বাজেটে থাকুক নারী ও তরুণদের প্রাধান্য

প্রকাশ | ১০ জুন ২০১৯, ০০:০০

সাবিহা আনজুম
আসছে নতুন সরকারের প্রথম বাজেট। হতদরিদ্র মানুষ বাজেট বোঝে না। দুবেলা খাওয়ার সংস্থান হলে তাদের চলে যায়। তাদের জন্য বাড়তি বরাদ্দ প্রয়োজন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে অবহেলিত নারীগোষ্ঠীর জন্য বাজেটে দরকার বিশেষ সুনজর। কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ততার পাশাপাশি নারীদের প্রয়োজন সামাজিক সুরক্ষা এবং বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা। বাজেটে থাকুক তরুণদেরও প্রাধান্য। তরুণদের রাখতে হবে সব উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তরুণ উদ্যোক্তাদের সহজে ব্যবসা করার জন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় নীতি উদ্যোগ থাকতে হবে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) তথ্যমতে, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ বা প্রায় চার কোটি। এসব মানুষের মাত্র ২৯ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় রয়েছে। বাকি ৭১ শতাংশ বা ২ কোটি ৮০ লাখই রয়েছে এর বাইরে। জুনের শুরুতে উপস্থাপন হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয়বারের বাজেট এবং নতুন সরকারের প্রথম বাজেট ২০১৯-২০। এবারের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যিনি গত সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন। পত্রপত্রিকার খবরে যতটুকু জানা গেছে, এবারের বাজেট হবে বেশ বড় আকারের। আশা করা যায় বাজেটে প্রান্তিক কৃষক, দিনমজুর ও সাধারণ মানুষের স্বার্থ গুরুত্ব পাবে। সামাজিক সুরক্ষায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও ভাতা বাড়ানো হলে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার দিকে আরও এক ধাপ অগ্রসর হবে বাংলাদেশ। তবে সুবিধাভোগী চিহ্নিত করা এবং সুবিধাভোগীদের কাছে সময়মতো সুবিধা পাঠানোর কাজ দক্ষতার সঙ্গে করতে হবে। সুবিধাভোগী চিহ্নিত করার পাশাপাশি যারা কাজের সুযোগ পেলে কাজ করতে ইচ্ছুক, তাদের যথাযথ সুযোগ করে দেয়া যেতে পারে। ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা বাস্তবে রূপায়ণের জন্য প্রবৃদ্ধিতে গরিব মানুষের শ্রমের প্রকৃত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে দরিদ্র মানুষের মজুরি বাড়াতে হবে। তবে অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে সুশাসন নিশ্চিত করা। সুশাসন ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশেরই উন্নয়ন টেকসই হয়নি। অন্যদিকে সামাজিক সুরক্ষাকে আরও সম্প্রসারণশীল করা প্রয়োজন। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সামাজিক সুরক্ষার প্রথাগত কর্মসূচির পাশাপাশি সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু করা উচিত। উন্নত দেশগুলোয় সর্বজনীন পেনশন, বেকার ভাতার মতো জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি রয়েছে। আমাদের দেশে শুধু সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পেনশন ভাতার ব্যবস্থা আছে। অথচ সরকারি জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার খুবই অল্প অংশ। সব বেসরকারি চাকরিজীবীকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা প্রয়োজন। সেজন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সাধারণ পেনশন তহবিল গঠন করা যেতে পারে। স্ব স্ব চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুয়েটির ব্যবস্থাপনার জন্য একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। সরকারি চাকরিতে যেমন অবসর গ্রহণ করার পর পেনশন সুবিধা দেয়া হয়, তেমনি বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্যও অবসর গ্রহণের পরে পেনশন সুবিধা দেয়া হবে। সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র পেনশন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বেসরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের টাকা জমা থাকবে। যারা যে প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করেন না কেন, তাদের জন্য একটিই পেনশন হিসাব থাকবে। পেনশন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানে মাসে মাসে প্রত্যেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের চাকরিজীবীর অনুকূলে টাকা জমা রাখবে। উলিস্নখিত প্রতিষ্ঠান লাভজনক খাতে এ তহবিল বিনিয়োগ করবে। বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পেনশন তহবিলের বিষয়টি এ বাজেট থেকেই শুরু করা যেতে পারে বলে অনেকেই আশা প্রকাশ করছেন। আগামী বাজেট হোক তরুণ জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিয়ে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন এবং উন্নত দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশের দরকার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি। তা সম্ভব হবে দক্ষ তরুণ জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে। এজন্য তরুণদের রাখতে হবে সব উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার অনুপাতে তরুণই বেশি। এ কাঠামোর সুবিধা নিতে তরুণদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। তরুণরা যারা উদ্যোক্তা হিসেবে আসতে চাইছেন, তাদের সহজে ব্যবসা শুরু করার সুযোগ করে দিতে হবে। এ জন্য বাজেটে উদ্যোগ থাকা দরকার। কর অব্যাহতি, সহজে ব্যবসা করা, সুদহার কমানো, ভেনচার ক্যাপিটাল গঠন ও করপোরেট কর কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তরুণরা আইসিটিতে আগ্রহী। এটা মেধার ব্যবসা। এর জন্য বড় অফিস বা কল-কারখানা দরকার হয় না। দরকার সুলভমূল্যে মানসম্পন্ন ইন্টারনেট। বর্তমানে আইসিটি উত্তরণ পর্যায়ে রয়েছে। সমস্যা দক্ষ লোকের অভাব। সরকারের পরিকল্পনায় এখানে নজর দিতে হবে। উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি কৃষক ও শ্রমজীবী তরুণ রয়েছেন। সবার জন্যই সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। দক্ষতা বাড়াতে হবে তরুণদের। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যগত সেবা দিতে হবে। তিনি বলেন, এসএমই খাতে নতুন শিল্প হচ্ছে না, যদিও বড় শিল্প সম্প্রসারিত হচ্ছে। কর্মসংস্থানের জন্য এসএমই খাতে শিল্প স্থাপনে প্রণোদনা দিতে হবে। মোটকথা, মূল পরিকল্পনার পাশাপাশি নারীবান্ধব ও তারুণ্যনির্ভর বাজেট চায় বাংলাদেশ, যা হবে কর্মসংস্থান, উন্নয়ন ও ব্যবসায় উপযোগীও। সর্বোপরি বাজেটকে হতে হবে মানবিকও। তরুণদের অনেক দূর যেতে হবে। নারীদেরও পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। প্রয়োজনীয় সুযোগ ও সহায় পেলে তারা দেশ ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির দাবিদার। ইতোমধ্যে অনেক অর্জন হয়েছে, তবে তা নিয়ে আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই। সব খাতকে একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সরকারের পরিকল্পনাও হতে হবে তেমন।