জহিরন বেওয়া

সাইকেল চালিয়ে স্বাস্থ্যসেবায় অবদান

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

সাবিনা আঞ্জুম
জহিরন বেওয়া। গ্রাম এলাকায় বাংলার নানি বলেই সবার কাছে পরিচিত। একেবারেই সাদা মনের মানুষ। দীঘর্ ৪৫ বছর সাইকেল চালিয়ে গ্রামের দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় অবদান রাখছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের ভারত সীমান্তঘেঁষা তালুকদুলালী গ্রামের আশি বছরের এ বৃদ্ধা। কোনো পুরস্কারের আশায় বা নাম অজের্নর জন্য নয়। গ্রাম বাংলার মানুষকে ভালোবেসে দীঘর্ ৪৫ বছর ধরে একটি পুরনো ভাঙা সাইকেল নিয়েই গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটছেন জহিরন বেওয়া। অসুস্থ দরিদ্র মানুষজনকে স্বাস্থ্যসেবা পেঁৗছে দেয়াই হলো তার নেশা ও পেশা। গ্রাম বাংলায় তিনি এখন গরিবের ডাক্তার। লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের তালুকদুলালী গ্রামের মানবপ্রেমী এই বৃদ্ধা প্রতিদিন ঝড়-বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে খুব সকালেই বাড়ি থেকে বের হন। গ্রামের মেঠোপথ ধরে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে তিনি স্বাস্থ্যের খেঁাজ-খবর নেন বাড়ির লোকজনের। অসুখ বিবেচনায় দেয় ওষুধ। এতে গৃহস্থ খুশি হয়ে যা দেয় তাতেই চলে তার সংসার। বিশেষ করে গ্রামীণ নারীর কাছে জহিরন খুব কাছের কেউ। জ্বর, সদির্, কাশি, ডায়রিয়া, আমাশয়সহ শিশু ও নারীদের নানারকম রোগের চিকিৎসার ওষুধ দেন তিনি। তার কাছে চিকিৎসা নেয়া হাজীগঞ্জ এলাকার আনোয়ারা বেগম, শেফালী রানী ও সামছুল হক জানান, তিনি এলাকার প্রতিটি বাড়িতে খেঁাজ-খবর নেন। কারও অসুখ হলে ওষুধের ব্যবস্থা করেন। টাকা-পয়সার কোনো চাহিদা নেই তার। ১৯৭৩ সালে জহিরন পরিবার ও পরিকল্পনা বিষয়ে ছয় মাসের ধাত্রী প্রশিক্ষণ নিয়েই নেমে পড়েন গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায়। এর পর বিভিন্ন সময় গ্রাম্য হেলথ ভিজিটরদের সঙ্গে কাজ করে অভিজ্ঞতা অজর্ন করেন জহিরন। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে পরিবার ও পরিকল্পনা বিষয়ে সাহায্য করেন জহিরন । পিতৃভ‚মি টাঙ্গাইল জেলার এই নারীর স্বামী সৈয়দ আলী অসুস্থ হয়ে মারা যান দেশ স্বাধীনের ছয় বছর আগে। দুই ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে তিনি বসবাস করেন স্বামীর ভিটা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তঘেঁষা লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেরাবাড়ী ইউনিয়নের তালুকদুলালী গ্রামে। এ ব্যাপারে কথা হলে জহিরন বেওয়া জানান, কোনো মানুষ যেন অসুখে পড়ে বিনা চিকিৎসায় মারা না যানÑ এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। জীবনের শেষ দিন পযর্ন্ত গ্রামের মানুষের চিকিৎসাসেবা প্রদান করার দৃঢ় প্রত্যয় সংগ্রামী এ নারীর। আদিতমারী উপজেলা পরিবার-পরিকল্পনা কমর্কতার্ মো. গোলাম নবী চৌধুরী তার এই মহৎ কাজের প্রশংসা করেন এবং সে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় বেশ ভ‚মিকা রাখছেন। তা ছাড়া তিনি নিয়মিত পরিবার-পরিকল্পনা অফিসে যোগাযোগ রাখেন।