গৃহশ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় প্রয়োজন সুস্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থানের নীতিমালা

প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সুফিয়া খন্দকার '১৪ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে গৃহকাজে নিয়োগ করা যাবে না বা কোনো গৃহকর্মীকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা যাবে না, গৃহকর্মীর নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বাড়ি তালাবদ্ধ করাও যদি হয় একটি চাবি তার কাছে রাখতে হবে। বয়স ও সামর্থ্যের সঙ্গে অসামঞ্জস্য বিবেচিত ভারী ও বিপজ্জনক কাজে কিশোর-কিশোরীদের নিয়োগ করা যাবে না। আমাদের দেশে সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা এসব নিয়ে চিন্তা করলেও, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং আমাদের ব্যক্তিগত সচেতনতা ও বিবেকপূর্ণ মানসিকতার অভাব বলে গৃহশ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও সুস্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থানের নীতিমালা কেবল টকশো আর খবরের পাতায়। দৈনন্দিন জীবনে এর প্রতিফলন হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত গৃহশ্রমিকদের কোনো নিবন্ধন বা পরিচয়পত্র নেই। গৃহশ্রমিকের দ্বারা কোনো ধরনের অহিতকর ঘটনা ঘটলে তখনই বলা হয় গৃহশ্রমিক রাখার আগে দাবি ও পরিচয় নিজস্ব থানায় জমা দেয়ার কথা। এখন পর্যন্ত তারও কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। এই কারণে মোট কতজন গৃহশ্রমিক কাজ করছে বা কে কোন ধরনের সমস্যায় আছে বা কার অনাকাঙ্ক্ষিত মৃতু্য হচ্ছে তার কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। গৃহশ্রমিকদের কাজের পাশাপাশি লেখাপড়ার কথা চললেও হাতেগোনা ২-৪ জন ছাড়া কেউ এমন সুযোগ গ্রহণ করতে পারছে না। বর্তমান ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন শহরগুলোয় অসহায় ঝরে পড়া পথশিশুদের শিক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই রাত্রিকালীন বলে গৃহশ্রমিকরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত তার মধ্যে ঢাকা শহরের বস্তিগুলো বারবার ভেঙে দেয়ার ফলে পথশিশুরা নিয়মিতভাবে এক জায়গায় বসবাস করতে পারে না বলে এ শিশুরা সুযোগও নিতে পারে না। গৃহশ্রমিকদের কাজ করার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই বলে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবিরাম কাজ করার ফলে তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গৃহকর্মী সংক্রান্ত দুঃখজনক ঘটনাগুলো জনসম্মুখে আসে আবার হারিয়ে যায়। অপরাধীরা আইনি ফাঁক দিয়ে বের হয়ে ঘুরে বেড়ায় খোলা আকাশের নিচে। তেজগাঁও এলাকার এক বাড়ির মালিকের বাসায় কাজ করত দিপালী। প্রতি মুহূর্তে অত্যাচার-নির্যাতন করা হতো। একদিন দিপালী বলে, আমার কাজ পছন্দ না হলে আমাকে পাঠিয়ে দিন। এমন কথা বলার অপরাধে গৃহকর্ত্রী গরম পানি ঢেলে দেয় দিপালীর গায়ে। ৫-৭ দিন ঘরে রেখে বাধ্য হয়ে দারোয়ানকে দিয়ে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয় চিকিৎসার জন্য। কিছুটা জানাজানি হলে বাড়ির মালিক পুরো পরিবার নিয়ে ২ মাসের জন্য নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। দিপালী মারা যায়। তবে এর তেমন কোনো বিচার হয় না। শুধু নির্যাতন নয়। যে কোনো বাড়িতে চুরি-ডাকাতি হলে সর্বপ্রথম দায়ী করা হয় গৃহকর্মী, দারোয়ান ও ড্রাইভারকে। এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। আইএলওর হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীতে প্রায় ৫ কোটি মানুষ গৃহশ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। তার মধ্যে বেশিরভাগ নারী। ২০১১ সালে ১ থেকে ১৭ জুন জেনেভায় অনুষ্ঠিত সংস্থায় শততম অধিবেশনে (নাম্বার ১৮৯) গৃহীত হয়। সেখানে বলা হয়, সপ্তায় ৪৩ ঘণ্টার বেশি কাজ করলেই তা ঝুঁকিপূণ। শিশু শ্রম বা গৃহশ্রমিকদের নিয়ে যতবারই আলোচনা হয়েছে সেখানে একটা কথা বারবার উঠে এসেছে, তাহলো শ্রমজীবী এসব গৃহশ্রমিকদের সাপ্তাহিক ছুটি প্রসঙ্গে কখনো ১ দিন আবার কোনো আলোচনায় ২ দিন ছুটির কথা উলেস্নখ করা হলেও খসড়া নীতির চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের পথ বন্ধ। সাধারণত সব চাকরিতেই সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছে। কোথাও ১ দিন কোথাও ২ দিন। কিন্তু গৃহশ্রমিকদের ক্ষেত্রে তা কেউ মানছে না। গৃহশ্রমিকদের স্বার্থে সপ্তাহে ১ দিন ছুটি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিঙ্গাপুর সরকার। তারা মনে করেন, ১ দিন ছুটি পেলে তারা তাতে আরামবোধ করবেন, মানসিক প্রশান্তি ভোগ করবেন, তার সঙ্গে সরকার ঘোষণা দেয় যদি কোনো মালিকপক্ষ ছুটির দিনে গৃহশ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে চান তাহলে তাকে অতিরিক্ত বেতন দিতে হবে। সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সাম্প্রতিক এক জরিপ করে জানিয়েছে, একজন গৃহকর্মী প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা কাজ করে। আর মাত্র ১২ শতাংশ সপ্তাহে ১ দিন ছুটি পায়। আমাদের দেশেও কর্মজীবী নারীর সংস্থা দিন দিন বাড়াছে। ফলে বাসায় সন্তান লালন-পালন, স্কুল নেয়া আনা ঘরের কাজ করার জন্য অনেকে গৃহশ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। সে হিসেবে গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রীকে বিবেচনায় রাখতে হবে যে গৃহশ্রমিকেরও ছুটি প্রয়োজন, নীতি নির্ধারণ করে কোনো আইনে বাস্তবায়ন করা সম্পূর্ণরূপে হয় না। প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেদের সচেতনতা অন্যের অসহায়ত্বের সুযোগ গ্রহণ না করা ঘর বা বাহিরে শ্রমিকের শ্রমকে মূল্য দেয়া প্রয়োজন।