মেয়ে তুমি: বিদেশে যাবে উচ্চশিক্ষায়!

উচ্চশিক্ষা একজন মানুষের জন্য প্রয়োজন। ছেলে বা মেয়ে যেই বিদেশে পড়তে যাক তার দৃষ্টি ভঙ্গির আমূল পরিবর্তন আসে। চিন্তাভাবনার প্রখরতা আসে, উদার হয় মন, কেননা, বিদেশে নানা সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে মিলে বিচিত্র অভিজ্ঞতার সঞ্চয় করে সে। মা-বাবাকে মনে রাখতে হবে, বিদেশ যাত্রা মানেই মেয়ে তাদের হাত ছাড়া হয়ে যাওয়া নয় বরং তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হওয়া। অনেক সময় পরিবার চাইলেও সমাজের নানা অসঙ্গতির কথা ভেবে তারা বাধা দেন।

প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মনিরা মিতা জীবনে পাওয়া না পাওয়ার অঙ্কটা বড়ই জটিল বন্ধনীতে আবদ্ধ, হিসাবের গরমিলে ঝাপসা জীবন। ধরণীর বুকে তমসার ইন্দ্রজালে বড় বেশি হারায় সুখের পায়রা। সময় গড়ায়, বয়স বাড়ে, তেলহীন ক্ষুদ্র প্রদীপ নিভু নিভু জ্বলে। একাকী মন নিস্তব্ধ শুধু বারবার গরমিলের গড় কষতে ব্যস্ত। মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়া আজন্ম পাপের হিসাব এত সহজে কি মেলে? কাছের মানুষগুলো যখন দূরের হিসাব মেলায় জীবন হয় তখন বিভীষিকাময়। প্রশ্নটা ওঠে যখন উচ্চশিক্ষার জন্য বিশেষ যাত্রা, তখন তো কোনো কথাই নেই। সমস্বরে সবার উত্তর 'না-না-না'। পরিবার থেকেই 'না' আওয়াজটার জন্ম হয়। অবোলা নারী ঘরের বাহির হয়ে লেখাপড়া শিখেছে এটাই অনেক বড় কিন্তু, একা একা বিদেশ গিয়ে লেখাপড়া করবে এটা কি সম্ভব! সবার অমতের বাইরে গিয়ে মেয়েরা কি একা কিছু করতে পারবে? যদি পরিবারের সদস্যরা সাহায্য না করে তবে কে এগিয়ে আসবে নারীর জীবন সাজাতে? মেয়ে বিদেশ যাবে শুনলেই যেন অভিভাবকদের চোখ কপালে উঠে। দেখা যায়, এ লেভেল বা ও লেভেল পাস করার পর আগ্রহ নিয়েই ছেলেটিকে বিদেশ পাঠাচ্ছেন বাবা-মা কিন্তু আপত্তি ওঠে স্নাতকোত্তর পাস করা মেয়েটির বেলায়। অনেক সময় মা-বাবা নিরাপত্তা হীনতার বোধ থেকে মেয়েকে বিদেশে পড়তে যাওয়ার ওপর নিষেধজ্ঞা আরোপ করেন। বিয়ের বয়স, মেয়েটা কবে না কবে ফেরে, কে আবার কী বলে, তাই আপত্তি তোলেন বাব-মা। শেষে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সম্মতি দিলেও শর্ত জুড়ে দেন। একা পড়তে যাওয়া হবে না। যেতে হলে বিয়ে করে স্বামীর সঙ্গে যেতে হবে অথবা প্রবাসী কোন ছেলেকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। একটা মেয়ের জন্য পৃথিবীটা চেনা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশ যাত্রা মানেই নতুন একটি জীবনের দিকে যাত্রা করা সে সময় বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করে তাকে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জের দিকেই ঠেলে দেয়া হয়। মা-বাবা যদি মেয়ের ওপর আরেকটু ভরসা ও বিশ্বাস রাখতে পারেন, তাদের সন্তানের মূল্যবোধের শিকড়টা যথেষ্ট মজবুত করে আগেই তৈরি করে দিতে পারেন, তা হলে মেধাবী মেয়েটিকে একা বিদেশে পাঠানো নিয়ে তারা একটুও চিন্তিত হবেন না। একটু সুযোগ পেলেই মেয়েটা সফলতার শিখরে পৌঁছাতে পারে, গর্বিত করতে পারে তাদের পরিবার ও দেশকে। সময়-সুযোগ থাকলে ছেলেরা যে কোনো সময় বিদেশ যেতে পারে। চাইলে বিয়ের পরের দিনেও যেতে পারে অথচ মেয়েদের বেলায় এসব শুধুই স্বপ্ন। মেয়েদের বিদেশে পড়তে যাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রথম বাধা আসে পরিবার থেকেই। বাবা-মা যেমনি চিন্তিত থাকেন সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে তেমনি দ্বিধায় থাকেন বিয়ের সময় এ নিয়ে কথা হবে কিংবা বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাবে এ নিয়ে। উচ্চশিক্ষা একজন মানুষের জন্য প্রয়োজন। ছেলে বা মেয়ে যেই বিদেশে পড়তে যাক তার দৃষ্টি ভঙ্গির আমূল পরিবর্তন আসে। চিন্তাভাবনার প্রখরতা আসে, উদার হয় মন, কেননা, বিদেশে নানা সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে মিলে বিচিত্র অভিজ্ঞতার সঞ্চয় করে সে। মা-বাবাকে মনে রাখতে হবে, বিদেশ যাত্রা মানেই মেয়ে তাদের হাত ছাড়া হয়ে যাওয়া নয় বরং তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হওয়া। অনেক সময় পরিবার চাইলেও সমাজের নানা অসঙ্গতির কথা ভেবে তারা বাধা দেন। আমরা মুখে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে হাজারও কথা বললেও এখনো আমাদের দেশের পরিবেশ পুরোপুরি নারীবান্ধব হয়নি। যেহেতু বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে সেহেতু বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে- যা চাকরি জীবনের তথা জীবনের বিভিন্নক্ষেত্রে কাজে লাগে। এ ছাড়া বিদেশে পড়তে গেলে অনেক নতুন নতুন কাজের সঙ্গে পরিচয় হওয়া যায় যেগুলো নিজের দেশে পাওয়া সম্ভব না। ঐসব কাজ থেকে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে অনেকগুলো পথের মধ্য থেকে একটি বেছে নিতে পারবে উচ্চশিক্ষত মেয়েরা। স্রোতের অনুকূলে সাঁতার কাটতে পারা যতটা সহজ, প্রতিকূলে ঠিক ততটাই কঠিন, তেমনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের রীতিনীতি কিংবা সংস্কারগুলোর পক্ষের ভাবনাগুলো সহজ ও স্বাভাবিক হলেও বিপরীতমুখী চিন্তাগুলো থাকে ততটাই কঠিন। ফলে সমাজের চোখে যা বাস্তব সত্য ও জীবনমুখী, একজন নারীর জীবনে সেটাই হয় কষ্টের ও অবদমনের। মেয়ের চোখের কাজল ধোঁয়া রং আঁকতে পারে না স্বপ্ন প্রতিমা তাইতো আবীরমাখা সুখগুলো পাঁজরের নিচের গুমরে মরে। আগুন ঝলসানো পোড়াগন্ধে বিদেশ যাত্রার পথটুকু যেন না হয় বিভীষিকাময়।