উন্নয়নে নারীর শ্রম থাকলেও নিগ্রহের শিকার

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

নন্দিনী ডেস্ক
নারী শ্রমিকদের দুঃখগাথার শেষ নেই। যে কোনো কাজেই তারা বৈষম্যের শিকার। যেহেতু শিক্ষার হার কম সেহেতু পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় নারী শ্রমিকরাই প্রতিনিয়ত বঞ্চনা আর শোষণের শিকার। সমাজ কাঠামোর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনাচরণ, পারস্পরিক সম্পর্ক, মূল্যবোধ। সমাজ এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হওয়ার মাধ্যমে প্রতিনিয়তই বদলে যাচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের মাত্রা ও তার ব্যঞ্জনা। বাংলাদেশে বেশিরভাগ অঞ্চলে নারীশিক্ষার হার আনুপাতিক হারে কম হওয়ায় বিভিন্নভাবে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ অধিক মাত্রায় বিস্তৃত ও স্বীকৃত হয়েছে মূলত শ্রমিক হিসেবে। আর শ্রম দেয়ার ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে নির্মাণকাজেও নারীর অংশগ্রহণ উলেস্নখযোগ্য। ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত দরিদ্র পরিবারের গৃহবধূ থেকে শুরু করে ঘরের কিশোরী মেয়েরাও নারী শ্রমিক হিসেবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ভবন নির্মাণ-বিনির্মাণের কাজে নিজেকে যুক্ত রাখছে। কাজের এই ক্ষেত্রগুলোয় দেখা যায় নারীরা অধিকতর শ্রম দেয়ার পরও বৈষম্যের শিকার হয়ে পুরুষের তুলনায় কম মজুরি পাচ্ছে। উচ্চৈঃস্বরে প্রতিবাদ করার সাহসও নেই। প্রতিবাদ করলে অনেক সময় প্রাপ্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করা হয়। এসব শ্রমজীবী নারী কিছু বলতে পারে না বলেই তাদের অন্যায়ভাবে শোষণ ও অত্যাচার করা হচ্ছে। অথচ তারাই সারাদিন খাটুনির পর বাসায় গিয়ে আবারও সাংসারিক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। কিন্তু শ্রম হিসেবে নারীর শ্রমকে খাটো করে দেখার প্রবণতা আজও সেখানেই রয়ে গেছে। তার ওপর যোগ হয়েছে পারিবারিকভাবেও নির্যাতন। দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব, অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা, ধর্মীয় কুসংস্কার প্রভৃতি বিষয়কে দায়ী মনে করা হলেও নারী নির্যাতনের মূল কারণ আসলে নারী-পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক সম্পর্কের কারণে নারীর অধস্তন অবস্থান। প্রবল পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক মূল্যবোধ, বাজারমুখী রাষ্ট্রীয় দর্শন, দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাবের কারণে এ দেশের নারীর নিম্ন মর্যাদাই নারী নির্যাতনের পেছনে নিয়ামত হিসেবে কাজ করে। আমাদের সমাজব্যবস্থায় সব ধরনের আইন-কানুন প্রণয়ন-প্রয়োগ সবকিছুই বেশিরভাগ সময়ই পুরুষ লোক দ্বারা সম্পন্ন হয় এবং পুরুষতান্ত্রিক মনস্তত্ত্ব দ্বারা নির্মিত হয়। কাজেই সবকিছু প্রকারান্তরে পুরুষতন্ত্রেরই সাফাই গাইবে। যদি আমাদের দেশসহ এ অঞ্চলের অনেক দেশই নারী রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান দ্বারা পরিচালিত, তবুও এ অবস্থার কোনো মৌলিক পরিবর্তন হয়নি। তাই সময় এখন ঘুরে দাঁড়াবার। সামাজিক সচেতনতার জায়গাটিকেও জাগ্রত করতে হবে।