হতে হবে কর্মদক্ষ থাকতে হবে কর্মপরিকল্পনা

একটি নারী যখন কর্পোরেট সেক্টরে কাজ করে তখন কিন্তু সে কেবল ওই সেক্টরেই নয়, বরং গেস্নাবালি অনবদ্য ভূমিকা পালন করছে। ছেলে বা মেয়ের সমান অধিকারের বিষয়টিতে যেতে চাচ্ছি না। সে কিন্তু একটি ছেলেকেও সমানভাবে অনুপ্রাণিত করতে পারছে -সুলতানা শিকদার অহনা

প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

হাবীবা তাসনিম
বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে অনেক সেক্টরেই নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারও মেয়েদের কাজ করতে উৎসাহিত করছে। এখন যে হারে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়ছে সব সেক্টরে তাতে এ সংখ্যা ৩৮ শতাংশ থেকে ৮২ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে আগামী কয়েক বছরে। মেয়েদের এই অংশগ্রহণ আমাদের জিডিপিতে ১/৮ শতাংশ বাড়তে সাহায্য করবে। বাংলাদেশে ছোট-বড় সব প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে প্রায় ১৬ লাখ মেয়ে কাজ করে। এবং এর বড় একটা অংশ কাজ করে সার্ভিস ওরিয়েন্টেড কোম্পানিগুলোতে। কল সেন্টার, সুপার শপ, ব্যাংক, শপিংমল, ইন্সু্যরেন্স, এসব জায়গায় এখন মেয়েদের চাহিদাই বেশি। তাই নারীরা যদি প্রথম থেকেই কর্মপরিকল্পনা ঠিক রেখে এগিয়ে যেতে পারে তবে অবশ্যই বাংলাদেশে নারীর সর্বস্তরের দক্ষতা অর্জন সম্ভব। উন্নয়নের পথে নারীর এ যাত্রা নিয়েই কথা হলো মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অব পেরোল হিসেবে নিযুক্ত সুলতানা শিকদার অহনার সঙ্গে। তিনি জানান, 'একটি নারী যখন কর্পোরেট সেক্টরে কাজ করে তখন কিন্তু সে কেবল ওই সেক্টরেই নয়, বরং গেস্নাবালি অনবদ্য ভূমিকা পালন করছে। ছেলে বা মেয়ের সমান অধিকারের বিষয়টিতে যেতে চাচ্ছি না। সে কিন্তু একটি ছেলেকেও সমানভাবে অনুপ্রাণিত করতে পারছে।' জানতে চেয়েছিলাম ব্যাংকিং সেক্টরে ক্যারিয়ার গোল সেট করার প্রসঙ্গ নিয়ে। তিনি বললেন, 'এখন অনেকেরই ড্রিম জব ব্যাংকিং। কিন্তু তা হলেও ব্যাংকিংযে ক্যারিয়ার গড়তে গেলে অবশ্যই তাকে সেই জব সম্পর্কে প্রিপারেশন নিতে হবে। গেস্নাবাল ইকোনমি আর গেস্নাবাল ইনভেস্টমেন্ট সেক্টরসহ ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল টার্ম সম্পর্কেও কিছুটা ধারণা থাকতে হবে। লোকাল ব্যাংক ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে চলে সে সম্পর্কেও আইডিয়া থাকা জরুরি। ব্যাংক কীভাবে কন্ট্রিবিউট করে সেটাও জানতে হবে। জানতে চেয়েছিলাম, কর্মদক্ষতা বনাম কর্মপরিকল্পনা নিয়ে। তিনি জানালেন, 'সারাবিশ্বে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা কোনো কাজ করছে না। ইন্টারন্যাশনাল লিবার অর্গানাইজেশন একটা জরিপে লিখেছিলেন ৭৫ মিলিয়ন তরুণ এখন বেকার, না তারা পড়াশোনা করছে, না তারা কাজ করছে। এক ডাটাবেজে দেখেছিলাম ২৬০ মিলিয়ন তরুণ উন্নয়নশীল ইকোনমিতে কোনো ভূমিকা রাখছে না। এটা যদি হয় সারাবিশ্বের বেকারত্বের চিত্র তাহলে বাংলাদেশের মতো একটা উন্নয়নশীল দেশে এই সংখ্যা অনেক বেশি হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে যেটা মনে করি তাহলো তরুণদের ভেতর চাহিদা মোতাবেক দাতা খুঁজে পান না আমাদের চাকরি দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এবং এই মিস ম্যাচের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে পুওর বেসিক এডুকেশন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের চাকরি বাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে পারছে না। তাই প্রাইমারি শিক্ষা থেকে শুরু করে গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত ঢেলে সাজাতে হবে, ভোকেশনাল ট্রেনিং মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক করা তরুণদের চাকরি বাজারকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করবে। মেধা আছে এটা সত্যি কিন্তু আমাদের দেশের চাহিদা মোতাবেক কি আছে? সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সৃজনশীলতাকে ধ্বংস করে টেকনোলোজির নতুন উদ্ভাবনকে স্বাগত জানাচ্ছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ছি, আর সেই সঙ্গে অনেক চাকরির বাজারকে হারাচ্ছি। উদ্যোক্তার জায়গাতে ও আমাদের দেশের তরুণদের সফলতার হার তেমনভাবে বাড়েনি গত কয়েক বছরে। এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো- একটি সঠিক কর্ম পরিকল্পনার অভাব। নিজের দাতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকা। বাংলাদেশে কাজের সেক্টরের কিন্তু অভাব নেই, আপনি কোথায় কাজ করে নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করতে পারবেন সেটা ঠিকমতো বুঝতে না পারা আর সবশেষে মার্কেটে কোনো চাকরির বা ব্যবসা ভালো চাহিদাসম্পন্ন সেটা বুঝতে না পারা। এখনকার যারা নতুন নারী উদ্যোক্তা তাদের জন্য কিছু বলুন। 'যারা নারী উদ্যোক্তা তাদের বলব, সব সময় প্রতিযোগিতামূলক সময়ের জন্য নিজেকে তৈরি রাখতে হবে। বর্তমান বিশ্ববাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাকে বাংলা এবং ইলিশ দুটো ভাষাতেই দক্ষ হতে হবে। আর হঁ্যা। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে চলতে হবে। আমি নারী বলে- আমি একটু দেরি করে অফিস যাবো, নারী বলে ওই জিনিসটা করতে পারব না এমন ধ্যান-ধারণা থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যে কোনো পরিস্থিতিতে কাজ করার মানসিকতা তার থাকতে হবে। তবেই একটি নারীর শক্তি, নারী মুক্তির প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। থাকতে হবে কর্মদক্ষতার সঙ্গে কর্মপরিকল্পনার দারুণ সামঞ্জস্য।'