কৃষি ও নারী

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

তানিয়া তন্বী
পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে নারীর সম্পকর্ অতি নিবিড়। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় উদ্যান, কৃষির সূত্রপাত নারীর হাতেই। পরবতীর্ সময়ে বাণিজ্যিক, কৃষি বা বৃহৎ ক্ষেতের চাষবাসের মূল পরিচালনা চলে যায় পুরুষের হাতে। সেখানেও অবশ্য কৃষানি শ্রম দিয়েছে মাঠে, কিন্তু কৃষির মূল কতৃর্ত্ব তার ছিল না। তবে কৃষির সেই সূচনালগ্ন থেকে এখনো নারী তার ঘরের আঙ্গিনায়, রান্না ঘরের দাওয়ায়, ভিটাবাড়ি সংলগ্ন ছোট্ট ক্ষেতে লাগায় বেগুন, টমেটো, মরিচ, লেবু, ঝিঙে, পটোল, ঢেঁড়সের মতো সবজি। ঘরের চালে আর মাচায় লাউ, কুমড়ো, শসা, পুঁইশাক, করলা, শিমের লতা দেখা দেয় নারীর কল্যাণেই। বিভিন্ন রকম শাক তো নারীর হাতের ছেঁায়াতেই বেড়ে ওঠে। এগুলো পরিবারে কিছুটা হলেও স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসে, পুষ্টির চাহিদা মেটায়। অন্তত শাকসবজি গ্রামে কিনে খেতে হয় না কোনো পরিবারেই। আবহমানকাল থেকে কৃষিকাজের মধ্যে বীজ সংরক্ষণ, ধান মাড়াইসহ অনেক কাজেই রয়েছে নারীর একচেটিয়া প্রাধান্য। কৃষক বলতে যদিও সাধারণভাবে একজন পুরুষের ছবিই চোখে ভাসে কিন্তু কৃষির বিভিন্ন পযাের্য়র কাজের মধ্যে অনেক কাজই সম্পন্ন হয় নারীর হাতে। বতর্মান যুগে কৃষি ও সামাজিক বনায়নেও নারী গুরুত্বপূণর্ ভূমিকা পালন করছে। খাসজমি, বেড়িবঁাধ, জমির আইল, পতিত জমি ইত্যাদি স্থানে সামাজিক বনায়ন ও কৃষি এখন পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূণর্ হাতিয়ার হয়ে উঠছে। এসব কাজে নারীর অংশগ্রহণ ক্রমেই বাড়ছে। যেখানে শাকসবজি লাগানোর মতো এক ফালি জমিও নেই কিংবা যেখানে জলাবদ্ধতা, বন্যা ইত্যাদি দুযোর্গ লেগেই আছে সেসব জায়গায় নারীর জন্য সবচেয়ে উপযোগী কৃষি ব্যবস্থা হলো বস্তায় সবজি চাষ। শহরে যে নারীরা থাকেন তারা ঘরের বারান্দা, ছাদে বা উঠানে টবে বা বস্তায় সবজি চাষ করতে পারেন। শহরে ছোট ছোট নাসাির্রর মাধ্যমে শৌখিন গাছের চাহিদা মেটানো সম্ভব। সেই সঙ্গে পাওয়া যায় বাড়তি সচ্ছলতা। আবার অল্প জায়গায় দামি অকির্ড বা বিদেশি ফুলের চারা বা কলম উৎপন্ন করে একজন নারী নিজের আয় রোজগারের পথ করে নিতে পারেন। আজকাল ছোট ছোট পটে মানিপ্ল্যান্ট, পাতাবাহার, মনির্ংগেøারি, বিভিন্ন রকম অকিের্ডর বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। একটি ছোট বারান্দার গ্রিলে এমন অনেক পট রাখা সম্ভব। এসব পটে লাগানো গাছ বিক্রি করে একজন গৃহবধূ বাড়তি রোজগারের পথ করে নিতে পারেন। সরকারি যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সহজেই এ ধরনের স্বল্প পরিসরে কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা সম্ভব। বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাও নারীদের এমন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। বষার্ মৌসুমে গাছগাছালি লাগানোর জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক সময়। বাড়িতে যদি কয়েকটি ব্যালকনি বা ছোট বারান্দা থাকে তাহলে শোবার ঘরের বারান্দায় ফুলগাছ আর রান্নাঘরের বারান্দায় শাকসবজির গাছ লাগানো যেতে পারে অনায়াসে।