নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন

প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নন্দিনী ডেস্ক কোনো দেশের উন্নয়নের জন্য নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন একটি চাবিকাঠি। নারীর অংশগ্রহণ বাড়ালেই শুধু চলবে না, পরিমাণগত ও গুণগত উভয় দিক থেকেই নারীর উন্নয়ন প্রয়োজন। তবে, আশার কথা কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ আগের তুলনায় বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৫ কোটি ৪১ লাখ কর্মজীবী মানুষের মধ্যে ১ কোটি ৬২ লাখ নারী। প্রায় ১৬ হাজার ৭০০ নারী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা রয়েছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ৮০ শতাংশের বেশি নারী। সুতরাং বাংলাদেশ নারীর উন্নয়ন ও অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছে, কিন্তু পথটা অনেক লম্বা। দেশ-বিদেশের সব জায়গায় মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে বাংলাদেশি নারীরা সুনাম কুড়াচ্ছেন। সাধারণ পেশার বাইরেও বৈচিত্র্যময় ও চ্যালেঞ্জিং পেশায় অংশগ্রহণের ফলে দেশের গন্ডি পেরিয়ে নারীরা এখন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করছেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জরিপের ফল বলছে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের নারীরা এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এক দশক আগেও যেখানে দেশে নারীর কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণের হার ছিল খুবই কম, এখন নারী কর্মসংস্থানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। চ্যালেঞ্জিং প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনেও পারদর্শী নারী। এশিয়ার নোবেলখ্যাতর্ যামন ম্যাগসাসে পুরস্কার পেয়ে বাংলাদেশের নারীর কৃতিত্বকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করিয়েছেন 'বেলা'র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এআইজি আবিদা সুলতানা, যিনি ২০১৯ সালের পুলিশ সপ্তাহে প্যারেড কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দ্বিতীয়বারের মতো কোনো নারী কর্মকর্তা এ দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে প্যারেডে অংশ নিয়েছেন সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য। এর আগে বেশ কয়েক বছর পুলিশ সপ্তাহ প্যারেডে তিনি কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে ৪ বার এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে ৪ বার দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে বিশ্বখ্যাত নারী উদ্যোক্তার স্বীকৃতি পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক সুমাইয়া কাজী। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। বুয়েটের প্রথম নারী উপাচার্য হয়েছেন খালেদা একরাম। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জাতীয় সংসদেও প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে সফলভাবে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। নাজমুন আরা সুলতানা দেশের প্রথম নারী বিচারপতি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। এমনকি দীর্ঘ সময় পরে হলেও দেশের প্রথম নারী ডেপুটি গভর্নর হিসেবে নাজনীন সুলতানা নারী সমাজের কৃতিত্বকে আরও একধাপ বিস্তৃত করছেন। বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায় হতে শুরু করে সর্বত্র নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা এখনো বিদ্যমান। নারীর জন্য অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ সমমাত্রায় উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি। কর্মক্ষেত্রে পেশার বৈষম্য তীব্রভাবে বিরাজমান। উচ্চস্তরে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কিছুটা দূর হলেও প্রান্তিক পর্যায়ে এর তীব্রতা থেকে গেছে। প্রান্তিক নারীরা নানা রকমের বৈষম্যের শিকার। আমাদের দেশে সরকারি কর্মক্ষেত্রে ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয়া হয়। কিন্তু পুরুষের পক্ষ থেকে অনেক সময় এ নিয়ে আপত্তি তোলা হয় কিংবা নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। আমাদের অনুভব করতে হবে, সামাজিক প্রয়োজনের জন্য নারী মাতৃত্বকালীন ছুটি নিচ্ছেন। এটি তার সুযোগ নয়, বরং অধিকার। এ ছাড়াও সমাজে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য সরকারের নীতিমালা থাকলেও আশানুরূপ বাস্তবায়ন নেই। তাই প্রতিবন্ধী নারীরা আরও পিছিয়ে পড়ছেন। তাদের সামনে নিয়ে আসতে হলে প্রতিবন্ধীবান্ধব পরিবেশ, শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।