সাফল্যের নেপথ্যে পরিশ্রম

প্রকাশ | ১৯ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

নালিতাবাড়ীর জাহানারা
নন্দিনী ডেস্ক মোছা. জাহানারা বেগমের বয়স ৩৫ বছর। তিনি পশ্চিম সমশ্চুড়া আইপিএম ক্লাবের একজন সদস্য। নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম সমশ্চুড়া আইপিএম স্কুলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। শিক্ষাগত যোগ্যতায় তিনি ৭ম শ্রেণি পাস। দারিদ্র্যের কারণে তিনি পড়াশোনায় বেশিদূর এগোতে না পারলেও আইপিএম প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর কৃষিক্ষেত্রে এগিয়েছেন অনেকদূর। বসতভিটায় সমন্বিত বাগান ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সবজি উৎপাদন, এডাব্লিউডি ও এসআরআই পদ্ধতিসহ অনেক আধুনিক পদ্ধতিতে ধান ও সবজি উৎপাদন করে তিনি এলাকার অনেকের অনুকরণযোগ্য এবং প্রশংসার পাত্রী হয়ে উঠেছেন। সেই সঙ্গে সংসারে ফিরিয়ে এনেছেন সমৃদ্ধি ও দূর করেছেন আর্থিক অনটন। আইপিএম স্কুলে প্রশিক্ষণ শেষে গৃহবধূ জাহানারা নিয়মিতভাবে কৃষি কাজে জড়িয়ে পড়েন। সমশ্চুড়া উঁচু এলাকা হওয়ায় সেচের পানির সংকটের কারণে তিনি সবজি চাষকেই প্রাধান্য দেন। তিনি তার বসতবাড়ির পাশে মাত্র ২০ শতাংশ জমি নিয়ে শুরু করেন মৌসুমি সবজির চাষাবাদ। এ ক্ষেত্রে তিনি প্রয়োগ করেন আইপিএম পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন প্রযুক্তি, সুষম সার বিশেষ করে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার, ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার, সাশ্রয়ী সেচ পদ্ধতিসহ তার ট্রেনিং লব্ধ সকল জ্ঞান। এ ক্ষেত্রে তার স্বামী তাকে উৎসাহ ও সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করেন। প্রতি মৌসুমেই তার উৎপাদিত বেগুন, কুমড়াজাতীয় ফসল (করলা, ঝিঙ্গা, লাউ, চালকুমড়া ইত্যাদি), পুঁইশাক, পাটশাক প্রভৃতি স্থানীয় বাজারসহ আশপাশের বাজারে বিক্রি শুরু হয়। আসে উলেস্নখযোগ্য মুনাফা এবং ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে তার জীবনমান। নতুন টিনের ঘর ওঠে এবং আসে বিদু্যৎ ও আধুনিক জীবনযাত্রার সামগ্রী। এই সাফল্যের নেপথ্য কথা জানতে চাইলে জাহানারা বলেন- 'আমি থামিনি। সকাল দুপুর খাটছি। পরিশ্রম করছি। এহন আমি চিন্তা মুক্ত। আর পিছন ফিরে তাকানোর দরকার নেই। এখন শুধু ভাবছি, দেশের সবাই যাতে ভেজাল মুক্ত খাবার খাইতে পারে। বিষমুক্ত খাবার খাইতে পারে।' জাহানারার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার অনেক কৃষানি কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আইপিএম এবং আইএফএমসি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বিষমুক্ত নিরাপদ ফসল উৎপাদন শুরু করে। আইএফএমসি প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ওই এলাকায় একটি বিজনেস স্কুল স্থাপন করা হলে জাহানারাসহ মোট ২৫ জন কৃষানি একত্রে বাজার সংযোগবিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে জাহানারার নেতৃত্বে শুরু হয় সমকালীন চাষাবাদ। কয়েকজন মিলে একত্রে একই জাতীয় ফসল উৎপাদনের এক অভিনব প্রক্রিয়া যার ফলে বীজ প্রাপ্তি, চাষ, অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা, ফসল সংগ্রহ ও বিপণন সহজতর হয়ে উঠে। বিপণন সহজতর করতে ও ন্যায্য দাম প্রাপ্তির কথা ভেবে তৈরি হয় ছোট ছোট কালেকশন পয়েন্ট। আইপিএম পদ্ধতিতে উৎপাদিত নিরাপদ ফসল কালেকশন পয়েন্টে নির্দিষ্ট দিনে জমা হয়; উৎপাদিত ফসল এখান থেকেই আড়তদাররা ন্যায্য দামে কিনে নিয়ে যান। এখন পশ্চিম সমশ্চুড়া এলাকার অনেক কৃষক পরিবারের জীবন ও জীবিকার মানের উলেস্নখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। জাহানারার মতো কৃষানি এবং আইপিএমের মতো আধুনিক ও নিরাপদ প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসল উৎপাদন পদ্ধতি দ্রম্নততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে নালিতাবাড়ীর অন্যান্য ইউনিয়নে।