মায়ের কোলেও কি শিশু অনিরাপদ?

প্রকাশ | ২৯ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মনিরা মিতা এক অস্থির সময় পার করছি আমরা। মানুষ এখন দিন দিন পাথরখন্ডে পরিণত হচ্ছে, বুকের ভেতর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, বিবেক, মমত্ববোধ, আন্তরিকতা, মানবিকতাহীনের নজিরবিহীন রেকর্ড গড়ে উঠছে প্রতিমুহূর্তে, প্রতিদিন। ঘরে-বাইরে সর্বত্রই- নারী ও শিশুরা অনিরাপদ হয়ে উঠছে। বিরূপ প্রভাব পড়ছে সামাজিক জীবনে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা ভরে ভরে খবর আসে মর্মান্তিক মৃতু্যর। টিভি চ্যালেনগুলো লাইভ টেলিকাস্ট করে ঘটনার পরিবেশ প্রতিবেশ জানিয়ে দেয় দর্শকদের। ফেসবুকে ঝড় উঠে নিন্দার। ভাইরাল হয় ভিডিও- তবুও কি থেমে আছে অন্যায় অবিচার আর হত্যাকান্ড? বিচার হচ্ছে না অন্যায়কারীদের তা বলব না, আসামি গ্রেপ্তার হচ্ছে, বিচার হচ্ছে তবুও থামছে না এসব কারণ ভেতর থেকে ক্ষয় হচ্ছে মানবিকতা প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি গুজব উঠেছে 'ছেলেধরা', বের হয়েছে দেশে আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা এক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গণপিটুনির এই তালিকায় বাকপ্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, উচ্চ শিক্ষিত নারী কেউ বাদ যাচ্ছে না। এই গুজবের কাছে আমরা কেউ নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারছি না। কখন কে-কাকে বলিরপাঁঠা বানায় কেউ জানে না। সম্প্রতি এক দম্পতি রাস্তায় ঝগড়া করে একে আপরকে ছেলেধরা বলার ফলে দুজনেই গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। হায় বিবেকবোধ! ৪ বছরের মেয়ে তুবাকে স্কুলে ভর্তি করানোর খবর নিতে গিয়ে নিজেই গণপিটুনির খরবে পরিণত হয়ে গেল তাসলিমা বেগম রানু। হঠাৎ ছেলেধরা অভিযোগ তুলে রানুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মানুষরূপী জানোয়ারগুলো। যে তুবার ভর্তির খোঁজ নিতে গিয়েছিল, সেই তুবা এখনও জানে না তার মা আর ফিরবে না। তাকে আর কোনো দিন আদর করবে না। গণপিটুনির ভিডিওটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক মারছে রেনুকে আর বাকিরা ভিডিও করছে। কেউ এগিয়ে আসেনি তাকে বাঁচাতে। উচ্চ শিক্ষিত সংগ্রামী এক নারীর ভাগ্যের নির্মম এ পরিণীতি মেনে নেয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? কিছু হুজুগে বাঙালি রানু ও তুবাদের স্বপ্ন মুহূর্তের নিঃশেষ করে দিল। গণপিটুনি থেকে বাদ পড়েনি বাকপ্রতিবন্ধী সিরাজ। ২০ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পাগলাবাড়ীর সামনে নিজের মেয়েকে দেখতে গেলে গণপিটুনিতে নিহত হয় সিরাজ। অথচ সিরাজ ১০০ টাকা ধার করে নিজের মেয়ের জন্য বিস্কুট, চিপস কিনে দেখা করতে গিয়েছিল সে। ছেলে ধরার অভিযোগ এনে বাকপ্রতিবন্ধী মানুষটিকে পিটিয়ে মাটিতে শুইয়ে লাথির পর লাথি মেরেই চলেছে উৎসুক জনতা। কোন সমাজে বাস করছি আমরা! বাস্তবতা বলছে, আইনের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা, গুজবে হুজুকে জনতার কান দেয়া এবং নৈতিক অবক্ষয় থেকে মানুষ হয়েও জীবিত আরেকজন মানুষকে পিটিয়ে হত্যার মতো জঘন্য কাজ করতে পারছে। যারা এসব করছে তারা মানুষ নামের কলঙ্ক। তারা নিজেরাও জানে না কত বড় অন্যায় তারা করছে। গণপিটুনিতে হত্যা বন্ধ করতে হবে অচিরেই, হতে হবে আইনের প্রতি আস্থাবান। অপরিচিত কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে তাকে আটকে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে। গণপিটুনির হাত থেকে নিজেকে রক্ষার স্বার্থেই তৈরি করতে হবে সচেতনতা। তা না হলে মহামারির চেয়েও ভয়াবহ হবে এই গণপিটুনি। প্রশ্ন এখন জাতির কাছে, কেন মায়ের কোলেও শিশু অনিরাপদ? রাস্তায় স্বাধীনভাবে মায়ের হাত ধরে হাঁটতে পারবে না কোনো শিশু? কখনো অভিমানে মায়ের হাত ছাড়িয়ে ছুটে যেতে চাইলে কিংবা কাঁদো কাঁদো মুখে বায়না ধরলেই সে মা ছেলেধরা! এ কোন ঘৃণ্য পাশবিকতায় মেতেছে আমাদের সমাজ?