উদ্যোক্তা নারীর প্রেরণা : ড. নাদিয়া

নারী ক্ষমতায়নের পূর্বশর্ত নারীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা। এ জন্য প্রয়োজন নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি। তবে পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে এখনো অনেক নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠা কিংবা ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাচ্ছে। শহরাঞ্চলে এমন চিত্র যেমন ভূরি ভূরি, নারী অগ্রসরতার ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধার অভাব আর সামাজিক অসহযোগিতার চিত্র তেমনি গ্রামাঞ্চলেও কম নয়। অথচ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এমন হাজারো প্রতিভা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে দেশজুড়েই। লুক্কায়িত প্রতিভার দুরন্ত বিকাশে কাজ করবে উদ্যোক্তা নারীদের সংগঠন উইমেন এন্ট্রারপ্রিনিওর্স নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (ওয়েন্ড)। কথা হচ্ছিল সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. নাদিয়া বিনতে আমিনের সঙ্গে....

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯, ১৩:১২

ইমদাদ হক
ড. নাদিয়া বিনতে আমিন
সংগঠনের যাত্রা শুরুর ব্যাপারে ড. নাদিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন নারী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, সবাই নারী উদ্যোক্তাদের কল্যাণে কাজ করার প্রতিশ্রম্নতি দেয়, চেষ্টাও করে। কিন্তু একটা সময় টিমওয়ার্ক গড়ে উঠে না। আমি অনেক সময় নিজের পয়সা দিয়ে মেয়েদের টিকেট করে দিয়েছি, কখনো হোটেল ভাড়া, ট্রান্সপোর্ট খরচ দিয়েছি। কিন্তু এভাবে তো হয় না। একটা মেয়েকে ব্যক্তিগতভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার বিকল্প নেই। তখন থেকে ভাবতাম মেয়েদের এসব চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবেলা করা যায়। আবার, আমি যখন ব্যবসা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান শুরু করি, তখন পদে পদে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। আমার মনে হয়েছে, স্বাভাবিকভাবে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, তার সঙ্গে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলে। এমন অবস্থায় নারী উদ্যোক্তাদের সাপোর্ট ও প্রমোট করার উদ্দেশ্য নিয়ে এ সংগঠন করা। এমন অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নারীদের উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগী হতে পারে। তা থেকেই ওয়েন্ডের যাত্রা। ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স, বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদন, তহবিল সংগ্রহ, ব্যাংক ঋণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে রাজধানী থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নারীদের সহযোগিতা করবে এই সংগঠন। ড. নাদিয়া বিনতে আমিন বিয়াস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী। দায়িত্বে রয়েছেন বেস্ট লাইফ ইন্সু্যরেন্সের পরিচালক ও তারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবেও। কাজ করছেন আরসিএসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবেও। এর আগে উইমেন এন্ট্রারপ্রিনিওর্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ব্যবসায়িক কাজে ঘুরে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর নানান প্রান্ত। প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবেও একাধিক দেশে পদচারণা উদ্যোমী এই নারীর। পড়ালেখা শেষে বেশিরভাগ নারীই ভালো চাকরির প্রত্যাশা করেন। আপনি ব্যতিক্রম ভাবনা কিভাবে ভাবলেন? জবাবে ড. নাদিয়া বলেন, প্রায় তিন দশক আগে চারবন্ধু মিলে রিসার্চ অ্যান্ড কম্পিউটারিং সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড (আরসিএস) নামে একটি গবেষণা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করি। পরে দুজন চলে গেল, রয়ে গেলাম আমরা দুজন। মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়ে আমরা একটি কম্পিউটার ধার নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করি। সেই যে শুরু। আগে গবেষণা সম্পর্কে কম মানুষেরই ধারণা ছিল। বিশেষত, গবেষণাধর্মী ক্যারিয়ার বিষয়ে ভাবনাটা ছিল ধারণার বাইরে। এটাও যে একটা উদ্যোগ, যা থেকে বিপুল পরিমাণ ব্যবসায়িক মুনাফা আসতে পারে, সেটাও বিশ্বাস করেনি অনেকেই। অথচ বৈজ্ঞানিক বা চিকিৎসা গবেষণার বাইরেও যে বড় ক্ষেত্র সামাজিক গবেষণা রয়েছে, তা এখন প্রমাণিত সত্য। আমরা কঠিন সেই চ্যালেঞ্জটাই গ্রহণ করেছিলাম। নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বিষয় হলো যোগ্যতা আর আত্মবিশ্বাস। ফেলে আসা সময় থেকেই নাদিয়ার মন্তব্য, পরিশ্রম আর ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। যেখানে প্রতিবন্ধকতা, সেখানে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। হয়তো সামাজিক সচেতনতার অভাবে নারীদের অগ্রসর কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে, সেটা সহজেই উত্রানো সম্ভব। দৃঢ় প্রত্যয় থাকলে বাধার জায়গা থেকেই সহযোগিতা আসতে পারে। এসব ক্ষেত্রে পুরুষরাও ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন। তাদের সহযোগী মনোভাব নারীকে সমাজে প্রত্যয়ী নারীদের প্রতিষ্ঠিত হিসেবে দাঁড়াতে কাজ করছে।