শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের কল্যাণে নারী পুলিশ

ম হুসনা বেগম
  ২২ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

দেশ ও জনগণের কল্যাণে নারী পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পুলিশ বাহিনীতে ছিল না নারীর অংশগ্রহণ। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে আটজন নারী কনস্টেবল নিয়োগ দেন। তারা কাজ করতেন সাদা পোশাকে। এরপর পুলিশের পোশাকে নারী সদস্যদের নিয়োগ শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। মাত্র ১১ জন নারী সদস্য নিয়োগের মধ্য দিয়ে যে পথচলা শুরু সেখানে আজ পুলিশে নারীর সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ শতাংশ নারী পুলিশের সংখ্যা বেড়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও উজ্জ্বল ভূমিকায় নারী পুলিশ সদস্যরা। পুরুষ সদস্যদের মতোই তারা সমান তালে, সমান চ্যালেঞ্জে এগিয়ে যাচ্ছেন। চ্যালেঞ্জিং পেশা পুলিশে নারীরা অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। মিলেছে স্বীকৃতিও।

জানা যায়, ১৯৮৬ সালে প্রথম সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে ফাতেমা বেগমের যোগদানের মাধ্যমে পুলিশে উচ্চ পর্যায়ে (বিসিএস) নারীদের নিয়োগ শুরু হয়। বর্তমানে পুলিশে উচ্চ পর্যায়ে (বিসিএস) কর্মরত নারীর সংখ্যা মোট বিসিএস কর্মকর্তার দশ শতাংশের বেশি। এতে নারী ও পুরুষের সংখ্যার অনুপাত ১:১০। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএসে আটজন নারী সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে নারীদের প্রবেশাধিকার আরও উন্মুক্ত হয়। নারী পুলিশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, নেতৃত্ব ও দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০০৮ সালে চালু করা হয়েছে 'উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্ক। ২০১২ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে নারী পুলিশের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। ওই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নারী পুলিশের ভূমিকা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন নারী পুলিশ সদস্যরা। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নারী সদস্যরা পথিকৃৎ। এ মিশনে ১ হাজার ৯০০ নারী সদস্যকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। তারা সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন।

পুলিশকে নারীবান্ধব হিসেবে ঘোষণা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপিও। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি-২০১৯ এর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত মোট নারীর সংখ্যা ১৩ হাজার ১৭৭ জন। যা পুলিশের মোট জনবলের শতকার ৬.৯৬৫ শতাংশ। কর্মরত নারী ও পুরুষের সংখ্যার অনুপাত প্রায় ১:১৩। সর্বশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত মোট জনবলের সংখ্যা ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৯ জন। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ১৫ হাজার ২৩৯ জন। যা মোট জনবলের ৮ দশমিক ০২ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় যা বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র মতে, পুলিশে উচ্চ পর্যায়ে অর্থাৎ বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত প্রথম শ্রেণির নারী পুলিশ কর্মকর্তা ২৯৬ জন। এর মধ্যে ডিআইজি (গ্রেড-৩) দুই, অতিরিক্ত ডিআইজি তিন, পুলিশ সুপার ৮০, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১২১ ও সহকারী পুলিশ সুপার ৯০ জন। এছাড়া পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ১১৪, উপ-পরিদর্শক (এসআই) ৮৫৮, সার্জেন্ট ৫৭, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এক হাজার ১৩৩, এএসআই (স্বশস্ত্র) তিন, নায়েক ২৬১ ও নারী কনস্টেবল ১২ হাজার ৫১৭ জন।

২০১৭ সালে ২৮ নারী সার্জেন্ট পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে রাজপথে কাজ শুরু করেন নারী পুলিশ সদস্যরা। বর্তমানে শুধু ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগে কাজ করছেন ১৭৬ নারী সদস্য। এছাড়া সিএমপিতে ২০, আরএমপিতে ছয়, এসএমপিতে ৯, কেএমপিতে আট, বিএমপিতে দুই, আরএমপি ও জিএমপিতে একজন করে নিয়োজিত রয়েছেন।

\হ'উন্নয়নের রোল মডেল' বাংলাদেশে বর্তমানে সব ক্ষেত্রেই বেড়েছে নারীর অংশগ্রহণ। সংখ্যায় কম হলেও পুরুষের সঙ্গে সমান তালে অবদান রাখছেন নারীরা। তবে টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশ বাহিনীতে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ৮ দশমিক ০২ শতাংশ।

পুলিশ বাহিনীতে ক্রমেই বাড়ছে নারীর প্রাধান্য। যোগ্যতা ও সুযোগ অনুযায়ী বড় ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতি ও দায়িত্ব পাচ্ছেন তারা। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিসহ যে জায়গাগুলোতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, সেখানে জেন্ডার ব্যালান্স, জেন্ডার অ্যাওয়ারনেস বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুলিশে নারীর অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোই শুধু না, পুরুষ সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে সহযোগী করে তোলা হচ্ছে। এই পদক্ষেপ দেশের উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে