ভাষাসৈনিক হালিমা খাতুন

লহ শ্রদ্ধা হে বীর

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

নন্দিনী ডেস্ক
বাঙালি কবি রামনিধি গুপ্ত মাতৃভাষার প্রতি হৃদয়ের অকৃত্রিম ভালোবাসার আকুতি করে লিখেছেন ‘বিনা স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা?’ মা ও মাতৃভাষার সঙ্গে মানুষের নাড়ির টান ও অবিচ্ছেদ্য সম্পকর্ বিদ্যমান। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রæয়ারিতে ভাষার মযার্দা রক্ষাথের্ ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছিল হাজার হাজার বাঙালি। নারী-পুরুষ নিবিের্শষে সব এক হয়ে ছিনিয়ে এনেছে এই বাংলাকে। সেই সংগ্রামের সঙ্গে যুদ্ধ থাকা একজন হলেন আমাদের ভাষাসৈনিক হালিমা খাতুন। ১৯৩৩ সালে খুলনা জেলার বাগেরহাটে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। স্কুল জীবন থেকেই তার মনে এক ধরনের স্বাধিকার বোধ কাজ করত। কলেজ জীবনেই রাজনৈতিক বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকায় দেশজুড়ে ভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতির কথা জানতে পারেন। তখনই সিদ্ধান্ত নেন ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হবেন। ২১ বছর বয়সে ১৯৫১ সালে হালিমা খাতুন ভতির্ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন তিনি ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী। পুরো সব বিভাগ মিলে সবের্মাট ৪০-৫০ জন ছাত্রী ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখনকার ‘উইম্যান স্টুডেন্ট রেসিডেন্টসটি এখন রোকেয়া হল নামে পরিচিত। এই হলে সবের্মাট ৩০ জন ছাত্রী থাকত, তাদের একজন হালিমা খাতুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রোকেয়া খাতুন ও সুফিয়া খানের সঙ্গে হালিমা খাতুন ‘হুইসপারিং ক্যাম্পেইন’-এ যোগ দেন। তাদের প্রধান কাজ ছিল ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ছিল অনেক নিয়ম-কানুন। ছাত্রীদের ক্ষেত্রে আরও কড়া নিয়ম। সব সময় কড়া নজরে থাকতে হতো ছাত্রীদের। ৫২-র সেই রক্তাক্ত দিনে সবাই আমতলায় সমবেত হন। ছাত্রীদের দায়িত্ব থাকে বিভিন্ন স্কুল ও বাংলাবাজার গালর্স স্কুলের ছাত্রীদের আমতলায় নিয়ে আসার দায়িত্ব পড়ে হালিমা খাতুনের ওপর। ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে বক্তব্য দেয়ার পর পরই ¯েøাগানে ¯েøাগানে ক্যাম্পাস প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ ¯েøাগান চার পাশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪৪ ধারা ভেঙে প্রথম বের হয় মেয়েদের দল। তার সদস্য থাকে ৪ জন। জুলেখা, নূবী, সঙ্গে হালিমা খাতুনও ছিলেন। একে একে বন্দুকের নলের সামনে দিয়ে মেয়েদের ৩টি দল বেরিয়ে আসে। শুরু হয় লাঠিপেটা ও কঁাদানে গ্যাস ছোড়া। সবাই ছুটছে যে যার মতো। তবে সবার লক্ষ্য জগন্নাথ হলের অ্যাসেম্বলির দিকে। হালিমা খাতুনসহ অনেক ভাষাসৈনিক আশ্রয় নেয় মেডিকেলে। রাস্তায় শহীদের তাজা রক্ত। আহতদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য সবাই ছুটছে। রক্তে ভেজা রাস্তার মধ্যে মানুষের মাথার মগজ ছিটিয়ে পড়া। ছাত্ররা ওই মাথার খুলির ছবি ধারণ করে, পরে সেই ছবিটি রাখা হয় ছেলেদের হলে। হলের রুমের দরজা বন্ধ। সেই বন্ধ রুম থেকে ছবিটি আনার দায়িত্ব পড়ে এই ভাষাসৈনিকের ওপর। অন্ধকার রাতে রাবেয়া ও হালিমা গিয়ে জীবনকে বাজি রেখে পুলিশের সামনে দিয়ে যায়। ছবিটি নিয়ে আসে বুকের ভেতর করে। সেই দিন পুলিশের হাতে ধরা পড়লেই মৃত্যু ছিল যাদের কপালে তারা মৃত্যুকে ভয় করেনি। দেশের জন্য মাতৃভাষার জন্য তারা জীবন বাজি রেখেছে ছবিটি আনার পর পরের দিন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সেই মগজ ছিটানো খুলির ছবি ছাপানো হয়। আজও আমরা ফেব্রæয়ারি মাসে বিভিন্ন পত্রিকায় সেই ছবিটি দেখতে পাই। বতর্মানে কেমন আছেন আমাদের সেই নারী। হ্যঁা তিনি ভালো নেই বয়স হয়েছে তার ওপর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তিনি। তবুও লিখে যাচ্ছেন ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা। ১৯৯৯ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। অস্ত্রোপচার হলে মোটামুটি সুস্থও হন। অতি সম্প্রতি তিনি আবারো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভতির্ হন। কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর বিভাগের অধ্যাপনা করতেন তিনি। ১৯৯৭ সালে অবসরে যান। হালিমা খাতুন জীবনের অনেকটুকু সময় কাটিয়েছেন ইন্দিরা রোডের বাসায়।