একুশের মিছিলে নারী

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মনিরা মিতা
"বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।" কবি নজরুলের মহান এই বাণী যুগে যুগে স্মরণ করিয়ে দেয় শুধু পুরুষ নয়, পৃথিবীর সব বড় কাজে নারীরাও সমান অংশীদার। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলার নারীরাও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। পুরুষের পাশাপাশি বীর যোদ্ধাদের মতো এ দেশের নারীরাও যোগ দিয়েছিল ভাষা আন্দোলনে। ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় চেতনার ধারক ও বাহক। ২১ ফেব্রম্নয়ারি, ১৯৫২, ওই দিন পাকিস্তানি শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশের আপামর জনতা নেমে এসছিল রাজপথে। রাজপথের সে মিছিলে সেদিন নারীরাও ছিল সমানভাবে পুরুষের পাশাপাশি পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে নারীরাই প্রথম এগিয়ে চলে ওই দিন। বেরিকেড ভাঙ্গায় পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে, আহত হন হালিমা সুফিয়া খাতুন ইব্রাহীম, সারা তৈফুর, রওশন আরাসহ আরও অনেকে। ২১ শের মিছিলে যোগ দেন বিভিন্ন স্কুলের অসংখ্যা ছাত্রী। প্রাণের মায়া ত্যাগ করে তারা আওয়াজ তোলে "রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই, বাংলা চাই।" পুলিশের লাঠিপেটায় সেদিন রাজপথ রক্তেরঞ্জিত হয়েছিল। বর্তমান শহীদ মিনারের স্থানটি রক্তে ভেসে গিয়েছিল। সেদিনের রক্তে লেখা হয়নি কোনটা ভাই আর কোনটা বোনের রক্ত। তাই আব্দুল গফ্‌ফার চৌধুরীর "আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি" গানটি শুধু ভাইদের উদ্দেশেই নয়, বোনদের জন্যও গাওয়া হয়। ভাষা আন্দলনে কারাবন্দি হন মমতাজ বেগম যিনি। কারগার থেকে বন্ড সই করে মুক্তিলাভে অস্বীকৃতি জানানোয় তার স্বামী তাকে তালাক দেন। ভেঙে যায় মমতাজ বেগমের সোনার সংসার। খুলনার স্কুলেছাত্রী হালিমা খাতুন নারীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রচেষ্টায় লাঞ্ছিত হন সেদিন। সিলেটের ছাত্রী সালেহা স্কুলে কালো পতাকা উত্তোলন করেন তাই তাকে তিন বছরের জন্য স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়। নাদেয়া বেগমকে রাজবন্দি করে চালান হয় কঠোর নির্যাতন ও নিপীড়ন। ইতিহাস সাক্ষী আছে, ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন নারীরা কত তৎপর ছিলেন। তাদের রক্তেও ভিঁজে গিয়েছিল রাজপথ। আজও আরও ভাষা আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা সেভাবে উঠে আসেনি। নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হয়। সঠিক ইতিহাস। নারীকে দিতে হবে তার প্রাপ্ত সম্মান। ইতিহাসের আড়ালে লুকিয়ে থাকা নারী ভাষা সৈনিকদের আনতে হবে মুক্ত আলোয়।