তুমি সবল হও, সরব হও দৃঢ় হও আরও

নতুন বছরের প্রাক্কালে সবার প্রত্যাশা থাকবে নারীর জন্য উপযোগী সুন্দর একটি সমাজের, যেখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও গড়বে সোনার বাংলাদেশ। যদিও ২০১৮ সালে খেলাধুলায় নারী এগিয়েছে অনেকখানি। চ্যাম্পিয়নের গৌরবের পাশাপাশি আইটি সেক্টরেও নারীর অবদান ছিল লক্ষ্য করার মতো। এ ছাড়াও অনলাইন কমর্সংস্থানেও নারীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এমনকি আন্তজাির্তক বোয়িং বিমান উড়িয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে নারী। তবু সাফল্যে এই গৌরবগাথায় নারী নিযার্তন যে একেবারে বন্ধ ছিল তা কিন্তু নয়...

প্রকাশ | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

জারিন তাসনিম
আসছে নতুন বছর ২০১৯। ২০১৮-এর কথা হিসাব করলে তা ছিল নারী ও শিশুর জন্য কঠিন একটি সময়। অপহরণ, খুন আর শিশু নিযার্তন এ রীতিমতো সাধারণ একটা দৃশ্য থাকে সব সময়ই বাংলাদেশের জন্য। তাই নতুন বছরের প্রাক্কালে সবার প্রত্যাশা থাকবে নারীর জন্য উপযোগী সুন্দর একটি সমাজের, যেখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও গড়বে সোনার বাংলাদেশ। যদিও ২০১৮ সালে খেলাধুলায় নারী এগিয়েছে অনেকখানি। চ্যাম্পিয়নের গৌরবের পাশাপাশি আইটি সেক্টরেও নারীর অবদান ছিল লক্ষ্য করার মতো। এ ছাড়াও অনলাইন কমর্সংস্থানেও নারীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এমনকি আন্তজাির্তক বোয়িং বিমান উড়িয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে নারী। তবু সাফল্যে এই গৌরবগাথায় নারী নিযার্তন যে একেবারে বন্ধ ছিল তা কিন্তু নয়। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের এখন পযর্ন্ত নারী নিযার্তন ৫ শতাংশে দঁাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি। গত দুই বছরে ৯২ শতাংশ শিশু (১৮ বছরের নিচে) ধষের্ণর শিকার হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, নারী নিযার্তনে জড়িত ৮৬ শতাংশ ব্যক্তির বয়স ৩৫ বছর বা এর কম। আর অভিযুক্ত পুরুষদের ৩৭ শতাংশের বয়স ১৮-২৪ বছর বয়সের। প্রতিবেদনে দেশের সাতটি বিভাগের ৬৬টি থানায় করা ২ হাজার ৩০৭টি মামলায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের মধ্য থেকে দৈব চয়ন পদ্ধতিতে ১৯৮ জনকে বেছে নেয়া একটি জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেন তিনি। জরিপের ফলাফল থেকে দেখা গেছে, নিযার্তনে জড়িত ৮৬ শতাংশ ব্যক্তির বয়স ৩৫ বছর বা এর কম। ২৪ শতাংশ ব্যক্তি ধষর্ণ বা ধষের্ণর চেষ্টা করার দায়ে অভিযুক্ত। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, বেকার বা কমর্ঠ সব শ্রেণির নারী ও শিশু নিযার্তনের সঙ্গে জড়িত। মূলত নারী ও শিশুদের প্রতি প্রচলিত সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সহিংসতা বাড়ছে। নারী সহিংসতা কমাতে হবে। দেশজুড়ে নারী ও শিশুর প্রতি যে অন্যায় করা হচ্ছে তার জন্য যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া পরিবহন হতে শুরু করে সামাজিক বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নারীর জন্য অবশ্যই সুষ্ঠু নগরবান্ধব পরিবেশের সৃষ্টি করতে হবে। তবেই নারীরা পারবে সমাজে যার যার সাফল্যের চ‚ড়ায় পেঁৗছাতে। ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম। ৭৫ শতাংশ তরুণ মনে করেন আগামী ১৫ বছরে দেশ আরও সমৃদ্ধি অজর্ন করবে। আর ৬০ শতাংশের ধারণা, দেশ সঠিক পথেই চলছে। এই তরুণরাই দেশের নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী। এক জরিপ রিপোটের্ এ তথ্য জানা গেছে। ‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ : অ্যান্ড বিয়ন্ড’ শীষর্ক এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ থাকা সত্তে¡ও এ দেশের তরুণরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চান। ব্রিটিশ কাউন্সিল, অ্যাকশন এইড এবং ইউনিভাসিির্ট অব লিবারেল আটর্স বাংলাদেশ (ইউল্যাব) যৌথভাবে এই গবেষণা রিপোটর্ তৈরি করেছে। রিপোটের্ বলা হয়, তরুণদের এই আশাবাদের বিপরীতে উদ্বেগও আছে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুবর্ল অবকাঠামো এবং দুনীির্তকে প্রধান সমস্যা হিসেবে অভিহিত করে এসব বিষয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জরিপে তরুণদের ৫৪ শতাংশ রাজনৈতিক অস্থিরতা, ৪১ শতাংশ দুবর্ল যোগাযোগ ব্যবস্থা, ৩৯ শতাংশ বিদ্যুৎ সংকট, ৩৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি, ৩২ শতাংশ ক্রমবধর্মান দুনীির্ত এবং ৩২ শতাংশ বেকারত্বকে প্রধান সমস্যা হিসেবে অভিহিত করেন। সামাজিক ও রাজনৈতিক এসব সমস্যা থাকা সত্তে¡ও তারা দেশকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখতে চান। তরুণরা দেশের নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ চান। বিভিন্ন গবেষণা রিপোটের্ ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। তরুণরা সামাজিক দ্ব›দ্ব ও সহিংসতার শীষর্ ৫টি কারণ চিহ্নিত করেছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬৯ শতাংশ বেকারত্ব, ৫৪ শতাংশ দারিদ্র্য, ৩০ শতাংশ অধিক অথর্ চাহিদা, ২৯ শতাংশ বন্ধুদের চাপ এবং ২২ শতাংশ রাজনৈতিক বিশ্বাসকে তরুণদের সহিংস ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রিপোটর্ বলছে, সামাজিক দ্ব›দ্ব ও সহিংসতার কারণে অনেক তরুণই আংশিক বেকারত্বের শিকার। তারা যোগ্যতা অনুযায়ী প্রত্যাশিত চাকরি পাচ্ছেন না। গত ১২ মাসে ৬২ শতাংশ তরুণ কোনো আয় করতে পারেননি। শুধু তাই নয়, গবেষণা প্রতিবেদন আরও বলছে, শুধু শিক্ষাই বেকারত্বের সমাধান নয়। প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষাগ্রহণ শেষে চাকরির প্রস্তুতির সময় তরুণরা বুঝতে পারেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় আরও বেশি প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা, প্রশিক্ষিত ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক এবং আরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাবির্কভাবে এ দেশের তরুণ প্রজন্ম স্বপ্ন দেখে একটি গণতান্ত্রিক, সাম্যবাদী ও সবুজ বাংলাদেশের। যেখানে থাকবে পযার্প্ত স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা, সুশাসন, চাকরির নিশ্চয়তা, গণতন্ত্র, পরিবেশ ও সাম্যবাদী অবস্থা। তরুণ প্রজন্মের এসব উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং আকাক্সক্ষা দেশের নীতি-নিধার্রণী বিষয় ও পরিকল্পনা নথিতে অন্তভুির্ক্ত হোকÑ এই গবেষণায় তরুণদের মনোভাবের সেই প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যগুলো মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা নথি, যেমনÑ সপ্তম পঁাচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা (এসএফওয়াইপি) ও বাষির্ক অনুষ্ঠান নথি যেমনÑ বাষির্ক উন্নয়ন অনুষ্ঠানেও অন্তভুর্ক্ত করার মাধ্যমে শুধু রাষ্ট্রের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাই পূরণ হবে না; বরং বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের সঙ্গে সংগতি রেখে এসডিজির বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। গবেষণায় আরও জানা গেছে, ৯৮ শতাংশ যুবক মনে করেন দেশ পরিচালনায় সৎ ও দায়িত্বশীল সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্। আর ৯৬ শতাংশ তরুণ নিরাপত্তার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন এবং কমর্সংস্থানের ওপর সবাির্ধক জোর দিয়েছেন ৯৫ শতাংশ তরুণ। জরিপে ১৬ শতাংশ শহুরে এবং ২৮ শতাংশ গ্রামীণ যুবক বলেছেন, পরিবেশের পরিবতের্নর কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই নতুন বছরে নতুন প্রজন্মের সব নারীরই প্রত্যাশা থাকবে সহায়ক একটি পরিবেশ পাওয়ার, যাতে করে সব বাধা পেরিয়ে তারা উন্নতির শিখরে উঠতে পারে। আর সরকারেরও উচিত এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার যাতে করে নারীরা পায় তাদের উপযোগী নারীবান্ধব নগর।