সংগ্রামী ক্লারা জেটকিন

প্রকাশ | ০৩ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ক্লারা জেটকিন
ফাহমিদা হক ১৮৫৭ সালের ৫ জুলাই জার্মানির স্যাক্সোনি প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন ক্লারা জেটকিন। তখনকার দিনে জার্মান মেয়েদের লেখাপড়ার তেমন অবাধ সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। মানুষের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা, প্রখর বুদ্ধিমত্তা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও চিন্তাভাবনার দিক থেকে গভীর বিশ্লেষণী এবং প্রচন্ড সাহসী ক্লারা। ১৮৭৪ সালের দিকে জার্মানির নারী আন্দোলন ও শ্রম আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তারুণ্য উদীপ্ত একুশ বছর বয়সেই ১৮৭৮ সালে সভ্য হন 'জার্মান সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির কিছু সময় পর তার পরিচয় হয় রাশিয়ান বিপস্নবী ওসিপ জেটকিনের সঙ্গে। দু'জন সমাজ বদলের একনিষ্ঠ কর্মী নিজেরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৮৭৮ সাল সময়টা বড় কঠিন হয়ে ওঠে জার্মান সোস্যালিস্টদের জন্য। ততদিনে ক্লারা জেটকিন এক পরিচিত সোস্যালিস্ট নেতা। শ্রমিকদের মধ্যে দিন-রাত একাকার করে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলেছেন। নিষিদ্ধ করে দেয়া হয় সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি। শুরু হলো দমন-পীড়ন পার্টি নেতা ও সদস্যদের ওপর। অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও ক্লারা জেটকিন সাহসিকতার সঙ্গে সে সময় পার্টির পত্রিকা প্রচারের দায়িত্ব পালন করেন। নানান সমস্যা ও পারিবারিক দুরবস্থার কথা কখনো তিনি তেমনটা আমলে নেননি। শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির সংগ্রামকে কীভাবে আরও অগ্রসর হওয়া যায়, সমাজে নারীদের ন্যায্য অধিকারকে কীভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করা যায় এবং প্রকৃত অর্থেই সব বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে একটি সমাজতান্ত্রিক সমতার সমাজ নির্মাণ করা যায় এই ছিল ক্লারার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্লারা জেটকিনের কথার মধ্যে অদ্ভুত এক সুরের ছন্দবদ্ধ সাবলীলতা ছিল। নিমিষেই যে কারও সঙ্গে অবলীলায় মিশে যেতে পারতেন। অল্প কথায় এবং যে কোনো গভীর বিষয়কে এক উপলব্ধিময় অনুভূতির ভাষা দেয়ার অসামান্য এক ক্ষমতার গোপন এক শৈলী জানা ছিল জেটকিনের। তার জীবনী পড়তে গিয়ে বারবারই মনে হয়েছে এসব গুণ তিনি তার মায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক সম্পর্কের ভেতর দিয়ে নিজের মধ্যে বিকশিত করে গড়ে উঠেছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন সমাজতান্ত্রিক সংগ্রামের একজন বিপস্নবী নেতা। বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টিশীল চর্চার মধ্য দিয়েও সমাজের ভেতর যে একটা সংস্কৃতিগত প্রগতিশীল রূপান্তর আনা যেতে পারে সে ব্যাপারেও ক্লারা জেটকিন বেশ সচেতন প্রয়াস নিয়েছিলেন। ১৮৯১ সালে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হলো 'সমতা' নামক নারীদের একটি পত্রিকা। ওই পত্রিকার মাধ্যমেই ক্লারা নারীদের সংগ্রামী চেতনায় উজ্জীবিত করার পাশাপাশি তাদের ন্যায্য অধিকারের লড়াইগুলোর নানান বিশ্লেষণ ও সমাজে তার প্রভাবে সুফলগুলো প্রচার করতে থাকেন। এই পত্রিকা জার্মানসহ সারাবিশ্বের নারীদের এক সমাজতান্ত্রিক সমতার পৃথিবী গড়ার স্বপ্নে একত্রিত ও অনুপ্রাণিত করতে থাকল। অধিকারের জন্য লড়াই করার প্রেরণা হয়ে উঠেছিল মুখপত্রটি।