বিশেষ শিশুদের জন্য বিশেষ যত্ন

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

সাবিহা আঞ্জুম
অটিজম শিশুদের বিকাশগত একটি সমস্যা। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুরা সাধারণত অপরের সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ করতে পারে না, তারা অতিরিক্ত জেদি হয়ে থাকে এবং নিজেকে বিচ্ছিন্ন ও গুটিয়ে রাখার মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে থাকে। অটিজমের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তবে, গবেষকরা মনে করেন, জেনেটিক, নন-জেনেটিক ও পরিবেশগত প্রভাব সমন্বিতভাবে অটিজমের জন্য দায়ী। শিশুর বিকাশে প্রাথমিক পর্যায়ে এটি সৃষ্টি হয়। এ পর্যন্ত পরিচর্যাই এর একমাত্র বিকল্প। এক সময় অটিজম ছিল একটি অবহেলিত জনস্বাস্থ্য ইসু্য। এ সম্পর্কে সমাজে নেতিবাচক ধারণা ছিল। বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক শিশু অটিজম নামের এই নিউরো-ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত। ইতোমধ্যে এ সম্পর্কে পিতা-মাতা, পরিবার-পরিজন ও সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা ও যথার্থ পরিচর্যার জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। 'অটিজম' শব্দটির সঙ্গে সবাই পরিচিত হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা সামান্যই। মস্তিষ্কের স্নায়ুবিক সমস্যা যা মস্তিষ্কের সাধারণ কর্মক্ষমতাকে ব্যাহত করে, তার নামই অটিজম। যার আরেক নাম অটিজম স্পেকট্রাম সিনড্রোম। সাধারণ অর্থে শিশুদের মধ্যে যদি বিশেষ কিছু আচরণ দেখা যায় তাকেই অটিজম বলে। শিশুর নাম ধরে ডাকলেও সাড়া না দেয়া, চোখে চোখ রাখে না বা রাখতে না পারা কিংবা দুই বছরেরও পরে কথা বলা শুরু করা অটিজমের লক্ষণ বলে ধরে নেয়া হয়। ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে অটিজমের সঠিক কারণ অনুসন্ধান করা যায় না। কিন্তু কখন বুঝবেন আপনার শিশুটি অটিজমে আক্রান্ত কিংবা এর ঝুঁকিতে রয়েছে? চাইল্ড ফিজিওলজিস্ট তারানা আনিস বললেন, মাত্রা অনুযায়ী শিশুর চিকিৎসা ক্ষেত্র নির্ধারিত হয়। শিশুটি কি স্পেশাল স্কুলে যাবে নাকি সাধারণ স্কুলে যাবে তা নির্ধারণ করা হয় তার মাত্রা পরিমাপের পর। যুক্তরাষ্ট্রের অটিজম সোসাইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশ মানুষ অটিজম আক্রান্ত আর বাংলাদেশে প্রায় দেড় লাখের মতো অটিজম আক্রান্ত মানুষ রয়েছেন এবং প্রতি বছর তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে প্রায় ১৫শ শিশু। বাংলাদেশে অটিজম নিয়ে কাজের করছে হাতে গোনা কয়েকটি সংস্থা। তাদের মধ্যে রয়েছে অটিজম রিসোর্স সেন্টার, 'সেন্টার ফর নিউরোডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেন' এবং ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র। কিছুটা প্রতিরোধ করা যায় অটিজম অভিভাবকের সচেতনতায়। শিশুকে বেশি বেশি সময় দেয়া, তার সঙ্গে খেলা করা এবং নতুন নতুন জিনিসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া, এতে করে শিশুর বুদ্ধি এবং মানসিক বিকাশ স্বাভাবিক হয়। বাবা-মা কি করবেন, যখন তারা বুঝবেন শিশুটি অটিজমে আক্রান্ত? লক্ষণ দেখা মাত্র অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কেন অটিজম আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বাংলাদেশে? তার মূল কারণ সামাজিক ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়া এবং একক পরিবারের সংখ্যা বেড়ে শিশু একা হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন টিভি কিংবা যে কোনো একটা কিছু নিয়ে একা ব্যস্ত থাকা অনেকটা প্রভাব ফেলে শিশুর ওপর।