সীতাকুন্ডে পাঁচ জয়িতার সাফল্য গাঁথা

জীবন সংগ্রামে অপ্রতিরোধ্য নারী। প্রতীকী নাম জয়িতা। কেবল নিজের অদম্য ইচ্ছাকে সম্বল করে চরম প্রতিকূলতাকে জয় করে জয়িতারা তৃণমূল থেকে সবার অলক্ষ্যে সমাজে নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন। অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী নারী, সফল জননী নারী, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী ও সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী- এমন ৫টি ক্যাটাগরিতে সাহসী নারীকে 'জয়িতা' সম্মাননা দিতে মনোনীত করেছে সীতাকুন্ড উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়।

প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

সবুজ শর্মা শাকিল
জীবন সংগ্রামে অপ্রতিরোধ্য নারী। প্রতিকী নাম জয়িতা। কেবল নিজের আদম্য ইচ্ছাকে সম্বল করে চরম প্রতিকূলতাকে জয় করে জয়িতারা তৃনমূল থেকে সবার অলক্ষ্যে সমাজে নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন। অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী নারী,সফল জননী নারী,শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী,নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী ও সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী এমন ৫টি ক্যাটাগরিতে সাহসী নারীকে 'জয়িতা'সম্মাননা দিতে মনোনিত করেছে সীতাকুন্ড উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়। জানা গেছে,অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী নারী রুবি আক্তার সীতাকুন্ডের মুরাদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ রহমতনগর এলাকার কুতুব উদ্দিনের স্ত্রী। বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় বড় বোনের বিয়ের সময় তিন লক্ষ টাকা ঋণ নিতে হয়। বোনের বিয়ের পর দূর্ঘটনায় আহত হয়ে বাবা পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এসময় বড় ভাই বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। কিন্তু রুবি বাবার ঋণের পাশাপাশি পরিবারের বোঝা কাঁধে তুলে নেয়। রুবি কাপড়ের ব্যবসার পাশাপাশি সেলাই কাজ শুরু করেন এবং বোনদেরও সেলাই কাজ শেখান। এরপর নিজ উপার্জনে বাবার ঋণ পরিশোধের পাশপাশি ছোট বোনদের বিবাহ দেন। পরিবারের ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত হয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী রুবি নিজেও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। সফল জননী নারী আয়েশা খাতুন উপজেলার বাড়বকুন্ড ইউনিয়নের হাতিলোটা এলাকার মৃত গণি আহম্মদের স্ত্রী। ২০০১ সালে স্বামীর মৃতু্যর পর ৬ ছেলে মেয়ে নিয়ে নিদারুন কষ্টে পড়তে হয়। কিন্তু সংসারের সকল প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে ৬ ছেলে মেয়েকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলেন তিনি। সন্তানরা নিজেদের একগ্রতা ও চেষ্টার পাশাপাশি তার অনুপ্রেরনায় স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে তার সাফল্য অনুপ্রানিত হচ্ছে এলাকার অনেকে। শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জণকারী নারী মেহেরুন ন্নেছা সীতাকুন্ডের জাফরনগর এলাকার মৃত হেদায়েত উলস্ন্যাহ কন্যা। কারখানায় বাবার কাজ বন্ধ হওয়ার পর পরিবারে আর্থিক দূর্দশা নেমে আসে। এসএসসি পাশের পর পরিবারের হাল ধরতে সেলফ এম্পয়মেন্ট প্রতিষ্ঠান থেকে সেলাই,বুটিকসের কাজ শেখার পর সেই প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ শুরু করেন। টানা চার বছর চট্টগ্রামসহ সীতাকুন্ডের বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষন কেন্দ্র কাজ করে সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি সফলভাবে এইচ এসসি পাশ করেন। কিন্তু ১৯৯৯ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বাবার মৃতু্য এবং ২০০১ সালে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হওয়ারর পর সংসারে আবারও অভাব নেমে আসে। এরপর বেসরকারী একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি বহু কষ্টে ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে বিএ পাশ করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি কম্পিউটার প্রশিক্ষন নিয়ে অবসরে ঘরে বসে কম্পিউটারের কাজ করেন তিনি। এতে তার স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি পরিবারের সকলের মুখে হাসি ফুটাতে সক্ষম হন তিনি। অন্যদিকে নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা নারী হাছিনা বেগম সীতাকুন্ডের দক্ষিণ ইদিলপুর এলাকার নুরুল আজিমের স্ত্রী। বিয়ের পর যৌতুকের দাবিতে হাসিনার উপর তার স্বামী অমানুষিক নির্যাতন চালাতেন। স্বামীর নির্যাতনে বাধ্য হয়ে বাবার কাছ থেকে দু'বার ৪০ হাজার টাকা এনে দিতে হয় হাছিনাকে। কিন্তু এরপরও স্বামীর অব্যাহত নির্যাতনে বাবার বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হয় হাছিনা। এরপর স্বামী ডির্ভোস দিলে দুই মেয়ে নিয়ে কষ্টে পড়েন হাছিনা। কিন্তু জীবন সংসারে আত্নপ্রত্যয়ী নারী হাছিনা বাড়ি বাড়ি টিউশন করে দুই মেয়েকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলেন। তার একটাই স্বপ্ন তার দুই মেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নারী নির্যাতন রোধে ভূমিকা পালন করবে। সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখা নারী সালেহা বেগম সীতাকুন্ডের পশ্চিম লালানগর এলাকার মৃত আলী আজমের স্ত্রী। তিন মেয়ে ছোট থাকাকালে স্বামীর মৃতু্য হয়। এতে আর্থিক কষ্টে সংসারে টানপোড়ন শুরু হয়ে যায়। মেয়েদের পড়ালেখার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে ব্রাক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন সালেহা। জীবনের সকল প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে তিন মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। এছাড়াও শিক্ষকতাকালে বিনা বেতনে গ্রামের দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েকে শিক্ষা দান করেন। জ্ঞানের আলো দানের মাধ্যমে গ্রামের অনেক মাদকাসক্ত মানুষকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করেন।