মধুপুরে আনারস-বেগুন চাষে দুই নারীর ভাগ্যবদল

প্রকাশ | ২২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
টাঙ্গাইলের মধুপুরে বেগুন চাষ করে সফলতা পেয়েছেন শাহিনুর বেগম
মো. নজরুল ইসলাম, মধুপুর (টাঙ্গাইল) থেকে টাঙ্গাইলের মধুপুরে আনারস এবং বেগুন চাষ করে ভাগ্যবদল করেছেন ফিরোজা ও শাহিনুর বেগম নামের দুই নারী। বাংলা-জার্মান সম্প্রীতি (বিজিএস) এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কৃষিকাজ করে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। শাহিনুর বেগম: উপজেলার নাগবাড়ী (পশ্চিমপাড়) গ্রামের আব্দুল জলিলের স্ত্রী শাহিনুর বেগম এখন অনেকের কাছে ঈর্ষণীয়। স্বামী-স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে এবং শ্বশুর-শাশুড়ির সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। তাকে আর পেছনে ফিরেও তাকাতে হয় না। পেছনের রহস্য খোঁজে জানা গেল, বেগুন চাষ করে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে তার ৭ সদস্য বিশিষ্ট সংসারে। কয়েক বছর আগেও স্বামী আব্দুল জলিল দিনমজুরের কাজ করে যা আয় করত তা দিয়ে সংসার চলত না। অর্থের অভাবে সংসার চালানো তার পক্ষে খুবই কষ্টের ব্যাপার ছিল। আব্দুল জলিলের পক্ষে এত বড় সংসার এবং ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগানো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। কিভাবে সংসারের সচ্ছলতা ফিরে আসবে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় শাহিনুর বেগম। তবে স্বামী-স্ত্রী মিলে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রবল ইচ্ছা ও চেষ্টা ছিল তাদের। চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও অর্থের অভাবে কোনো কিছু করতে পার ছিল না তারা। এমতবস্থায় বাংলা-জার্মান সম্প্রীতি (বিজিএস)-এর মধুপুর শাখার ক্রেডিট অফিসার হাদিউজ্জামান পাশে এসে দাঁড়ান। ২০১৭ সালের ওই সময় বিজিএসের সহায়তায় শাহিনুর বেগম সন্ধাফুল কেন্দ্রের সদস্য হয়ে প্রথমে ৩০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে শুরু করেন নিজের মতো কিছু করার, স্বল্প পরিসরে নিজের ভিটা জমিতে বেগুন চাষ শুরু করে সফলতার মুখ দেখা শুরু করেন। বছর শেষে মোটামুটি ভালো আয় হয় দেখে খুশি হয়ে; ২য় দফায় ৪০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে বেগুন চাষ করে সচ্ছলতার মুখ দেখেন। বর্তমানে বিজিএস থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে বেগুন চাষ আরো সম্প্রসারিত করেন। বর্তমানে সে এক একর জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। বর্তমানে ভালভাবে সংসার চালিয়ে তারা তাদের ছেলেমেয়েকে মধুপুর মাদ্রাসায় লেখাপড়া করাচ্ছেন। সাহস আর ইচ্ছা শক্তির বলে দারিদ্রকে জয় করে সংসারে এনেছে সচ্ছলতা। স্বামী আব্দুল জলিল জানান, তার ছিল অভাবের সংসার।এক সময়কার টানাটানি সংসারে স্ত্রীর ও তার যৌথ চেষ্টার ফলে সংসারের সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। তাদের ভাষ্যমতে, বেগুন বেচা টাকা দিয়ে তারা একটি বাছুরসহ গাভী ক্রয় করেন। বর্তমানে তাদের ২টি গাভী, ১টি ষাঁড় গরু ও ১টি বাছুর গরু রয়েছে। তাদের এখন বাৎসরিক গড় আয় প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। আলাপকালে শাহিনুর বেগম জানান, অভাবের কারণে ছেলেমেয়েদের দুবেলা খাবার খাওয়ানো কষ্ঠের ছিল। আর্থিক ঋণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে বাংলা-জার্মান সম্প্রীতি (বিজিএস) সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগিয়েছে। বাংলা-জার্মান সম্প্রীতি (বিজিএস) এর মধুপুর শাখা ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম জানান, বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়নে সহযোগী হিসেবে বে-সরকারি সংস্থাগুলো দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে মানুষের সার্বিক উন্নয়নে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলা-জার্মান সম্প্রীতি (বিজিএস) ও তার সে চেষ্টায় অবিচল। তিনি আরো বলেন, শাহিনুর বেগমকে অনুকরণ করে যদি সমাজের দরিদ্র মানুষগুলো আত্মকর্মমুখী হয় তাহলে সমাজের সাফল্য অনিবার্য। মধুপুর উপজেলা কুষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, বাড়ির গৃহিণীরা যদি বিভিন্ন সবজি চাষে উদ্যোগী হন, তবে তাদের কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। তারা যদি আমাদের পরামর্শ নিয়ে কৃষি কাজ করেন, তাহলে আরও লাভবান হবেন। ফিরোজা বেগম: মধুপুর উপজেলার লাউফুলা (উত্তরপাড়া) গ্রামের আবুল কালামের স্ত্রী ফিরোজা বেগমের আনারস চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। এখন স্বামী-স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে ভালো আছেন ফিরোজা। এখন তাকে আর পেছনে ফিরেও তাকাতে হয় না। পেছনের রহস্য খোঁজে জানা গেল, আনারস চাষ করে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে তার ৪ সদস্যবিশিষ্ট সংসারে। কয়েক বছর আগেও স্বামী আবুল কালাম দিনমজুরের কাজ করে যা আয় করত তা দিয়ে সংসার চলত না। অর্থের অভাবে সংসার চালানো তার পক্ষে খুবই কষ্টের ব্যাপার। আবুল কালামের পক্ষে এত বড় সংসার এবং ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগানো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। কিভাবে সংসারের সচ্ছলতা ফিরে আসবে, এ নিয়ে দুচিন্তায় পরে যায় ফিরোজা বেগম। তবে স্বামী-স্ত্রী মিলে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রবল ইচ্ছা ও চেষ্টা ছিল। তাদের চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও অর্থের অভাবে কোন কিছু করতে পার ছিল না। ২০১৭ সালের ওই সময় বিজিএসের সহায়তায় ফিরোজা বেগম পদ্ম কেন্দ্রের সদস্য হয়ে প্রথমে ২০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে শুরু করেন নিজের মতো কিছু করার। স্বল্প পরিসরে নিজের ভিটা জমিতে আনারস চাষ শুরু করে সফলতার মুখ দেখা শুরু করেন। বছর শেষে মোটামুটি ভালো আয় হয় দেখে খুশি হয়ে পরবর্তী সময়ে কয়েক দফায় ঋণগ্রহণ করে আনারস চাষ আরও সম্প্রসারিত করেন। বর্তমানে সে ১.৫ একর জমিতে আনারসের চাষ করে। বর্তমানে ভালোভাবে সংসার চালিয়ে তারা তাদের ছেলেকে মধুপুর কলেজে লেখাপড়া করাচ্ছেন। সাহস আর ইচ্ছা শক্তির বলে দারিদ্রকে জয় করে সংসারে এনেছে সচ্ছলতা। \হস্বামী আবুল কালাম জানান, তার ছিল অভাবের সংসার। এক সময়কার টানাটানি সংসারে স্ত্রীর ও তার যৌথ চেষ্টার ফলে সংসারের সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। বর্তমানে তাদের বাৎসরিক আয় প্রায় দুই লাখ টাকা। ফিরোজা জানান, অভাবের কারণে ভালো মতো দুবেলা খাবার খাওয়া তাদের খুব কষ্ঠের ছিল। ইতোপূর্বে আমাগো টিউবওয়েল ছিল না আমরা কুয়ার পানি পান ও ব্যবহার করতাম। কিন্তু বাংলা-জার্মান সম্প্রীতি (বিজিএস) আমাগো একটি বিনামূল্যে আর্সেনিক মুক্ত টিউবওয়েল (গোড়াপাকাসহ) নির্মাণ করে দেন এবং আর্থিক ঋণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে বাংলা-জার্মান সম্প্রীতি (বিজিএস) সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগিয়েছে। বাংলা-জার্মান সম্প্রীতি (বিজিএস) মধুপুর শাখার ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম জানান, বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়নে সহযোগী হিসেবে বে-সরকারি সংস্থাগুলো দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে মানুষের সার্বিক উন্নয়নে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলা-জার্মান সম্প্রীতি (বিজিএস) ও তার সে চেষ্টায় অবিচল। তিনি আরো বলেন, ফিরোজা বেগমকে অনুকরণ করে যদি সমাজের দরিদ্র মানুষগুলো আত্মকর্মমুখী হয় তাহলে সমাজের সাফল্য অনিবার্য।