অপ্রতিরোধ্য মিরসরাইয়ে পাঁচ জয়িতার গল্প

অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী নারী, সফল জননী নারী, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী ও সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী এমন ৫টি ক্যাটাগরিতে সাহসী নারীকে 'জয়িতা' সম্মাননা দিতে মনোনিত করেছে মিরসরাই উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়

প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শাহিনূর ফেরদৌস
সবুজ শর্মা শাকিল জীবন সংগ্রামে অপ্রতিরোধ্য নারী। প্রতীকী নাম জয়িতা। কেবল নিজের আদম্য ইচ্ছাকে সম্বল করে চরম প্রতিকূলতাকে জয় করে জয়িতারা তৃণমূল থেকে সবার অলক্ষ্যে সমাজে নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন। অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী নারী, সফল জননী নারী, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী ও সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী এমন ৫টি ক্যাটাগরিতে সাহসী নারীকে 'জয়িতা' সম্মাননা দিতে মনোনিত করেছে মিরসরাই উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়। জানা গেছে, অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী নারী আমেনা খাতুন লাকি মিরসরাইয়ের বামনসুন্দর এলাকার মৃত নবিউল হকের কন্যা। তার বাবা নবিউল হক ছিলেন একজন বাদাম বিক্রেতা। বাবার সামান্য আয়ে অনেক কষ্টে চলতো তাদের সংসার। কিন্তু বাবার মৃতু্যর পর সংসারে অভাব আরো তীব্র আকার ধারণ করলে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে মায়ের সঙ্গে কাজ করেন লাকি। তারপর সেলাই কাজ শেখার পাশাপাশি গার্মেন্টস কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন। ধীরে ধীরে সংসারের অভাব দূরীকরণের পাশাপাশি আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসে লাকির জীবনে। সফল জননী নারী সালেহা বেগম মিরসরাই দক্ষিণ দুর্গাপুর এলাকার ওয়াজি উলস্ন্যার স্ত্রী। তিন সন্তানের জননী সালেহা বেগমের দাম্পত্য জীবনে স্বামী, শ্বশুরের নির্য়াতন সহ্য করতে হয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের প্রচেষ্টায় হাঁস, গরু পালন করে সন্তানদের ভরনপোষণ ও লেখাপড়া শিখিয়ে সাবলম্বী করে তুলেন। বর্তমানে নিজ নিজ অবস্থানে সুপ্রতিষ্ঠিত ছেলেমেয়েকে নিয়ে সুখে আছেন তিনি। শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী আজিজা খানম রুপা মিরসরাইয়ের করেরহাট এলাকার আতাউল কবির সিরাজের স্ত্রী। যিনি বর্তমানে চাকরির পাশাপাশি সমাজসেবক ও সংগঠক হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। সফলতা অর্জনের আগে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয় রূপাকে। সংসারে বাবা মায়ের মতবিরোধ, পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বে কোণঠাসা হয়ে পড়ে রূপাদের পরিবার। একপর্যায়ে সম্পত্তি বিরোধে রূপার ওপর সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেয় তার বড় মা। এতে বাধ্য হয়ে বাড়ির বাইরে অবস্থান নিয়ে নিজ প্রচেষ্টায় এসএসসি, এইচএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম শহরে এসে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়। জীবন চলার পথে অনেক ঘাত, প্রতিঘাতকে উপেক্ষা করে বর্তমানে বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত আছেন রূপা। চাকরির পাশাপাশি বেকার মেয়েদের আয়ের জন্য চালু করছেন টেইলারিং এবং স্পোকেন ইংলিশ প্রজেক্ট। এক সময় শ্বশুর পরিবারে রূপার গুরুত্ব না থাকলেও আজ সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তিনি। জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্নে বিভোর; রূপা হাল না ছেড়ে এগিয়ে যাওয়ায় মিলেছে সফলতার দেখা। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা নারী শাহিনুর ফেরদৌস মিরসরাই দক্ষিণ সোনাপাহাড় এলাকার মৃত কামাল উদ্দিন চৌধুরীর কন্যা। দুই সন্তানের জননী শাহিনুরের পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর স্বামীর অব্যাহত নির্যাতনে দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি। এরপর স্বামী তাকে তালাক দিয়ে পুনরায় বিয়ে করেন। ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তায় দিশেহারা শাহিনুর নিজ পায়ে দাঁড়াতে সেলাই কাজ শিখেন। এরপর সেলাই কাজের মাধ্যমে অর্থ উর্পাজন করে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি লেখাপড়া শিখিয়ে সন্তানদের উপযুক্তভাবে গড়ে তুলছেন। সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখা নারী হাছিনা আক্তার মিরসরাই উপজেলার পশ্চিম মিঠানালা এলাকার সানাউলস্ন্যার স্ত্রী। হাছিনার বিয়ের চার বছর পর স্বামী নিখোঁজ হওয়ায় সন্তান নিয়ে দিশেহারা পরিস্থিতিতে পড়েন। এ সময় সংসারের হাল ধরতে সেলাই কাজের পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন তিনি। সন্তানের লেখাপড়া, ভরনপোষণের পাশাপাশি নিজ প্রচেষ্টাই আজ স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন হাছিনা। তিনি কাজের অবসরে শুরু করেন সমাজসেবামূলক কর্মকান্ড। এতে এলাকার জনগণের ভালোবাসায় টানা চারবার ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্যও নির্বাচিত হন।