হলজীবনে সিয়াম সাধনা

প্রকাশ | ২৭ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ফারিবা সুলতানা দিনা ইফতারের সময় হতে আর কিছুক্ষণ বাকি। সাবিহা সুলতানা ও স্মরণিকা রায় তড়িঘড়ি করে শসা, পেঁয়াজ, পেঁপে কাটছে। নুসরাত জাহান স্বর্ণা ও ফারজানা ছন্দা বানাচ্ছিল শরবত। সানজিদা কুন্তলি ও ইসরাত জাহান শুভ্রা ছোলা, পেঁয়াজু, আলুর চপ একসঙ্গে মাখছিল, আর এর মধ্যেও চলছিল ওদের আড্ডাবাজি। তারপর সামনে ইফতারি সাজিয়ে বসে সময়ের জন্য অপেক্ষা। ইফতার আয়োজনের এ গল্পটি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি বেগম সুফিয়া কামাল ছাত্রী হলের নতুন শাপলা ভবনের একটি রুমের। তবে এ দৃশ্যটি সব আবাসিক হলের মেয়েদের ইফতার আয়োজনের মোটামুটি সাধারণ চিত্র। রমজানেও চলছে ক্লাস-পরীক্ষা। তাই ইচ্ছা থাকলেও ছুটি না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি যাওয়া যাচ্ছে না। দৈনন্দিন সব কাজ চলছে রুটিন অনুযায়ী, সেই সঙ্গে চলছে সিয়াম সাধনাও। হলজীবনে সারা বছরই থাকা-খাওয়া নিয়ে কম-বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় সবাইকে। রমজানে এ ভোগান্তির মাত্রা বেড়ে যায় আরও কয়েক গুণ। হলের মেয়েদের কথাবার্তা তারই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। হলের ডাইনিং-ক্যান্টিনে যদিও সেহরি, ইফতারি খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু তা বরাবরের মতোই মেয়েদের সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ। তা ছাড়া এ বছর সেহরি, ইফতারি খাওয়ার দামটাও আগের চেয়ে বেশ চড়া। তাই অনেকেই নিজে রান্না করে খাচ্ছে। সে ক্ষেত্রেও ভোগান্তি কম নয় বলে জানালেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম খালেদা জিয়া হলের ছাত্রী নুসরাত জাহান লিজা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলের আবাসিক ছাত্রী শাহিদা আখতার সাথী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের আবাসিক ছাত্রী নাছরিন সুলতানা পাপড়ি। তারা বলেন, হলের রান্নাঘরে চুলা ফাঁকা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। কমপক্ষে ঘণ্টাখানেক আগে থেকে চুলার জন্য সিরিয়াল দিতে হয়। সারাবছর যারা ডাইনিংরুমে খাবার খায়, রমজানে তারাও রান্না করে খায়। তাই রান্নাঘরের ওপর চাপটা বেশি থাকে। চুলার জন্য এ যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে আড়াই হাজার টাকা খরচ করে একটি রাইস কুকার কিনে নিয়েছে সাথী। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সাথীর রাইস কুকারে শুধু ভাতই রান্না করে না, তরকারি রান্না করার এক বিশেষ পদ্ধতিও সে আবিষ্কার করে ফেলেছে। যদিও তরকারির স্বাদটা একটু ভিন্ন, তবু ঝামেলা থেকে তো আপাতত রক্ষা পাওয়া গেছে, এতেই খুশি সে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব ফয়জুন্নেছা হলের আবাসিক ছাত্রী জান্নাতী আখতার বৃষ্টি জানায়, ইফতারির জন্য আমাদের হলের বেশির ভাগ মেয়েরই ভরসা ক্যান্টিন। কারণ রোজা রেখে, ক্লাস করে ইফতারির আইটেমগুলো তৈরির সময় বা ধৈর্য কোনোটাই অবশিষ্ট থাকে না। হলের ছাত্রী শিউলী বলছিল, তাদের হলের ক্যান্টিনের ছোলা কেমন যেন খসখসে, পেঁয়াজু কাঠের মতো শক্ত। তাই এ দুটি নিজেই বানাই। বাকিগুলো ক্যান্টিন থেকে কিনে নেয়। কেউ কেউ ভিজানো চিড়া, নারকেল ও চিনি মিশিয়ে কিংবা নুডলস রান্না করেই ইফতারি করে নেয়। ক্যান্টিন থেকে ইফতারি কিনতেও কম ঝক্কি পোহাতে হয় না। বিকাল ৪টা থেকেই ইফতারি বিক্রি শুরু হয়। আর তা কেনার জন্য দাঁড়াতে হয় লম্বা লাইনে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেসা হলের আবাসিক ছাত্রী মিমি ও সাঈদা আক্তার লিনা জানায় সেহরি ও রাতে খাওয়ার জন্য বেশির ভাগ মেয়েই রান্না করে। দু-তিন বান্ধবী কিংবা রুমমেটরা মিলে একটি সবজি, ডাল, ডিম কিংবা মাছ-মাংস রান্না করে বলে জানা গেল। হলের ভেতরের দোকানেই চাল, ডাল, মাছ, মাংস, সবজি সবই পাওয়া যায়। তবে দামটা বাইরের চেয়ে একটু বেশি বলেই জানা গেল হলের মেয়েদের কাছ থেকে। হাজারো ঝক্কি-ঝামেলা সত্ত্বেও হলের ভেতরে স্বল্পপরিসরে চলে মিনি ইফতার পার্টি। মাঝেমধ্যে কেউ কেউ বন্ধুদের জন্য ইফতারির আয়োজন করে। বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে গল্প-আড্ডায় মেতে ইফতারি করতে করতে ভুলে যায় সব দুর্ভোগের কথা। সব সমস্যা-ক্লান্তি প্রতিনিয়তই হার মানছে ওদের প্রাণচাঞ্চল্যের কাছে। এভাবেই বিচিত্র অভিজ্ঞতায় কাটছে সেহরি ও ইফতার। সেই সঙ্গে চলছে ঈদের ছুটির জন্য দিন গোনা।