'আহ! মেয়েটা কী হট, দেখ দেখ কী ফিগার, মাল একখানা বটে' এমন শব্দ বা এর চেয়েও জঘন্য শব্দ শোনেনি, এমন নারী কেউ নেই বোধ করি। প্রতিনিয়ত রাস্তা-ঘাটে অশালীন চাহনি, অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে অশ্রাব্য শব্দ কানে আসে নারীদের। এজন্য বয়সের সীমারেখা লাগে না। কিশোরী থেকে শুরু করে বয়স্কা নারীও এ অবস্থার শিকার হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সময় বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির মানুষের ফোনালাপ ভিডিও বা আলাপচারিতায় যে অশালীন ভাষা ব্যবহার করা হয় তা সত্যি লজ্জিত করে এ সমাজকে। শুধু তাই নয়, যাকে উদ্দেশ করে এ অশালীন ভাষাগুলো ব্যবহার করা হয় তা মুখে আনা বা স্মরণ করাও তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক। আবার শুনেও প্রতিবাদ করতে পারে না ভয়ে। সামাজিক অবস্থান ভেদে নারীর প্রতি এমন শব্দের ব্যবহার কোনো সুস্থ মানসিকতার লক্ষণ নয়। কিন্তু এর প্রতিবাদ হয় না। বরং নীরবে সহ্য করে চলতে হয়। কারণ প্রতিবাদ করলে আরও হেনস্তার শিকার হতে হয়। আইন করে ইভটিজিং বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে সমাজে ইভটিজিং অনেকটা কমেছে। কিন্তু অশালীন ভাষার ব্যবহার করে উত্ত্যক্ত করাও এক ধরনের ইভটিজিং। একজন স্কুলগামী মেয়েকে বা কর্মজীবী নারীকে নোংরা ভাষা দিয়ে কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত করাটা অন্যায়। এমন ইঙ্গিত নারীকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে। সে চলা-ফেরাতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
আবার দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে বা রাস্তাঘাটে চলাচলের পরিস্থিতি পরিবারকে জানালে অনেক সময় বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তারা হয় বলে চুপ করে থাকতে। না হয় বলবে, অন্য মেয়েদের বলে না তাকে কেন বলে। এমন কথার উত্তরে নারীর ঘরে বাইরের চুপ করে থাকা ছাড়া গত্যন্তর নেই। ইদানীং এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে অনেক পরিবার মেয়েদের বোরকা বা হিজাব পরায়। তবে এটা কোন সমাজের জন্য সমাধান হতে পারে না। নারীদের সম্মান ও মর্যাদা দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে সবার আগে। আর এ মানসিকতা গড়তে হলে পরিবার থেকে শিক্ষাটা আসতে হবে। সমস্যা হলো নারীদের প্রতি অশালীন ভাষা বা কটুবাক্য ছুড়ে দেয় সব বয়সের পুরুষ। রাস্তায় বা কর্মক্ষেত্রের নারীটি কারও ঘরের কন্যা, জায়া, জননী তা তারা ভুলে যায়। সুতরাং ঘরের তরুণ ছেলেটিকে নারীর প্রতি সম্মান দিয়ে কথা বলতে শিখানোর আগে নিজেকে শোধরাতে হবে। অফিসের নারীকর্মীটি কোনো সহজলভ্য ভোগ্যপণ্য নয়- এ কথাটা আত্মস্থ করতে হবে। তাহলেই অশালীন ভাষা ব্যবহারে সংযত পারবে পারবে। প্রকৃতপক্ষে আইন করে সব বন্ধ করা যায় না। নারীর প্রতি অকথ্য ভাষার ব্যবহার করতে নৈতিকতা ও মানসিকতার পরিবর্তন অতীব জরুরি। এর পাশাপাশি নারীকে তার নিজেরই প্রতিবাদ করতে হবে। একটা সময় মেয়েরা ইভটিজিংও সহ্য করত। কিন্তু এখন তারা আইনের কঠোরতার কারণে প্রতিবাদ করে। রাস্তায় বা আর কোথাও যে লোকটি মুখের বুলি দিয়ে অসভ্যতামি করছে তাকে উত্তর দিলেই বুঝবে, ভাষায় হলো শিষ্টাচারের প্রথম বহিঃপ্রকাশ। প্রয়োজনে এ ধরনের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অভিযোগ করতে হবে?
পুঁথিগত বিদ্যা আর রাজনৈতিক সামাজিক অবস্থান থাকলেই যে মানুষ ভদ্র শোভন হবে তা কিন্তু নয়। একজন রুচিবান মানুষের প্রথম বহিঃপ্রকাশ হলো তার আচার ব্যবহার। আর ব্যবহার কতটা শালীন তা বোঝা যায় ভাষা ব্যবহারের পরিমিতি বোধ থেকে। তবে আজকাল মিডিয়াতে অনেক
ব্যক্তি হয়তো বা নিজেদের জনপ্রিয় করে তুলতে অশালীন ভাষার ব্যবহার করে কিনা তা কেবল তিনিই বলতে পারেন। তবে রাজনৈতিক, সামাজিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তিকে কথা বলার আগে বুঝতে হবে তার পক্ষে কতটা বলা উচিত বা
\হউচিত নয়। সর্বোপরি একজন নারী সে যে বয়সেরই হোক না কেন, তাকে নিয়ে অশালীন বক্তব্য কোনোভাবেই শোভনীয় নয়।