অদম্য শক্তিতে নারী

প্রকাশ | ০৩ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
উম্মে শায়লা রুমকী রিতুর পেস্নটে ভাত তুলে দিতেই রবি বলল, ভাতের বদলে তোমার রুটি খাওয়া দরকার! নিজের শরীরের দিকে তাকাও। বিয়ের আগে কত সুন্দর ছিলে, আর এখন!! রিতু কিছুই বলল না। চোখে পানি এসে যাচ্ছে। বাসার গৃহকর্মীর সামনে এভাবে না বললেই পারতো। এটা ঠিক। গত তিন বছরে তার ওজন বেড়েছে অনেক। বাড়বেই না কেন? বিয়ের আগে চাকরি করত রিতু। খাবার আর হাঁটা দুটোই নিয়ম করে চলত, তাই ওজনটাও নিজের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু বিয়ের পর! সারাদিনের সংসার সামলানো, পরিবারের অন্য সদস্যদের নানা পদের রান্না করে, তাদের খাইয়ে দাইয়ে বিছানায় যেতে বারোটা। কোনো কোনো দিন অতিরিক্ত কাজের চাপে ঘুম আসে না, বিছানায় এ পাশ ও পাশ করে সকালেই বিছানা ছাড়তে হয়। চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছে রবির ইচ্ছায়। নিজে আয় করে স্বাধীনভাবে খরচ করা মেয়েটা এখন কিছু কিনতে হলে হাজার বার ভাবতে হয়! রবির কাছে টাকার জন্য ঘ্যান ঘ্যান করতে হয়। এই মানসিক চাপও তার ওজন বাড়ার আরেকটা কারণ! একজন পুষ্টিবিদ বলেছিল, নিয়ম করে ঠিক ঠিক সময়ে খেতে হবে। কি করে সে ঠিক সময়ে খাবে। সকাল বেলায় সবার খাবার ঠিকঠাক মতো রেডি করে, সবার খাওয়া শেষে অফিস, স্কুলে পাঠানোর পর নিজের খাওয়ার ফুসরত হয়! বেশ কয়েকবার কঠিন ডায়েট করেও লাভ হয়নি। জিরা পানি, মেথি, এলোভেরা, লেবু পানি কি করেনি!! কোনো দিন শুধু ফল, কোনোদিন শুধু ডিম, কোনোদিন রোজা! কিছুতেই যেন ওজনকে বাগে আনতে পারছে না! আজকাল কোনো অনুষ্ঠানে যায় না রিতু। শাড়ি পড়লে নিজের কাছেই অস্বস্তি হয়!সব ধরনের পোশাক পরতেও পারে না। রবি খোঁচাতে থাকে, ননদী হাসতে থাকে, শাশুড়িও বলে, বৌমা! সারাদিন বসে না থেকে একটু হাঁটাহাঁটি করলেও তো পারো!আর যদি কোনো গেট টুগেদার বা বিয়ের বাড়ির পারিবারিক আয়োজনে যেতেই হয়, তাহলে সেদিন আর রক্ষে নেই! কি করে এতো ওজন বাড়ল? তুমি আগে কত সুন্দর ছিলে!!এই ডায়েট করো, সেই ডায়েট করো, হাঁটো দুবেলা, জিমে যাও, ইয়োগা করো!! এরকম সব উপদেশ আর অহেতুক পরামর্শে মনটাই বিষণ্ন হয়ে যায়! আর এই বিষণ্ন্নতা ওজন বাড়ার আরেকটি কারণ। রিতু ভাতের পেস্নট রেখে উঠে পড়ল। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। চোখের পানি আড়াল করতেই সে ডাল আনার বাহানায় রান্নাঘরে গেল। এই ঘটনাটি শুধু রিতুর নয়। আমাদের চারপাশে এরকম অনেক ঘটনাই দেখতে পাই। মোটা বা চিকন হওয়ার ওপর আসলে সৌন্দর্য নির্ভর করে না। সুন্দরের কোনো সংজ্ঞা হয় না, আপনার চোখে যা সুন্দর, জরুরি নয়, অন্যজনও তাকে সুন্দর বলুক। মানুষের ভেতরের সৌন্দর্য, মমতা, ভালোবাসা, মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা, প্রেমই মূলত নর-নারীকে সুন্দর করে তোলে। অন্য সব প্রাণী থেকে আলাদা করে। আপনি হয়তো কারিনা কিংবা দীপিকার মতো ফিগার চান!কিন্তু তাদের মতো কি ব্যায়াম এবং ডায়েট মেনে চলতে পারেন? আপনার পক্ষে কি একটি স্বাস্থ্যকর মানসিক চাপহীন জীবনযাপন করা সম্ভব? আপনি কি আসলে আট ঘণ্টা ঘুমাতে পারেন? আপনি কি নিয়ম করে প্রোপার ডায়েট বা ব্যায়াম করতে পারেন? যদি এর কোনোটাই করতে না পারেন তাহলে কেন ওজন নিয়ে হতাশ হচ্ছেন? মনে রাখা প্রয়োজন। কোনো কিছুই রাতারাতি সম্ভব নয়। ওজন যদি কমাতে চান তাহলে তা যেন অন্যের জন্য না হয়! নিজেকে ভালোবাসুন। নিজের সুস্থতা আর ফিট থাকার জন্য ব্যায়াম প্রয়োজন, প্রয়োজন একটি নিয়ম মাফিক জীবনযাপন। প্রথমেই ঠিক করুন, কত কেজি ওজন কমানো দরকার। এবার ভাগ করে নিন, কয় মাসে কমাবেন! মনে রাখবেন তাড়াহুড়ো করে ওজন কমবে না। খাবার তালিকা থেকে চিনি, লবণ, শর্করা জাতীয় খাবার কমিয়ে ফেলুন। নিজের জন্য সময় বের করুন। ঘরে বসে ফ্রি হ্যান্ড অথবা জগিং করুন। সুযোগ থাকলে প্রতিদিন অন্তত ত্রিশ মিনিট হাঁটুন। বই পড়ুন, গান শুনুন, গানের তালে বিশ মিনিটের নাচও হতে পারে ভালো ব্যায়াম। তবে যাই করুন, নিজেকে ভালোবাসুন, নিজেকে নিয়ে সুখী থাকুন। আপনি দেখতে যেমনই হোন না কেন, আপনার হাসিই আপনার সৌন্দর্য। অন্যদের কথায় মন খারাপ করলে হাসবেন কি করে? মেয়েরা! নিয়মিত হাঁটুন নিজের জন্য। নিজের ভেতরের যে অদম্য শক্তি তাকে কাজে লাগান নিজের জন্য।