আলোর পথের সন্ধান

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মাসুদ খান
যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের বারবাকপুর গ্রামের কৃষি পরিবারের গৃহিণীদের নিয়ে গঠিত একটি সমিতি। নাম বারবাকপুর মহিলা সিআইজি (ফসল সমবায়) সমিতি লিমিটেড। এই সমিতির বদলে এরা এখন সবাই গৃহিণীর পাশাপাশি কৃষানি। সমিতিটি ২০০৯-১০ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ন্যাশনাল এগ্রিকালচার প্রজেক্টের (এনএটিপি) মাধ্যমে শুরু হলেও ২০১৪ সালের ৩১ জানুয়ারি সমিতিটি সমবায় বিভাগ থেকে নিবন্ধন লাভ করে। ২০ জন মহিলা সদস্য রয়েছেন সমিতিতে। সমিতির সভাপতি ইয়াসমিন আরা সবুরা, সাধারণ সম্পাদক মমতাজ বেগম। প্রতি মাসে তারা ১০০ টাকা সঞ্চয় হিসেবে সমিতিতে জমা করেন। সমিতির বতর্মান মোট সঞ্চয় টাকার পরিমাণ লক্ষাধিক। এ টাকা থেকে তারা নিজেদের মধ্যে ঋণ সুবিধাও গ্রহণ করেন। সিআইজির এই সমিতিই মহিলাদের জীবনধারায় এনেছে পরিবতর্ন। এরা সবাই বিষমুক্ত (নিরাপদ) সবজি উৎপাদন করে খায় এবং বাজারজাত করে। সমিতিতে সঞ্চয় দিতে হয় মাসের শেষ বুধবারে। সেখানে বসে তারা স্বপ্ন বুননের যাবতীয় পরামশর্, দিকনিদের্শনা, চাষাবাদ, সংসারের পাশাপাশি হাতের কাজও করেন রীতিমতো। ফলে এই ২০ নারীর অবসর, আড্ডার মধ্যেও চলে সুই-সুতার মাধ্যমে আয় রোজগার। নিজেদের পাশাপাশি সমিতিতে দিনে নিয়মিত বসেন ওই বøকের উপ-সহকারী কৃষি কমর্কতার্ আইয়ুব হোসেন। বিশেষ করে তার উৎসাহ, উদ্দীপনা, পরামশের্ সমিতির এই নারী সদস্যরা সবাই মডেল কৃষানি। এদের সবার বাড়িতে বেড পদ্ধতিতে বিষমুক্ত (নিরাপদ) লালশাক, সবুজশাক, গাজর, বেগুন, টমেটো, ধনেপাতা, পালংশাক, পেঁয়াজ, রসুন, কলমিশাক, মাচা করে লাউ, শিম, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, করলা, পুঁইশাকসহ যাবতীয় সবজি মৌসুম ভেদে উৎপন্ন করে থাকেন। প্রত্যেকের বাড়িতে কেঁচো কম্পোস্ট (ভামির্ কম্পোস্ট) সার ও চালা কম্পোস্ট সার তৈরি হয়। সমিতির সব সদস্য সবজিতে কোনো রকম রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। তারা সবাই সবজিতে সেক্স ফেরেমন ফঁাদ, বদৌ মিকচার, বালাইনাশক হিসেবে কীটনাশকের পরিবতের্ মেহগনির তেল, খৈল, ভাটির পাতা, তুলসীপাতা, নিমের পাতা, ঢোলকলমি, বাসকের পাতা, নিম ও পাটের বীজ ইত্যাদি জৈব ভেষজের নিযার্স থেকে রোগবালাই প্রতিষেধক নিজেরা তৈরি করে ফসলে প্রয়োগ করেন। সমিতির সহসভাপতি নাজমা বেগম জানান, তারা বাজারের কোনো সবজি কিনে খান না। বাড়িতে সব ধরনের সবজি রয়েছে। বরং এ বছর বাড়িতে মিষ্টি আলু লাগিয়ে তা বিক্রি করেছেন ১১ হাজার টাকার। সমিতির সদস্যেদের এসব কমর্কাÐে পাশ্বর্বতীর্রাও অনুপ্রাণিত হচ্ছে। সমিতির বধির্ত সদস্য হোসনে আরা জানান, সে বাড়িতে সব ধরনের সবজির পাশাপাশি মিষ্টি আলু চাষ করে থাকেন। গেল মৌসুমে হোসনে আরা এক লাখ টাকার মিষ্টি আলুর লতা বিক্রি করেছেন। এ টাকা দিয়ে তার সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতার সুবাতাস। শুধু এরা দুজন নয়, সমিতির সব সদস্য সমিতির নৌকায় চড়ে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন বুনছেন। এখানকার সদস্যরা সঞ্চয়, বিষমুক্ত সবজি (নিরাপদ সবজি) উৎপাদনের পাশাপাশি হঁাস-মুরগি, গবাদিপশু পালনও করেন। তিনি আরও জানান, প্রত্যেকের বাড়িতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সজিনার চাষও হচ্ছে।