সুগন্ধি পৃথিবী তোমার রক্ষার দায়িত্ব আমার

শিশুদের জীবনের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা এখন সময়ের দাবি। আর শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সর্বপ্রথম তার পরিবারকে। আপনার সন্তানের ব্যাপারে নিজে সতর্ক হোন এবং সন্তানকেও সতর্ক করুন। সন্তানকে ভালো ও মন্দ স্পর্শ সম্পর্কে ধারণা দিন। সন্তানের সঙ্গে ওপেন রিলেশন তৈরি করার চেষ্টা করুন, যেন আপনাকে সব কিছু বলতে পারে। সন্তানের প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর নজর রাখুন। তার জন্য কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ তা তার মস্তিষ্কে গেঁথে দিন।

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

মনিরা মিতা
"এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি \হনবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।" করি সুকান্তের এ কবিতার সঙ্গে যদি সভ্য সমাজের আধুনিক মানুষগুলো গলা মিলিয়ে বলতে পারতো পৃথিবীকে শিশুর নিরাপদ স্থান করে দেব তাহলে আজ নার্সারির শিশুদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে পস্নাকার্ড হাতে করে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না। বুকের ফাইলে জমে থাকা মানুষ হওয়ার মানবিক অনুভূতির প্রতিনিয়ত মৃতু্য হয় যখন দেখে আগামী সম্ভাবনার কর্ণধার, নির্মল নিষ্পাপ ফুলগুলো মানুষরূপী পিশাচের থাবায় ঝড়ে পড়েছে। লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায়। শিশুর প্রতি অমানবিক আচরণ দেখে। শিশুদের জীবনের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা এখন সময়ের দাবি। আর শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সর্বপ্রথম তার পরিবারকে। আপনার সন্তানের ব্যাপারে নিজে সতর্ক হোন এবং সন্তানকেও সতর্ক করুন। সন্তানকে ভালো ও মন্দ স্পর্শ সম্পর্কে ধারণা দিন। সন্তানের সঙ্গে ওপেন রিলেশন তৈরি করার চেষ্টা করুন যেন আপনাকে সব কিছু বলতে পারে। সন্তানের প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর নজর রাখুন। তার জন্য কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ তা তার মস্তিষ্কে গেঁথে দিন। আপনার শিশু যখন খেলতে যাচ্ছে, কোন ধরনের খেলা সে খেলছে তার ওপর নজর রাখুন। স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না এমন কারো সঙ্গে কোথাও আপনার শিশুকে যেতে জোরাজুরি করবেন না। দারুণ প্রাণোচ্ছল কোনো শিশু হঠাৎ নির্জীব হয়ে গেলে তাকে প্রশ্ন করুন। তার মনের অবস্থাটা পড়তে চেষ্টা করুন। 'প্রত্যেক নিঃশব্দতার একটি নিজস্ব শব্দ থাকে,' বুঝতে চেষ্টা করুন সেই শব্দকে। কোনো বিষয়ে নিজে নিশ্চিত না হয়ে সন্তানের হাতে তুলে দিবেন না, এমনকি বই দেয়ার আগেও নিজে পড়ে নিশ্চিত হোন তা আপনার শিশুর উপোযোগী কি না। বয়ঃসন্ধি পেরোচ্ছে এমন বাচ্চাকে সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে শিক্ষা দিন নয়তো সমাজ তাকে ভুলটা শিখিয়ে দেবে। কেবল নেটওয়ার্কে শিশু কোন চ্যালেনগুলো ভিজিট করছে তার ওপর নজর রাখুন। প্রয়োজনে হলে আপত্তিকর চ্যানেল কালো তালিকাভুক্ত করুন। সন্তানের বয়স ৬/৭ বছর হলেই তাদের গোপনস্থানসমূহ ঢেকে রাখতে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে শেখান। সতর্ক করে দিন যেন সেসব স্থান কেউ স্পর্শ করতে না পারে; নিষিদ্ধদের মধ্যে আপনিও আছেন। শিশুকে ঐ সব গান, মুভি, পরিবার বা ব্যক্তি থেকে দূরে রাখুন যা আপনার শিশুর মনের সৌন্দর্য নষ্ট করতে পারে। নিজের সন্তান, বিশেষ করে কন্যা সন্তানকে কারো কোলে বসতে দেবেন না। কন্যা সন্তানটি নবজাতক হলেও আপনার অনুপস্থিতিতে কোন পুরুষ আত্মীয়ের জিম্মায় দিবেন না। নিজের শিশু সন্তানকে নিজের অনুপস্থিতিতে কোন আত্মীয়ের বাসায় রাত থাকার অনুমতি দিবেন না। খুব বেশি প্রয়োজন হলে সঙ্গে আপনিও থাকুন। ছোট্ট শিশুরা নারী-পুরুষের পার্থক্য বোঝে না। এমনকি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত তাদের মধ্যে লজ্জা বোধ কাজ করে না সুতরাং একটি ছোট বাচ্চাকে বিষয়টি বোঝানো খুবই কঠিন। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে আমরা যেন একলিটারের বোতলে দুই লিটার পানি না ঢালি তাহলে পুরোটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। শিশুদের উপোযোগী করেই ব্যাপারটা বোঝাতে হবে। শিশু সন্তানকে ড্রাইভারের সঙ্গে স্কুলে পাঠাবেন না। মনে রাখবেন, আপনার জীবনের কোনো কাজই আপনার সন্তানের নিরাপত্তার চেয়ে জরুরি না। আর যদি সন্তানের জন্য এটুকু করতে না পারেন তবে সন্তান জন্ম দিয়েন না। শিশুদের নৈতিক শিক্ষা দিন, ধর্মীয় অনুভূতির শিক্ষা দিন যেন তারা সমাজের নোংরা গর্তে থেকে দূরে থাকে। আমরা যদি আমাদের আচার আচারণের মাধ্যমে ওদের মধ্যে নৈতিকতাবোধ তৈরি করে দিতে পারি তাহলে ওই নৈতিকতাবোধ ওদের নিয়ন্ত্রণ করবে, পাহারা দেয়ার কোনো প্রয়োজন হবে না। সন্তান একটু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে বোঝান পরিবারের গুরুত্ব, অনুশাসন, বন্ধন ইত্যাদি। ঘুড়ি ততক্ষণ নিরাপদ যতক্ষণ লাটায়ে থাকে। ঘুড়ির সূতাই তাকে উঁচুতে টিকিয়ে রাখে, স্থির রাখে, নিচে পড়ে যেতে দেয় না। পরিবারিক বন্ধনহীন শিশুও বিনে সূতোর ঘুড়ির মতই! সুতা আর ঘুড়ির মিলিত বন্ধন যেমন আকাশে ঘুড়িকে দেয় ভারসাম্য তেমনি পারিবারিক বন্ধন ও শিশুর জীবনের উচ্চতায় উঠার এবং ভারসাম্য রক্ষার শক্তি জোগায়। সমাজের গোলক ধাঁধা থেকে আপনার সন্তানকে রক্ষার দায়িত্ব আর কেউ এসে নেবে না। একটুখানি অসচেতনতাই হতে পারে আপনার ফুটফুটে সন্তানের মৃতু্য ফাঁদ আর আপনার সারাজীবনের কান্না। শিশুর নিরাপত্তায় সমাজের দায়বদ্ধতাও অনেক কারণ একজন শিশু শুধু তার পরিবাইে নয়, সে বেড়ে ওঠে তার সমাজে। সমাজের কৃষ্টি ও কালচার নিয়ম-কানুন শিশুকে প্রভাবিত করে। শিশুদের গোপন স্বপ্ন থাকে। থাকে রহস্যঘেরা এক সুগন্ধি পৃথিবী। সে পৃথিবী যেন হলুদ পাতার মতো বির্বণ না হয়ে যায়, পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধে যেন প্রতিটি শিশু ভালোবাসা হয়ে দুলতে পারে আর তাই নাগরিক লেনে শ্বাস ফেলা বিষধর, মাংসাশী বন্যের থাবা থেকে আপনার স্বপ্নের কাঠামোকে রক্ষা করে মাথা তুলে দাঁড়ানোর নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব প্রধানত আপনারই।