বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষি খাতে নারীর অবদান

ম সুরভী জাহাঙ্গীর
  ২২ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রায় নারীর অবদান উলেস্নখযোগ্য। কৃষির উন্নয়ন ছাড়া জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। আদি পেশা কৃষির সূচনা হয় নারীর হাত ধরেই। ঘরের কাজের পাশাপাশি তারা কৃষিকাজও করে আসছে বহুকাল থেকে। আগে গ্রামীণ সমাজে পুরুষরাই মাঠে কৃষিকাজ করত এবং নারীরা রান্নাবান্না আর সন্তান লালনপালন নিয়েই ব্যস্ত থাকত। বর্তমানে প্রত্যক্ষভাবে কৃষি কাজে এগিয়ে এসেছে নারীরা। তারা পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদন বিশেষ করে রবিশস্য উৎপাদন, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন, সবজি ও মৎস্যচাষ, বনায়ন এসব কাজে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি সমান অবদান রাখছে।

ফসলের ক্ষেতে ধানের বীজবপন করা থেকে শুরু করে সার দেওয়া, আগাছা দমন, কীটনাশক ছিটানো, ধান কেটে ঘরে তোলাসহ সব কাজই নারীরা করছে স্বাচ্ছন্দ্যে। অনেকেই আবার বাড়ির পাশে কিংবা উঠানে অনাবাদি জায়গায় শাকসবজি, ফলফলাদির আবাদ করে সংসারে বাড়তি রোজগারের পথ করে নিচ্ছে। এতে পরিবারের খরচ মিটানোর পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও তাদের অবদান দিনে দিনে বাড়ছে।

দেশের একটি সমৃদ্ধ খাত চা-শিল্প। এখানে পাহাড়ি নারী চা শ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে চিংড়ি চাষ, হাঁস-মুরগি পালন থেকে শুরু করে আজকে কৃষির প্রায় সব ক্ষেত্রেই নারীর অবদান বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষি সম্প্রসারণ সেবা কার্যক্রমের আওতায় উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে নারীরা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে।

\হদেশের মোট শ্রমশক্তির উলেস্নখযোগ্য একটি অংশ নারী। নারী শ্রমশক্তির মধ্যে ৬৮ শতাংশই কৃষি, বনায়ন ও মৎস্য খাতের সঙ্গে জড়িত। কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে সবচেয়ে নিয়োজিত রয়েছেন কৃষি কাজে। বলা চলে, কৃষি ও এর উপখাতের মূল চালিকাশক্তি নারী। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পরিসংখ্যানে নারীর এ উপস্থিতির হিসাব নেই। এমনকি কৃষিকাজে জড়িত বিপুলসংখ্যক নারী শ্রমিকের কোনো মূল্যায়নও করা হয় না। এখনো গ্রামীণ সমাজে কৃষি ও চাষের কাজকে নারীর প্রতিদিনের কাজের অংশ বলে বিবেচনা করা হয়। সেখানে মজুরি প্রদানের বিষয়টি অবান্তর। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামমাত্র মজুরি দেওয়া হয়।

কৃষিতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কৃষি খাতে নিয়োজিত পুরুষের চেয়ে নারীর অবদান ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ বেশি। দেশে গত এক দশকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বাড়তি শ্রমশক্তির ৫০ লাখই নারী শ্রমিক। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ নারী শ্রমিকের ৭৭ শতাংশই গ্রামীণ নারী। এ সময়ে দেশে কৃষি, বন ও মৎস্য খাত এবং পশু ও হাঁস-মুরগি পালন প্রভৃতি কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিকের সংখ্যা ৩৭ লাখ থেকে বেড়ে প্রায় ৮০ লাখ হয়েছে। এ বৃদ্ধির হার ১১৬ শতাংশ। যদিও এসব নারী শ্রমিকের ৭২ শতাংশই অবৈতনিক পারিবারিক শ্রমিক।

বর্তমানে পেশা বদলের কারণে কৃষি, বন ও মৎস্য খাতে পুরুষ শ্রমিকের অংশগ্রহণ কমেছে ১০ দশমিক চার শতাংশ। ফসলের বপন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ফসল উত্তোলন, বীজ সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এমন কি বিপণন পর্যন্ত বেশির ভাগ কাজ নারী এককভাবেই করে। কৃষি ও এর উপখাতের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে নারী। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পরিসংখ্যানে নারীর এ উপস্থিতি কোনো হিসাবে স্বীকৃতি নেই। এমনকি কৃষিকাজে জড়িত এ বিপুলসংখ্যক নারী শ্রমিকের তেমন কোনো মূল্যায়নও করা হয় না।

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য কৃষিতে নারী শ্রমিকের অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের ৮১ শতাংশ নারী গৃহকর্মে সরাসরি অবদান রাখছে। এদের বিরাট অংশ কৃষানি, কিন্তু শ্রমশক্তির বিবেচনায় তা যথাযথভাবে উঠে আসছে না।

নারী কৃষি শ্রমিকদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করে কৃষক হিসেবে তার প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন তরান্বিত হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে