শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণ রোধ করা যাচ্ছে না

ম অরিত্র দাস
  ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

বাংলাদেশে উন্নয়নের মহাসড়কে দীপ্ত পায়ে হাঁটছে ধর্ষক। ঠিক হাঁটছে না, যেন দৌড়াচ্ছে। কিছুতেই যেন এই দৌড়ের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। একটা সময় বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের প্রকোপ ছিল খুব, সন্ত্রাসবাদ হয়ে উঠেছিল শঙ্কিত জীবনের আরেক নাম। এখন সে জায়গাটি দখল করে নিয়েছে ধর্ষণ অর্থাৎ যৌন সন্ত্রাস। প্রতিদিন গড়ে নারী কিংবা কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে এই দেশে। শিশু ধর্ষণের ফলে শিশুর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জীবনে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কেন এত ধর্ষণ বেড়ে যাচ্ছে? এর একটা কারণ হতে পারে বাংলাদেশে যৌনশিক্ষা সম্পর্কে পাঠ্যবইয়ে বিস্তর আলোচনা নেই, নেই প্রতিটি ধর্ষকের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কঠোর শাস্তি নিশ্চিতকরণ। ফলে বিচারহীনতার কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা অসহনীয় অবস্থায় উপনীত হয়েছে দিনের পর দিন। অন্য একটি কারণ হতে পারে- প্রকৃত শিক্ষাব্যবস্থা, সুশাসন, সুস্থ পরিবেশ, নৈতিকতা ও পারিবারিক শিক্ষার অভাব, নারী ও পুরুষের মেলামেশায় সংকীর্ণতা, নারীর স্বাধীনতায় মধ্যযুগীয় মানসিকতা পোষণ এবং রাজনৈতিক আধিপত্য। একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এসে বাঙালি যেন মানবিক হওয়ার পরিবর্তে পাশবিক হয়ে উঠেছে। আজ বাংলাদেশে বৃদ্ধের কাছে শিশু নিরাপদ নয়, আবার একজন তরুণের কাছে বৃদ্ধাও নিরাপদ নয়।

বাংলাদেশে সরকারি এক হিসাবে বলা হয়েছে, অনলাইনে ৭০ শতাংশের বেশি নারী হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। এমনকি নারীরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে তাদের মত প্রকাশ করতেও পারেন না। কোনো দল বা সংগঠন বা ব্যক্তির মতের বিরুদ্ধে গেলেই যৌন হয়রানিমূলক বাক্য বা শব্দ তেড়ে আসে। এ ছাড়া ধর্ষণের মাধ্যমে জীবননাশের হুমকিও চলে আসে কখনো কখনো। যৌন হয়রানির শিকার নারীর অবস্থা কতটা ভয়ানক, শোচনীয় এবং প্রকট তা গার্মেন্টশিল্পে চোখ রাখলেই বোঝা যায়। দেশে তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত নারীশ্রমিকদের মধ্যে শতকরা ২২.৪ ভাগ কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া শতকরা ৩৫.৩ ভাগ নারীকর্মী বলেছেন, তারা কর্মক্ষেত্রে নারীশ্রমিকের প্রতি যৌন হয়রানির ঘটনা দেখেছেন বা শুনেছেন। অথচ দেশের বৈদেশিক আয়ের ৮০ শতাংশ আসে এই পোশাকশিল্প থেকে এবং এখানে কর্মরতদের মধ্যে শতকরা ৭০ জনই হয় নারী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ ৪২.৩৩ শতাংশ হচ্ছে 'কামনার দৃষ্টিতে তাকানো'। 'সংবেদনশীল অঙ্গে কোনো কিছু নিক্ষেপ করা' যা শতকরা ৩৪.৯২ এবং সংবেদনশীল অঙ্গের প্রতি লোলুপদৃষ্টিতে তাকানো যা শতকরা ৩৩.৮৫ ভাগ। কাজ বোঝানোর বা কথা বলার সময় হাত বা শরীর স্পর্শ করা শতকরা ২৮.৫৭ ভাগ। এ ছাড়া আছে বাজে গালি দেওয়া, চাকরিচু্যতির হুমকি, অশোভন অঙ্গভঙ্গি, পদোন্নতির কথা বলে যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গত ৩১ ডিসেম্বর চার সন্তানের এক জননীকে গণধর্ষণ করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনা মনে করিয়ে দেয় পূর্ণিমা শীল, পারুল কিংবা বগুড়ার সেই মা-মেয়ের কথা। ২০০১ সালের নির্বাচনে বলি হওয়া পূর্ণিমা রানী শীলের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। এখনো কানে বাজে পূর্ণিমা রানীর মায়ের আর্তনাদ, 'বাবারা তোমরা একজন একজন করে আস, আমার মেয়েটা ছোট ও মরে যাবে।' তবে পূর্ণিমা মরেনি, ওই ঘটনায় লজ্জায় মরে গিয়েছিল রাষ্ট্র। ধর্ষণ রোধে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে