হেরে যাননি রাহেলা বেগম

প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

রহমান মলিস্নক
রাহেলা বেগম। জীবন যুদ্ধে জয়ী এক সংগ্রামী নারী। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বড় আমাদিয়া গ্রামের রাস্তার ধারে বসে নিপুণ হাতে তৈরি করছেন বাঁশের তৈরি ঝাঁকা। নিত্যপণ্য আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহৃত হয় এই ঝাঁকা। হাতের কাজ তার নিখুঁত। কাজটি করছেন খুব স্বাচ্ছন্দ্যে। আশপাশের সবার সঙ্গে কথা বলছেন, হাসি তামাশা করছেন অথচ বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন। যেন কোনো কষ্টই হচ্ছে না তার। পাশের একজন ব্যবসায়ী ওই কাজের জন্য মুলিবাঁশের চটা বানিয়ে দেন। আর তিনি ওই চটা দিয়ে নিপুণ শিল্পীর মতো বুনতে থাকেন এক একেকটি ঝাঁকার বুনন। নাওয়া খাওয়ার সময় বাদে দিনের প্রতিটা সময় কাটে ঝাঁকা তৈরির কাজে। তার কাজটা যেমন পরিপাটি, তার জীবনটাও তেমনি পরিপাটি। বছর চারেক আগে মারা গেছেন তার কৃষক স্বামী। কিন্তু তাতেও তিনি দমে যাননি। বাঁশের তৈরি জিনিস ও তৈজসপত্র বানিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। পঞ্চাশোর্ধ এই নারী এরই মধ্যে দুটো মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। মেয়েরা আলস্নাহর রহমতে ভালো আছেন বলে জানান তিনি। একটা ঝাঁকা তৈরি করে কয় টাকা পান জিজ্ঞেস করতেই মৃদু হাসি দিয়ে বলেন, পাঁচ ট্যাকা। এতে পোষায় আপনার? কি করুম আর, এ দিয়েই চলি। প্রতিদিন তিনি ২০/২৫টি ঝাঁকা তৈরি করেন। থাকার মতো ছোট্ট একটি ঘর। সংসারে আর কেউ নেই। প্রতিবেশীর সঙ্গে যেন একই পরিবারের হয়েই বসবাস করেন। অল্প আয়েই ডাল ভাত খেয়ে বেশ দিন চলে যায়। তার অভাব নেই। চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ নেই। কথাবার্তায় তার জড়তা নেই, কোনো সংকোচ নেই। আশপাশের মানুষগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ক হৃদ্যতার। সেই জসীম উদ্‌দীনের কবিতার মতোই 'থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর'। কথা হলো রাহেলা বেগমের ভাতিজা সম্পর্কের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রিপন মিয়ার সঙ্গে। তার পাশাপাশি বসে ঝাঁকা তৈরির চটা বানিয়ে চলছেন। তিনি ঝাঁকা তৈরির কাজটি করান চাচি রাহেলা বেগমকে দিয়েই। পাশাপাশি বাড়ি। রিপন মিয়া ঢাকার পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেন তার তৈরি পণ্য। এই কেনাবেচা হয় পাশের কালসি বাজারে। রিপন মিয়া এক সঙ্গে কয়েকশ' ঝাঁকা বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। ব্যবসা কেমন চলছে জানতে চাইলে রিপন মিয়া জানান, খারাপ না। সংসার ভালাভাবেই চইল্যা যায়। রাহেলা বেগম সারা বছর ঝাঁকা তৈরির কাজটা করেন। তাকে বসে থাকতে হয় না। পাইকাদের অর্ডার অনুযায়ী মাঝে মাঝে কাজের চাপ বেড়ে যায়। তখন দিনরাত কাজ করেন। তার মতে কাজ জানলে মানুষের কোনো সমস্যা হয় না। নিয়মিত কাজ করেন বলে অল্প আয় সংসার চলে যায়। তা ছাড়া তার সংসারের ব্যয়ও কম। ঘরকন্যার কাজের পাশাপাশি তিনি কাজ শিখেছেন বলে জীবনের দুর্দিনে টিকে থাকতে পেরেছেন। তার এখন দুঃখ নেই, কষ্ট নেই, তিনি ভালো আছেন।