শুদ্ধতা ও নিজেকে ভালোবাসা স্মার্টনেসের অংশ

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯, ১৩:০৭

হালিমা রিমা
আমরা অনেকেই নিজের সাজগোছ বা পরিপাটি থাকাটা শুধুমাত্র বয়ফ্রেন্ড বা স্বামীকে খুশি করার জন্য করে থাকি। একবার কি এভাবে ভেবে দেখেছি...... নিজে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটু ভালোবেসে নিজেকে দেখি না। একটু কাজল দেই, লিপস্টিক দিয়ে নিজেকে রাঙাই। মাসে একবার পার্লারে যাই না কেন শুধুই নিজের জন্য। প্রতিটি বয়সের একটা নিজস্ব সৌন্দর্য আছে। সেটাকে উপলব্ধি করে নিজের প্রতি যত্নশীল হতে ক্ষতি তো নেই। আমি স্ত্রী, আমি মা, আমি বউমা। আমার কাছে সবার অনেক চাওয়া। একটা সময় সন্তান তার নিজের পথ বেছে নেয়। সবাই পর হতে থাকে। সারাদিন খেটে যে সংসারটি আগলে রেখেছেন তার বিনিময়ে কি পাচ্ছেন? না আমি বলছি না, সংসার ধর্ম ত্যাগ করে স্বাধীনচেতা বা বিপরীত হতে। তবে নিজের প্রতি যত্নশীল না হওয়াটা এক ধরনের দাসত্ব ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন শহুরে জীবনে সেই আগের কঠিন জীবন নেই। আমার জানা অনেক গৃহিণী আছেন সন্তান স্কুলে যাওয়ার পর ঘুম দেন। তারপর ঠিকা কাজের লোক এসে সব ঘুছিয়ে দিয়ে যায় তারপর কাজ করেন। আবার বাচ্চাকে স্কুল থেকে নিয়ে এসে খেয়ে দেয়ে আবার একটা শান্তির ঘুম। তারপর বিকেল থেকে সিরিয়াল দেখা শুরু। তারা একটা গল্পের বই পড়েন না বা গান শুনেন না। তারা শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ বা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কিংবা সেলিনা হোসেন পড়েন না। হা, আমি সবার কথা নয়, কিছু মায়েদের কথা বলছি। এদের সঙ্গে না তার সন্তানদের সখ্যতা গড়ে উঠে না, স্বামীর বা তার পরিবারের। আমাকে ভুল বুঝবেন না, আমি সবার কথা বলছি না। অনেকেই আমরা বাচ্চাদের পেছনে সময় দেই। তাদের যত্নে লালন করি। বাচ্চার সিকিউরিটির কথা ভেবে বা স্কোপের অভাবে কাজ করি না; কিন্তু সময়টা নস্ট করি না। অনেকেই এখন লিখা লিখি করেন। তাদের একটা নিজস্ব পরিমন্ডল আছে; আছে নিজস্বতা। তাদের সুন্দর উপলব্ধিময় লিখা বা ভালোবাসার কাব্য পড়ে মনটা জুরিয়ে যায়। তারা তাদের ভেতরের আমিকে আবিষ্কার করতে জানে এবং মুল্যায়ন করতে জানে। আবার অনেকেই আছেন যৌথ পরিবারের ঠেলা সামলাতেই জীবনপাত। সন্তান, দেবর, ননদ বা শ্বশুর-শাশুড়ি আর তাদের খেদমত করতেই জীবন শেষ। তার স্বামী বা শাশুড়ি বা তার সন্তান কেউই তার খবর রাখে না। কিন্তু নিজের খাবারটা সময়মতো আমি কেন খেয়ে নিব না? আমার স্বামীর বা সন্তানের পছন্দের খাবার আমি তাদের জন্য শুধু সাজিয়েই রাখব তাই বলে কি নিজের পছন্দের কোনো খবর নিব না। নিজের অধিকার ছেড়ে দিতে দিতে একটা সময় তিনি ভুলেই যান আসলে কি হওয়ার ছিল। আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আপনি অসুস্থ হলে বা অপুষ্টিতে ভুগলে কারো বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা হবে না। হাজার হাজার উদাহরণ আছে খুব অল্প বয়সে বিধবা মা তার সন্তান নিয়ে জীবন পার করে দেন। কিন্তু হাতে গুনে দু-একটি বের হবে এমন স্বামী যিনি তার সন্তান নিয়ে জীবন পার করেছেন। \হছোট বেলায় মাকে দেখতাম ভালো খাবার সবাই একসঙ্গে খেতে পারব তবুও নিজে খেতেন না এই ভেবে তার স্বামী বা সন্তান আবার খাবে। এটাই নাকি নারীর চিরাচরিত ধর্ম। কিন্তু নিজেকে সারাজীবন শুধু বঞ্চিত করে যাব কেন? সন্তান কিন্তু না খেয়ে পরবর্তী সময়ে মায়ের জন্য খাবার বাঁচিয়ে রাখে না। এমন মায়ের চেহারা থাকে ফ্যাকাশে কপালে অল্প বয়সেই পড়ে ভাঁজ। ষোলো কলা পূরণ তখন। হয়তো তার স্বামীটি থাকে দেখতে ইয়াং। কারণ তিনি সবসময় পরিবারের ভালো জিনিসটা পান তাকে সন্তান গর্ভে রাখার মতো কঠিন কাজটি করতে হয় না। ছেলেদের শারীরিক গঠন এমন তারা চলিস্নশেও দিব্যি ফিট কিন্তু বেশিরভাগ চলিস্নশের নারী অযত্নে অবহেলায় পান বয়স্কা উপাধি। এভাবেই হিন্মন্যতার সূচনা। খাবার একটা বড় বিষয়। মায়েরা সংসারের সব হিসাব করতে করতেই নিজের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির কথা ভুলে যান। অথচ সন্তান জন্মদাত্রী মায়ের দরকার বেশি ক্যালসিয়াম আর ক্যালরি যুক্ত খাবার। তা না হলে হবে কোমর ব্যথা, হাতে পায়ে ব্যথাসহ নানা জটিলতা- যা তাকে অল্প বয়সেই বৃদ্ধা বানিয়ে দেবে। মায়ের অযত্ন অবহেলায় তার শরীর তিলে তিলে ক্ষয়ে যেতে থাকে। আর তার যত্নে পতিজি থাকেন শক্ত সবল আর সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী। অথচ একটু নিজের প্রতি যত্নবান হলে ক্ষতি তো নেই। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওই খেলাটা একটু না হয় খেলি। জিজ্ঞেস করি আমি দেখতে কেমন আয়না? নিজের দিকে তাকিয়ে একটু হাসি। তারপর যত্ন করে নিজের কফিটা বানাই। মাঝে মাঝে নিজের জন্য গান বাজাই। নিজেই নিজেকে উপহার পদই। নিজেকে প্রেজেন্টেবল রাখা স্মার্টনেসের অংশ। আমার নানি একটা সময় পর কুঁজো হয়ে চলতেন। শুনেছি নয়টি সন্তান জন্ম দিয়েছেন কিন্তু নিজে যত্ন নিজেও করেননি আর পরিবার তো করেই না। তার কাছেই শুনেছি বিরাট সংসার রাখাল বাড়ির আশ্রিতা সবার জন্য অনেক রান্না হতো। তার তদারকি করতেই তার সময় চলে যেত। মাঝে মাঝে খেতেই ভুলে যেতেন। আর সন্তান জন্ম নেয়ার পর মাত্র ৩০ দিন পেতেন ভারী কাজ থেকে অব্যাহতি। আবার এই নানি-দাদিরাই পরবর্তী সময়ে অন্য একটি মেয়েকে যে কিনা ছেলের বউ বা ভাবী উদাহরণ দিবে আমাদের সময় আমরা কত কাজ করতাম বা তোমার এত খাই খাই স্বভাব কেন? পরিবারের সবাই খেয়ে নিবে তারপর তুমি......! মোটকথা আমি আমাকে ভালো না বাসলে অন্যদের কাছে আশা করি কিভাবে? তাই সবার আগে আমি আমার। আমার ভালো খেয়াল আমি না রাখলে কে রাখবে। তাই আমরা আমাদের কথা ভাবি। এই জীবনটা অনেক বড়। তাই নিজেকে ভালোবাসো নিজের জন্য করো একটুখানি। নিজে অসুস্থ হয়ে বা বয়সে স্বামীর চেয়ে ছোট হয়েও বয়স্কা উপাধি নেয়ার মাঝে কোন কৃতিত্ব নেই। আমরা মেয়েরা অনেকেই কেন জানি কারো ছত্রছায়া না হলে ভীষণ কষ্টে থাকি। হা একাকিত্ব বা একা জীবনটা অনেক কঠিন। আমি আমার পরিচিত সুপ্রতিষ্ঠিত বা উচ্চপদস্থ নারীকে দেখেছি কেন তার স্বামী তার সঙ্গে নাই বা কেন তার প্রিয় মানুষটি তার সঙ্গে নেই তার জন্য হা হুতাশ করতে। ফেসবুকে একের পর এক স্ট্যাটাস দিয়ে থাকেন তার কষ্টকর জীবনের তার নিঃসঙ্গতার করুণ কাহিনীর ইতিবৃত্ত। হঁ্যা, একাকী জীবন কারোই কাম্য নয়। এটা এক ধরনের দুর্ভাগ্যও বলা যেতে পারে। কিন্তু জীবনে এই অবস্থার মোকাবেলা কাউকে না কাউকে করতে হতেই পারে। যদি তেমন দিন আসে কেন নয় এভাবে ভাবি..................... \হনিজেকে দেখা আর নিজেকে ভালোবাসা /সময়টা শুধুই নিজের জন্য... /নিজের সঙ্গে নিজের কথা। \হনেই কারো আবদার বা নেই কোনো বাধ্যবাধকতা/ আছে শুধুই স্বাধীনতা নেই কোনো প্রতিবন্ধকতা। একা থাকলে যখন খুশী প্রিয় বইটি পড়া/ না হয় গলা ছেড়ে প্রিয় গানটি গাওয়া। একা থাকলে ভাবনাগুলো প্রজাপতির মতো মেলে পাখা / হয় কল্পনায় প্রিয় মানুষটির সঙ্গে দেখা। মনের জগৎ খুলে দেখো সব ব্যাকুলতা।/ একা একা নেই কোনো দ্বন্দ্ব, নেই হিংসা বা বিদ্বেষ।/ একাকিত্বে একাকার শুধুই ভালোবাসা অনিমেষ।।