আঘাত করে। বেগম রোকেয়ার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনাবলি হলোÑ ‘মতিচূর’, ‘পদ্মরাগ’, ‘সুলতানা’স ড্রিমস’ (যা পরবতীর্ সময়ে বাংলায় ‘সুলতানার স্বপ্ন’ নামে অনুবাদ করেছিলেন) ইত্যাদি। তিনি কবিতাও লিখেছেন। তার অসংখ্য কবিতা এবং প্রবন্ধ বিভিন্ন জনপ্রিয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয়। বেগম রোকেয়া বিভিন্ন প্রবন্ধে সামাজিক বৈষম্য, পদার্ ব্যবস্থার প্রতিক‚ল প্রভাব, নারীর শিক্ষা, নারীর ওপর নিযার্তন, নারীর অধিকার এবং নারীর জাগরণ নিয়ে লিখেছেন। তিনি বাল্যবিয়ে, বহুবিয়ে ইত্যাদি প্রথার বিরুদ্ধেও লিখেছেন। ১৮৯৮ সালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে রোকেয়ার বিয়ে হয়। সাখাওয়াত হোসেন উদার, প্রগতিশীল ছিলেন এবং তার স্ত্রী রোকেয়াকে বাংলা ও ইংরেজি পড়ার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি দেশ-বিদেশের সাহিত্যকমর্সমূহ পড়তে অনুপ্রাণিত করেন। বেগম রোকেয়া তার স্বামীর অনুপ্রেরণা নিয়ে লিখতে শুরু করলেন। দুভার্গ্যবশত, ৩ মে, ১৯০৯ সালে তার স্বামী মারা যান। বেগম রোকেয়ার দুই মেয়ে ছিল; কিন্তু তারা শৈশবেই মারা যান। বেগম রোকেয়া কখনোই অলস হয়ে থাকতে পারতেন না। সবর্দা নারীর শিক্ষা ও মুক্তির জন্য কাজ করতেন। সেই সময়ে বাংলার মুসলিম নারীরা অনগ্রসর, অবহেলিত ও নিপীড়িত ছিল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে যদি তারা শিক্ষিত হয় এবং অথৈর্নতিকভাবে সচ্ছল হয়ে যায়, তবেই কেবল নারীরা তাদের শেকল থেকে মুক্ত হতে পারবে। তিনি ১ অক্টোবর, ১৯০৯ সালে ভারতবষের্র ভাগলপুরে মাত্র পঁাচজন ছাত্রী নিয়ে মুসলমান মেয়েদের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তার স্বামীর নামে বিদ্যালয়টির নামকরণ করেন ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গালর্স স্কুল’। কিন্তু তারপর তাকে কলকাতায় চলে যেতে হয়।