মহাকাশে বাঙালি নারী ড. সুনিতা

প্রকাশ | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

আফশিন তিরানা
বোস-আইনস্টাইন তত্ত¡ মেনে পরমাণু বিদীণর্ হলে কতটা বিপুল পরিমাণ শক্তির উৎপত্তি হয় তা আমাদের অনেকের জানা। কিন্তু অত্যাধিক কম তাপমাত্রায় কোয়ান্টাম কণার গতিবিধির কি পরিবতর্ন হয় সেটারই গবেষণা চলছে ‘কোল্ড অ্যাটম ল্যাবরেটরি’তে। আর এই ল্যাবরেটরির প্রজেক্ট ম্যানেজারের দ্বায়িত্বে আছেন ড. অনিতা সেনগুপ্ত। ২০১২ থেকে ২০১৭ পযর্ন্ত তার নেতৃত্বেই এগিয়ে গেছে ‘লেসার কুলিং কোয়ান্টাম ফিজিক্সে’র বাস্তবতা যাচাইয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এই বাঙালি নারীর হাত ধরেই উন্মোচিত হতে চলেছে মহাকাশ বিজ্ঞানের এক অসীম রহস্য। ড. সুনিতা প্রথমে ‘রকেট সায়েন্টিস্ট’ হিসেবে গবেষণা শুরু করেছিলেন ‘ বোয়িং স্পেস অ্যান্ড কমিউনিকেশন’ সেন্টারে। নিজের দক্ষতার ছাপ রেখেছিলেন মঙ্গল গ্রহ, অ্যাস্টরয়েড বা গভীর মহাশূন্য নিয়ে গবেষণায়। এরপরেই ডাক আসে নাসা থেকে। এক সময় নাসার জেট প্রপেলেশন ল্যাবরেটরির অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। সেখান থেকেই ‘লেসার কুলিং কোয়ান্টাম ফিজিক্স’ নিয়ে গবেষণার কথা মাথায় আসে তার। এমনকি নাসার মঙ্গলযান ‘কিউরিসিটি রোভারের’ও সুপারসনিক প্যারাসুট ল্যান্ডিংয়ের আসল রূপকার ছিলেন তিনিই। বলাবাহুল্য, অত্যাধিক কম তাপমাত্রায় কোয়ান্টাম কণার গতিবিধির কি পরিবতর্ন হয় সেটারই গবেষণা গভীরভাবে যদিও চলছে কিন্তু পৃথিবীতে এই তাপমাত্রা সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। সে জন্য সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষাই চলবে পৃথিবী থেকে চারশো কিলোমিটার ওপরে অবস্থিত আন্তজাির্তক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস)। এই সমস্ত কমর্কাÐের পরিকল্পনা ড. অনিতা সেনগুপ্তরই মস্তিষ্ক প্রসূত। তিনি জানান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে মহাশূন্যের তাপমাত্রার চেয়েও ১০ বিলিয়ন গুণ কম তাপমাত্রার সৃষ্টি করা হবে আইএসএস-এ। সেখানে পদাথের্র পরমাণুগুলোর অবস্থাটা হবে কোয়ান্টাম অবস্থার মতো। এক সঙ্গে অনেকটা জায়গা জুড়ে যেমন তরঙ্গ বা ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে তেমনি একটা ‘কোয়ান্টাম কণা’ তেমনই একই সঙ্গে, একই সময়ে অনেক জায়গায় বা অবস্থায় থাকতে পারে। শুধু ধরাছেঁায়ার জন্য তৈরি করা প্রয়োজন ‘কোয়ান্টাম গ্যাস’। মাধ্যাকষর্ণ বলের কারণে বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট অবস্থা নিয়ে পৃথিবীতে পরীক্ষা করা খুব মুশকিল। এই কারণে আমাদের এই গ্রহে যে জায়গায় পদাথের্র ওই অবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে, সেখানে চোখের পলক পড়তে না পড়তেই ওই অবস্থায় থাকা পরমাণুগুলো স্থির হয়ে যাবে। এক কথায় গবেষণা চালানোই অসম্ভব। কিন্তু মহাকাশে, যেখানে অভিকষর্ বল শূন্য (মাইক্রো-গ্র্যাভিটি), সেখানে পদাথের্র ওই বিশেষ অবস্থায় বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেটকে নিয়ে অনেক বেশি সময় ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। অনিতা এই বিষয়ে আরও জানান, এটা সত্যি সত্যিই একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কারণ, মহাকাশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করার আগে আমরা দেখতে চেয়েছিলাম আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহেও কৃত্রিমভাবে ওই বিশেষ দুটি মৌলিক গ্যাসের (পটাসিয়াম ও রুবিডিয়াম) ‘কোয়ান্টাম অবস্থায় পেঁৗছানো যায় কিনা। একপযাের্য় জানা গেছে, জোরালো মাধ্যাকষর্ণ বল থাকা সত্তে¡ও পৃথিবীতে এটা সম্ভব হয়েছে। তার বিশ্বাস, পৃথিবীতে এটা সম্ভব হলে মহাকাশে এই পরীক্ষাটি করা আরও সহজ হবে।