রন্ধনশিল্প পরিচালিত করছে নারীর অগ্রগতি, করছে স্বাবলম্বী

প্রকাশ | ২২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

তানিয়া শারমিন
তাহমিনা সানি রান্নার জগতে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে। প্রায় ১০ বছর ধরেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে রান্নার প্রোগ্রাম করছেন রন্ধনশিল্পী তানিয়া শারমিন। স্বাদ ও স্বাস্থ্য অনুষ্ঠান নামে। এ ছাড়া অন্যান্য টিভি চ্যানেলেও রান্না প্রোগ্রাম করছেন নিয়মিত। রন্ধনশিল্পে অবদানের জন্য তিনি অর্জন করেছেন বহু পুরস্কার। সম্প্রতি অর্জন করেছে বাবিসাস অ্যাওয়ার্ড। রন্ধনশিল্প এবং একে কেন্দ্র করে বদলে যাওয়া নারীদের গল্প নিয়ে কথা হলো তার সঙ্গে- 'রান্না আসলে একটা আর্ট নয়, এর মধ্যে সায়েন্স ও আর্টসেরও প্রভাব বিদ্যমান। এর মধ্যে রসায়নও যেমন আছে তেমন স্বাস্থ্যগত ব্যাপারও। শুধু রান্না করলাম আর খেলাম তা নয়, রান্নায় পুষ্টিমান কেমন রাখতে পারছি, কোনটা স্বাস্থ্যকর কোনটা অস্বাস্থ্যকর এসব বিষয়গুলোও আসলে সবার জানা দরকার। পরিবারের পুষ্টিমান রক্ষায়ও এ দেশের নারীরা অনেক বড় একটা ভূমিকা পালন করছেন। বাংলাদেশের অনেকে এখন নারী রান্নাকে কেবল গৃহস্থালী কর্তব্য হিসেবে দেখছেন না। তারা এটা পারিবারিক অর্থোপার্জনের মধ্যে নিয়ে এসেছেন। সেই সঙ্গে দ্বায়িত্ববোধের জায়গাটাও করছেন শক্তিশালী। অনেক নারী এখন রান্না করেই স্বাবলম্বী। তাই এটা বাংলাদেশের মতো এশিয়াটিক কান্ট্রির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।' রন্ধনশিল্প সম্পর্কে এভাবেই বললেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় রন্ধনশৈলী ও টিভিমুখ তানিয়া শারমিন। তিনি আরো বলেন, 'রান্নাটা আসলে জানার ব্যাপার, শেখার ব্যাপার। আমার পরিবারের জন্য শুধু নয়, যে খাদ্য তৈরির যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমি পরিচালিত করছি তাতে স্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিষয়টি থাকছে কিনা সেটাও কিন্তু লক্ষ্য রাখা জরুরি। যে কারণে আমি রান্না নিয়ে লেখাপড়াও করেছি। অনেকগুলো কোর্স করেছি। বর্তমানে আমি আমার অর্জিত জ্ঞান সবার মাঝে বিলিয়ে দেয়া জন্য প্রশিক্ষণও করাচ্ছি। অনেক নারী উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন রান্নাকে পেশা হিসেবে নিতে। এটা আমার জন্য এটা বড় পাওনা।' অবাক করার মতো একটা বিষয়, রান্নাকে কেন্দ্র করে বর্তমানে চমৎকার একটি অর্থনৈতিক পরিমন্ডল পরিচালিত হচ্ছে। অনলাইন ভিত্তিক বহু খাবারের ওয়েব পেইজ পরিচালিত হচ্ছে যা থেকে নারীরা অর্থোপার্জন করতে পারছেন। এ ছাড়াও খাবার অল্প সময়ে দ্রম্নত পৌঁছে দেয়ার জন্য বাংলাদেশে বেশ কিছু পরিবহন প্রতিষ্ঠান আছে যা তাদের নিয়মিত খাবার সরবরাহকেও তরান্বিত করছে। ফলে তা প্রভাবিত করছে বাংলাদেশের নারী অগ্রগতি ও সামগ্রিক সমৃদ্ধি। এ সম্পর্কে তিনি বলেন- 'অনেক সুবিধাবঞ্চিত ও দুস্থ নারীকে আমি রান্না বিষয়ে ফ্রি প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সার্টিফিকেটও দিয়েছি। তারা এখন নিজেরাই স্বাবলম্বী হয়ে রান্নার প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন এবং তারা অর্থনৈতিক ভাবেও সচ্ছল। অনেকে রান্না সাপস্নাই দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, অনেকে ক্যাটারিংয়ের বিজনেস চালাচ্ছেন এবং আমি খুব খুশি এ নিয়ে। এভাবেই ফ্রি রান্নার প্রশিক্ষণ দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের পাশে থাকতে চাই আজীবন। রান্না নিয়ে আছে তার অনেক ভবিষ্যত পরিকল্পনাও। এ বিষয়ে তিনি বললেন- 'বাংলাদেশে রান্নাকে আমি একটি নতুন মাত্রায় দেখতে চাই। এবং এ নিয়ে যথেষ্ট শ্রম ও মেধা আমি দিতে রাজি। চাই রান্নার ক্ষেত্রটা যেন আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও প্রশংসা কুড়িয়ে আনে। বাংলাদেশের কুইজিনটা যেন সেখানে সম্মানজনক একটা জায়গা করে নিতে পারে সে প্রচেষ্টা আমার থাকবে। ভারতীয় বা অ্যারাবিয়ান কুইজিনগুলো যেমন সারা বিশ্বে সমাদৃত তেমনি চাই আমাদের বাংলাদেশের রান্নাও যেন সবার মুখে মুখে থাকে।'