নারী শিক্ষার গুরুত্ব

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

তাসমিয়া জাহান
দিন বদলের পালায় আজ অনেক নারীর মধ্যেই চেতনা জাগ্রত হয়েছে যে পড়াশোনা শিখতে হবে। কিন্তু জীবনের বিভিন্ন পযাের্য় পারিবারিক ও সামাজিক নানা বাধার সম্মুখীন হতে হতে সে চেতনা ক্রমেই ধূলিসাৎ হয়ে যায়। আর এভাবেই শিক্ষার আলো থেকে ছিটকে পড়ে অনেক কন্যাশিশু, যারা কিনা পরে হতে পারত আলোকিত নারী। এখনো অনেক নারী আছেন যারা শিক্ষার গুরুত্ব জানলেও পযার্প্ত সুবিধা পাচ্ছেন না যে কারণে তাদের সম্মুখীন সামাজিক নানা জটিলতার। যে কোনো সমস্যায় নিজের অধিকার আদায়েও তারা পিছপা। কেননা তারা জানেন না আইন কী? কী করে আইনের সাহায্য নিতে হয়? আজকাল অনেক নারীই জানেন না কোথায় গিয়ে মামলা করতে হবে। মামলা করতে কত টাকা লাগে। এ জন্য প্রচারণা অনেক বেশি জরুরি। এ ছাড়া সবার আগে প্রয়োজন নারীর শিক্ষিত হওয়া। শিক্ষিত হলেই নারী তার অধিকার সম্পকের্ সচেতন হবেন। সচেতন না হলে তাদের ওপর নিযার্তনের মাত্রা বাড়তেই থাকবে। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পযাের্য় নারীর শিক্ষা পরিস্থিতির উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন, সব শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের জন্য খাদ্য কমর্সূচি রয়েছে। পৌরসভার বাইরে বিনাবেতনে দশম শ্রেণি পযর্ন্ত ছাত্রীদের শিক্ষার সুযোগ আর মহানগরের বাইরে মাধ্যমিক পযাের্য় ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তির সুযোগ রয়েছে। মাধ্যমিক পযাের্য় বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হচ্ছে। তারপরও দেখা যায়, প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে ছেলেশিশু ও মেয়েশিশুর সংখ্যা ভতির্র সময় সমান হলেও মেয়েশিশুদের মধ্যে ড্রপআউট বা ঝরে পড়ার সংখ্যা বেশি। ৩৩ শতাংশ মেয়েশিশু প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই ঝরে পড়ে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পযর্ন্ত ছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার ১৭.৭২ এবং মাধ্যমিক ৪৫.৮০ ভাগ। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতকোত্তর পযাের্য় মেয়েদের ভতির্র হার এখনো পুরুষের তুলনায় কম। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষায় নারীদের ভতির্র হার অনেক কম। কৃষি ও প্রকৌশল শিক্ষায় মেয়েদের সংখ্যা মাত্র ৯ শতাংশ। ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে, যা অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এই উপবৃত্তির বিভিন্ন শতর্ মানা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রী উপবৃত্তির ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ। উপস্থিতি, ৪৫ শতাংশ নম্বর প্রাপ্তি, অবিবাহিতা থাকা ইত্যাদি আবশ্যিক পূবর্শতর্ মানা হয় না বলে অনেক অভিযোগ রয়েছে। ফলে আথির্ক সুবিধার জন্য ছাত্রী ভতির্র হার বৃদ্ধি পেলেও তারা মানসম্মত শিক্ষা অজর্ন করতে সক্ষম হচ্ছে না। অবশ্য এ জন্য, শিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত নারীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে জাতীয় নারী প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন একাডেমি পুনগর্ঠন এবং প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন করা হয়েছে। বেগম রোকেয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বেগম শহীদ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা প্রশিক্ষণ একাডেমি এবং মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। বয়স্ক নারী শিক্ষা কাযর্ক্রমও চালু করা হয়েছে। সরকারি পযাের্য় আরও অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নারী শিক্ষা পরিস্থিতির উন্নয়নে বেসরকারি পযাের্য়ও রয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। রয়েছে মেয়েদের জন্য বিভিন্ন সংস্থার বিশেষ বৃত্তি, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, আয়মূলক প্রশিক্ষণের সঙ্গে শিক্ষা, নারীদের জন্য বিশেষ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ। আর সব উদ্যোগই সফল হবে যদি নারীরা সুশিক্ষিত হয় এবং নিজেদের আত্মমযার্দা সম্পকের্ সজাগ হয়। প্রত্যেক নারীকেই এই বোধই জাগ্রত করতে হবেÑ শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।