শুধু শিক্ষা নয়, চাই অধিকার আদায়ের চেতনাও

প্রকাশ | ০৬ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
তাসমিয়া জাহান দিন বদলের পালায় আজ অনেক নারীর মধ্যেই চেতনা জাগ্রত হয়েছে যে, পড়াশোনা শিখতে হবে। কিন্তু জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে পারিবারিক ও সামাজিক নানা বাধার সম্মুখীন হতে হতে সে চেতনা ক্রমেই ধূলিসাৎ হয়ে যায়। আর এভাবেই শিক্ষার আলো থেকে ঝরে পড়ে অনেক কন্যাশিশু যারা কি না পরে হতে পারত আলোকিত নারী। এখনো অনেক নারী আছেন যারা শিক্ষার গুরুত্ব জানলেও পর্যাপ্ত সুবিধা পাচ্ছেন না যে কারণে তাদের সম্মুখীন সামাজিক নানা জটিলতার। যে কোনো সমস্যায় নিজের অধিকার আদায়েও তারা পিছপা। কেননা, তারা জানেন না আইন কী? কী করে আইনের সাহায্য নিতে হয়? আজকাল অনেক নারীই জানেন না কোথায় গিয়ে মামলা করতে হবে। মামলা করতে কত টাকা লাগে। এ জন্য প্রচারণা অনেক বেশি জরুরি। এ ছাড়া সবার আগে প্রয়োজন নারীর শিক্ষিত হওয়া। শিক্ষিত হলেই নারী তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবেন। সচেতন না হলে তাদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়তেই থাকবে। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নারীর শিক্ষা পরিস্থিতির উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন, সব শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের জন্য খাদ্য কর্মসূচি রয়েছে। পৌরসভার বাইরে বিনাবেতনে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের শিক্ষার সুযোগ আর মহানগরের বাইরে মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তির সুযোগ রয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হচ্ছে। তারপরও দেখা যায়, প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে ছেলেশিশু ও মেয়েশিশুর সংখ্যা ভর্তির সময় সমান হলেও মেয়েশিশুদের মধ্যে ড্রপআউট বা ঝরে পড়ার সংখ্যা বেশি। ৩৩ শতাংশ মেয়েশিশু প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই ঝরে পড়ে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার ১৭.৭২ এবং মাধ্যমিক ৪৫.৮০ ভাগ। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মেয়েদের ভর্তির হার এখনো পুরুষের তুলনায় কম। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষায় নারীদের ভর্তির হার অনেক কম। কৃষি ও প্রকৌশল শিক্ষায় মেয়েদের সংখ্যা মাত্র ৯ শতাংশ। ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে- যা অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এই উপবৃত্তির বিভিন্ন শর্ত মানা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রী উপবৃত্তির ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ। উপস্থিতি ৪৫ শতাংশ নাম্বার প্রাপ্তি, অবিবাহিতা থাকা ইত্যাদি আবশ্যিক পূর্বশর্ত মানা হয় না বলে অনেক অভিযোগ রয়েছে। ফলে আর্থিক সুবিধার জন্য ছাত্রী ভর্তির হার বৃদ্ধি পেলেও তারা মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে না। অবশ্য এ জন্য শিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত নারীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে জাতীয় নারী প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন একাডেমি পুনর্গঠন এবং প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন করা হয়েছে। বেগম রোকেয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বেগম শহীদ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা প্রশিক্ষণ একাডেমি এবং মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। বয়স্ক নারী শিক্ষা কার্যক্রমও চালু করা হয়েছে। সরকারি পর্যায়ে আরও অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নারী শিক্ষা পরিস্থিতির উন্নয়নে বেসরকারি পর্যায়েও রয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। রয়েছে মেয়েদের জন্য বিভিন্ন সংস্থার বিশেষ বৃত্তি, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, আয়মূলক প্রশিক্ষণের সঙ্গে শিক্ষা, নারীদের জন্য বিশেষ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ। আর সব উদ্যোগই সফল হবে যদি নারীরা সুশিক্ষিত হয় এবং নিজেদের আত্মমর্যাদা সম্পর্কে সজাগ হয়। প্রত্যেক নারীকেই এই বোধই জাগ্রত করতে হবে- শিক্ষার কোনোই বিকল্প নেই।