বিষণ্নতার স্পর্শ

বিরূপ ও কর্কশ এ দুনিয়ায় নরম কাদামাটির এক মেয়ে পুতুলও নিরাপদ নয়। সমাজের বুকে ধীরে ধীরে শর্ত অভিজ্ঞতায় একসময় সে বড় হয়। শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রবহমান ছোঁয়ার বদলাতে থাকে তার দৃষ্টিভঙ্গি। তবুও পরিবার-পরিবেশ আর সমাজের নানা অবজ্ঞায় মাঝেমধ্যে চোখের কোণ বেয়ে নামে এক পশলা বৃষ্টি...

প্রকাশ | ১৩ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মনিরা মিতা কলংক, আঘাত আর ঠাস বুনন দীর্ঘশ্বাস না থাকলে ঠিক চরাচরে মানায় না আমাদের। সারাজীবন শিলে নোড়ায় পিষে পিষে তারকারির মরিচ হওয়ার জন্যই বোধ হয় আমাদের জন্ম, কেননা আমরা 'নারী'। বিরূপ ও কর্কশ এ দুনিয়ায় নরম কাদামাটির এক মেয়ে পুতুলও নিরাপদ নয়। সমাজের বুকে শর্ত অভিজ্ঞতায় ধীরে ধীরে বড় হওয়া মেয়েটা একসময় বড় হয়। শিক্ষা সংস্কৃতির প্রবাহমান ছোঁয়ার বদলাতে থাকে তার দৃষ্টিভঙ্গি। তবুও পরিবার-পরিবেশ আর সমাজের নানা অবজ্ঞার ঝাঁজে মাঝেমধ্যে চোখের কোণ বেয়ে নামে এক পশলা বৃষ্টি। মন হয় বর্ষার আকাশ যার রং গাঢ় শ্যামল, মেঘের সঙ্গে মিলেমিশে কষ্টিপাথর। এত কিছুর পরও জীবনে আসে অন্তহীন জল থৈ থৈ ভালোবাসা, যার পুলকে কলকল ছলছল করে ঢেউগুলো জীবনকুলে আছড়ে পড়ে- ছড়ায় আনন্দ। ভালোবাসার অন্তহীন জলধারা আর ঢেউয়ের উচ্ছ্বাস উছলে পড়ে জীবনে। শতস্বপ্নের জাল বুনে স্বামীর ঘরে এসে ধীরে ধীরে সাজায় তার স্বপ্নের ঘর। কিছুদিন যেতে না যেতেই অপরিচিত লতাগুল্মের গন্ধ নাকে আসতে থাকে; বুঝতে পারে সে এখন ইট-কাঠ-পাথর-লোহার শিকলে বন্দি। দিয়াশলাইয়ের বক্সের মতো কোনো গৃহে থেকে থেকে হাঁপিয়ে ওঠা মেয়েটার ভালো লাগে, মন্দ লাগার খবর কেউ রাখে না। সমাজ সংসারের সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধ করেই শিক্ষিতা মেয়েটা যখন চাকরি করে তখন তার বুকের গহীনে যত্ন করে রেখে দেয়া স্বাধীনতার ছবিটা জীবনপটে ভেসে ওঠে। তবুও ব্যক্তি স্বাধীনতার দেয়ালে শুধু শুধু কালি না ছিটিয়ে চুপচাপ বসে থাকার পাত্র শ্বশুরালয়ের লোকজন নয়। চাকরি-বাকরি আর সংসারের চাপ কালোমেঘের মতো আঁকড়ে ধরে তার জীবন। মাঝেমধ্যে মেয়েটি নিজেকে ভাবে ক্যানভাসের ছবি; স্বাধীনতা চৈতন্যের আবির মেখে যেন খেয়ালি প্রকৃতির সঙ্গে কোলাকুলি করছে। আস্তে আস্তে সে অনুভব করে তার ভেতরটা ফাঁকা, ভালোবাসা দাঁড়িয়ে দাঁত খিঁচিয়ে হাসছে, যার শেষটা দাঁড়ায় বিচ্ছেদ। বিচ্ছেদের আনলে পুড়ে শেষ আশ্রয় হয় পিতৃলয়ে। সংসার ভাঙার লজ্জা ওকে দংশাতে থাকে। বারবার একটা সত্য ওর পুরো অস্তিত্বকে যেন শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলতে চায়। স্মৃতির দমকা হাওয়ায় মন বড় অস্থির আর উদ্ভ্রান্ত হয়ে যায় বারবার। অসীম শূণ্যতায় ভরা ভবিষ্যতের দিকে নিষ্প্রাণ অন্তঃসারশূণ্য বর্তমান বাষ্পের মতো উড়ে যেতে থাকে। খুব বেশি কিছু চাওয়া ছিল না। মানুষ হয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল সে কিন্তু সমাজ তাকে মনে করিয়ে দেয় সে মানুষ না 'মেয়েমানুষ'। স্বপ্ন-ইচ্ছা স্বাধীনতা মানুষের জন্য, মেয়ে মানুষের জীবনে এসব বিলাসীতা মাত্র। একাকী মেয়েটি যে ঘরে বাস করছে তার ভেতর আরেকটি ঘর তৈরি করে। করে বললে ভুল হবে একটা প্রচলিত প্রথা বা চারপাশের রাসায়নিক বিক্রিয়া তাকে বাধ্য করে। \হবৈপরীত্যের মধ্যে জীবনের আসল নির্যাস। যেভাবে মেয়েটির জীবন প্রবাহিত হচ্ছে সেজন্য আসলে কে দায়ী? জীবনের উঠোনজুড়ে পচা লতা-গুল্ম তার পাতা, বৃষ্টিভেজা মাটির সোঁদা গন্ধের সাথে মিলেমিলে একাকার। এটাই জীবন, মেয়ে মানুষের জীবন।