শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধে জনসম্মুখে বিচার প্রয়োজন

প্রকাশ | ২২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রহিমা আক্তার মৌ ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে সারাদেশে ৩৯৯ জন শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জন ছেলে শিশু। ধর্ষণের পরে ১ জন ছেলে শিশুসহ মারা গেছে ১৬টি শিশু। ছয়টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ৪০৮টি সংবাদ বিশ্লেষণ করে উঠে আসে এই পরিসংখ্যান। প্রতি মাসে প্রায় ৬৭/৭০টি শিশু বা প্রতিদিন ২/৩টি শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে। এটা গণমাধ্যমে আসা তথ্যের ভিত্তিতে। এর বাস্তবতা আরো কত ভয়ানক তা ভাবা দূরের কথা, ভয়ে আঁতকে উঠছি প্রতিনিয়ত। জানি না, এই সংখ্যা আর কত হারে বাড়লে এই স্বাধীন দেশের উচ্চ পর্যায়ের টনক নড়বে। জানি না, এই সংখ্যা প্রতিদিন বা প্রতি মাসে কত হলে আমাদের আইনের ঘর থেকে মাকড়সার বাসা সরে গিয়ে নগদ বিচারের রায় কার্যকর হবে। আজ উপরের নির্দেশে যদি ১৫/২০টি ঘটনার দ্রম্নত বিচার হয়, জনসম্মুখে বিচার কার্যকর হয় তাহলেই বদলে যাবে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। একমাত্র আইনের কার্যকর পদক্ষেপই পারে শিশু ও নারী নির্যাতনের এই মহামারি থেকে জনগণকে রক্ষা করতে। সমাজের ভিন্ন পেশার কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়, উনাদের নিজেদের মতামত জানান। দীপু মাহমুদ (কথা সাহিত্যিক) 'আমি সায়েন্স ফিকশন লিখি। আগামীর কথা ভাবতে পারি খুব সহজে। আমার কল্পনা শক্তি অত্যন্ত প্রবল। গল্প লিখি। গল্পে শয়তান লোক থাকে। তারা যে মহাশয়তান তা কি লিখে বোঝাব ভাবি। কল্পনা করতে থাকি। একবারও মাথায় আসেনি, 'আমি ধর্ষণ করিনি। শয়তান আমাকে দিয়ে ধর্ষণ করিয়েছে' এমন কথা বলানো যায়। কিংবা ধর্ষণ করে কোরআন শরিফ ছুঁইয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেয়া যে, সে কারও কাছে ধর্ষণের কথা বলবে না। আমি বুঝে ফেলেছি আমার কল্পনা শক্তি নিতান্তই দুর্বল অথবা তারা কল্পনার চেয়ে অধিক শয়তান। আমার মতে এদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার পৃথক মামলা হওয়া উচিত। ধর্ষণের মামলায় খালাস পেলেও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় খালাস পাবে না। এ দেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলা বিরাট কঠিন।' রীতা আক্তার ( গৃহিণী) 'আমার দুটি ছেলে, তবুও আজকাল আতঙ্কে থাকি, ছেলে বা মেয়ে কোথাও তো নিরাপত্তা নেই। বাচ্চাদের সব আবদার কখনো কখনো মেটাতে পারি না, তবে বুঝিয়ে বলি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণ পাই কিন্তু সব সময় যাওয়া হয় না। কারণ বাচ্চাদের রেখে বাইরে তেমন বের হতে পারি না, কোথাও গেলে সঙ্গে নিয়ে যাই। ওদের সঙ্গে থাকি। চোখ কান তো খোলা রাখি তবুও ভয় লাগে। সব সন্তান নিরাপদ থাকুক এই দোয়া করি। একটা সন্তান জন্ম দিতে যেমন কষ্ট হয় তেমনি সন্তানের লাশ কাঁধে নেয়া সেটা আরো কষ্টের। আলস্নাহ সবার হেফাজত করুন।' জায়েদ হোসাইন লাকী (সম্পাদক, ত্রৈমাসিক সাহিত্য দিগন্ত) 'দেশে এখন রেপ ক্রাইসিস চলছে। চোখ খুললেই চারদিকে দেখি শুধু ধর্ষণের খবর। আমার এই নাজুক হার্টে এসব খবর আমি এখন আর নিতে পারি না। আমি যদি মেয়ে হতাম, তাহলে এতদিনে প্রকাশ্যে বা গোপনে আমিও হয়তো বা অসংখ্য বার ধর্ষিত হতাম নয়তো খুন হতাম। এ দেশে মেয়ে হয়ে জন্মানো পাপ! কারো ঘরেই যেন আর মেয়ে না হয়। একজন কন্যা সন্তানের পিতা হয়ে আমার এই দুঃখ কোথায় রাখি? আমি আমার কন্যাসন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে এতটাই চিন্তিত যে, আমি এ দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাই। হয় নারীদের নিরাপত্তা দেয়া হোক, নয়তো আমাকে এবং আমার দুটি কন্যাসন্তানকে অন্য দেশের ভিসা দেয়া হোক!' রুনা তাসমিনা (গল্পকার ও শিক্ষক) যারা নারীকে সম্মান করেন, সেই পুরুষদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি- 'না, কোনো মেয়ে এখন আর চিৎকার করবে না। কোনো মেয়ে কাঁদবে না। অপমানে কোনো মেয়ে আত্মহত্যা করবে না। এবার শক্তি পরীক্ষা হবে। জন্ম দেয়া কুলাঙ্গার ছেলেটিকে কুপিয়ে মারার জন্য রাম দা চালানো শিখবে। চোখ থেকে জলের বদলে আগুন ঢেলে দিয়ে ঝলসে দিতে শিখবে। আত্মহত্যা করবে বলে নিজের জন্য নিয়ে আসা রশি, ওষুধ সব ওই রক্তপিপাসু ছেলেদের জন্য ব্যবহার করতে শিখবে। ধর্ষক- বাবা, চাচা, প্রেমিক, রাস্তার লম্পট যে-ই হোক গলা টিপে ধরে তাকে মেরে ফেলতে শিখবে। কেন বলবো? চিৎকার করে কাঁদো মেয়ে? এখন জল শুকিয়ে গেছে চোখের। আমার জন্ম দেয়া পুরুষ আমাকেই খুন করবে, ধর্ষণ করবে, আমাকে পুতুলের মতো খেলনা বানিয়ে খেলবে! আমার বয়স নয় কি নব্বই দেখবে না! এখন আর প্রশ্ন নয়। এখন প্রতিশোধ। হঁ্যা। সে আমার সন্তান, আমার ভাই, আমার স্বামী, আমার বাবা। তো? কি হয়েছে? আমারই মতো আরেকটি মেয়ে শরীরকে যে সম্মান করতে জানবে না তাকে আমি চিনি না। সে আমার কেউ নয়। তার পরিচয় সে খুনি, সে ধর্ষক, সে প্রতারক। এই প্রতিজ্ঞা করো মেয়ে। দুনিয়া শক্তের ভক্ত, নরমের যম। যথেষ্ট করেছ। মা হয়ে জন্ম দিয়েছ, বোন হয়ে সান্ত্বনা দিয়েছ, স্ত্রী হয়ে পাশে থেকেছ সুখ-দুঃখে। এই মা-বোন-স্ত্রী নামের নারীর জাতকেই আজ যেমন ইচ্ছে তেমন নির্যাতন করবে? একজন পুরুষ যদি একটি পরিবারের কর্তা হতে পারেন, একদল নারী কেন কর্ত্রীর জায়গায় দাঁড়িয়ে একজন ধর্ষক, খুনির শাস্তি দিতে পারবে না?