নারী এগিয়ে যাবে স্বাধীনতার ডানায়

আমাদের দেশে শিক্ষার হার দিন দিন বাড়ছে। নানা পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে দেখা যায় মেয়েরাই বেশি এগিয়ে থাকে। সামাজিক কাজে নারীর অংশগ্রহণও বেশ আশাব্যঞ্জক। আমাদের দেশের সরকার প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রীসহ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের জয়জয়কার। পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে নারীরা। তবুও নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন, লাঞ্ছনা ও অবহেলার শিকার হচ্ছে তারা। একুশ শতকে এসে যেখানে নারী স্বাধীনতা ও আত্মপ্রতিষ্ঠার জাগরণ ঘটবে সেখানে নারীরা আজও আত্মনির্ভরশীল হতে পারছে না। নারীর স্বাধীনতায় এখনো কত্ত কাঁটা! অনেক মেয়েই লেখাপড়া করে ঘরে বসে থাকে। আবার অনেকে কাজ করেও স্বামীর কাছে নির্যাতিত হন। পারে না মুখ ফুটে কোনো অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে। নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। নারীর ওপর সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলছে। নারী নির্যাতন রোধে নারী সংগঠন, নারীবাদীরাও সোচ্চার। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। দিন দিন দেশ ও সমাজ এগিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। আর নারী পুরুষ সবার যৌথ উদ্যোগে এগিয়ে যাবে দেশ। কিন্তু নারীর প্রতি চলমান সহিংসতা, আর পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির সনাতনী গন্ডি সে আশায় গুড়ে বালি দেয়। এর থেকে উত্তরণের উপায় কি নেই? নারীর স্বাধীনতা কি কেবলই স্বপ্ন? কোন কোন জায়গাতে পরিবর্তন দরকার এসব নিয়েই কথা বলেছেন রুমান হাফিজ

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
উচ্চশিক্ষায় নারীর প্রবেশ চাই জুরানা আজি সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একবিংশ শতাব্দীর উন্নয়নের স্রোতে সবাই যখন প্রবলভাবে সম্মোহিত তখনো দেখি নারী উচ্চশিক্ষায় পিছিয়ে আছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বারবার। যেন নারীকে পেছন থেকে টানছে অদৃশ্য অপশক্তি, যারা নারীকে শুধুই গৃহিণী কিংবা পরনির্ভরশীল দেখতে চায়। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে মেয়েদের উপস্থিত আমাদের আশাবাদকে সুদৃঢ় করলেও উচ্চশিক্ষার জগতে মেয়েদের অংশগ্রহণ এখনও আশানুরূপ হয়নি। মেয়েদের মেধা আর অদম্য আগ্রহের পরও আমাদের দেশের নারীদের একটি সীমাবদ্ধ গন্ডির পাঠ শেষ করেই প্রবেশ করতে বাধ্য হচ্ছে সমঝোতা নামক সংসারে। এসব বাধা মাড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস নিয়ে নারীকেই এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সহযোগী পরিবেশ দরকার। সর্বোপরি নারীর জন্য পারিবারিক সাহায্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নারীর কর্মক্ষেত্র হোক মানবিক নাসরীন জাহান লিপি সম্পাদক, সচিত্র মাসিক কিশোর পত্রিকা "নবারুণ" বাংলাদেশে নারীর অংশগ্রহণ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে, তবে বাধা যে পুরোপুরি দূর হয়ে গেছে তা নয়। নারী কর্মজীবী হলেও তার উপার্জনের ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব আছে কি? অনেক ক্ষেত্রেই থাকে না। আবার কর্মক্ষেত্রে নারী যোগ্যতার প্রমাণ দেয়ার পরও স্বীকৃতি সহজে মেলে না। পঞ্চাশ বছর ধরে নারী ঘর ছেড়ে বেরিয়েছেন, কিন্তু ঘরের কাজের বোঝা তার ঘাড় থেকে কমেনি। আশ্চর্যজনকভাবে পুরুষ ঘরের কাজে পারঙ্গম হওয়ার কোনো চেষ্টা করছেন না। ফলে নারী অল রাউন্ডার হয়ে উঠছেন বটে, আর্থিক ও মানসিকভাবে উঠছেনও। আর পুরুষ অল রাউন্ডার না হয়েও গায়ের জোরে সমাজের দখল নিয়ে সুবিধা ভোগ করছেন। সে কারণে কর্মজীবী নারীর পরিশ্রম অনেক বেশি, জীবনকে উপভোগ করার সময় তার থাকে না। ঘরে বাইরে দায়িত্বপালন করতে করতেই জীবন শেষ। এ বাধা উত্তরণের জন্য মানবিক পরিবার, মানবিক সমাজ, মানবিক কর্মক্ষেত্র, মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। নারী কেবল মা-স্ত্রী-বোন ইত্যাদি পরিচয়ের পাশাপাশি তাকে মানুষ হিসেবে দেখতে হবে, বুঝতে হবে যে মানুষের অধিকারও তার চাই। ভেদাভেদকে ভুলে যেতে হবে নাজমুন নাহার বিশ্বজয়ী পরিব্রাজক 'নারীরা যে অনেক শক্তিশালী, তারা চাইলে যে স্বপ্ন জয়ের শিখরে পৌঁছতে পারে সেটা তাদের বিশ্বাস করতে হবে। নিজেদের চিন্তায় স্বাধীনতা ধারণ করতে হবে। তেমনিভাবে পরিবার, রাষ্ট্র ও সমাজের সবাইকে নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথে সহযোগী হতে হবে। জীবন যেন কোনো গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না হয়। চেষ্টা করলে এই জীবন অনেক সুন্দর হতে পারে। সে জন্য নারীদের শিক্ষিত হতে হবে, আত্মনিভর্রশীল হতে হবে। নারীদের জন্য শিক্ষা আর আত্মনিভর্রশীলতার বিকল্প আর কিছু নেই। পজিটিভ মানসিকতা নিয়ে সবাইকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আত্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে নিজের উদ্যমতাকে কাজে লাগাতে হবে। কে নারী কে পুরুষ সেই চিন্তা পেছনে রেখে 'আমরা সবাই মানুষ' আমাদের একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। আজ বহির্বিশ্বের সব নারী নিজ নিজ যোগ্যতায়, সাহসিকতায় এগিয়ে যাচ্ছে। আমরাও অনেক এগিয়েছি, আমাদের আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। নারীরা আজ মহাকাশযাত্রা থেকে শুরু করে ছুটছে পৃথিবীর এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। আমাদেরও সব বাধা অতিক্রম করে সবকিছুকে জয় করতে হবে। আমাদের দেশের নারীরা অনেক এগোচ্ছে। যারা পিছে পড়ে আছে তাদের বসে থাকলে চলবে না। নিজেকে শিক্ষিত ও পরিশ্রমী করে তুলতে হবে নিজেকেই!'