মেয়েরা তবে খেলবে না?

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মনিরা মিতা শরীর ও মন একই সুতায় গাঁথা। শরীর ও মনের যৌথ কল্যাণপ্রসূ বোঝাপড়ার ওপরই নির্ভর করে অনাগত দিনের সুখ-সমৃদ্ধি, নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ-ব্যর্থতা-সফলতার বিষণ্নমধুর ইতিহাস। খেলাধুলা মানুষের অন্ন-প্রাণ, মুক্তবায়ু-স্বাস্থ্য, আনন্দ-উজ্জ্বল-পরমায়ু, সাহস-বিস্তৃত বক্ষপট ইত্যাদির চিরন্তন প্রার্থনার এক মহৎ সাধনা ও সিদ্ধ। খেলাধুলার মধ্যেই মানুষ খুঁজে পায় জীবন বিকাশের উন্মুক্ত বিশালতা, পায় জীবনসংগ্রামের দুর্জয় মনোভাব। ছোটবেলা থেকেই ধেলাধুলা ও আনন্দময় পরিবেশের সংস্পর্শে বেড়ে উঠলে শিশু-কিশোরদের মন হয় উচ্ছ্বল ও আনন্দমুখর। মনের সতেজতা ও প্রাণময়তা বৃদ্ধিতে খেলাধুলার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্যই খেলাধুলার গুরুত্ব সীমাহীন। শরীরকে শক্তিশালী ও নিরোগ করে তোলার জন্য ছেলেদের যেমন খেলাধুলার প্রয়োজন রয়েছে তেমনি মেয়েদেরও রয়েছে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা। খেলাধুলা শুধু শারীরিক সুস্থতাই নয়- মানসিক প্রশান্তি ও সুস্থতাও নিশ্চিত করে। শরীর মুটিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার এবং দৈনিক কমপক্ষে এক ঘণ্টা ঘাম ঝরিয়ে খেলাধুলা না করাকে দায়ী করছে বিশেষজ্ঞরা। ছেলেদের খেলাধুলার বেলায় পরিবার সমাজ তথা দেশ যতটা উদার, মেয়েদের খেলাধুলার ব্যাপারে ততটাই সঙ্কীর্ণ। ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীর পদচারণার এখনো উলেস্নখযোগ্য হারে বাড়েনি। এর পিছনে অনেক কারণও আছে। একজন ছেলে যদি খেলাধুলায় ভালো করে তবে সে প্রশংসা পায় অথচ একজন মেয়ের ভাগ্যে জোটে ঠিক তার উল্টো, তাকে সহ্য করতে হয় তিরস্কার। তাকে 'মর্দা' 'গেছো', 'পুরুষালী' ইত্যাদি নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয়। মেয়েটিকে বিয়ে দিতে গেলেও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় খেলাধুলা। ছেলেপক্ষ নাক সিটকায়। মেয়েদের ক্রীড়াক্ষেত্রে অনগ্রসরের আরেকটি কারণ বখাটেদের উৎপাত। এটি আমাদের দেশে নারীর জন্য অন্যতম প্রধান সমস্যা। অভিভাবকরা মেয়েদের খেলার মাঠে পাঠাতে সাহস পায় না। সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা মেয়েদের চলার পথের বড় বাঁধা। খেলাধুলায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়াতে দরকার মেয়েদের জন্য বেশি বেশি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। খেলাধুলায় ভালো এমন মেয়েদের জন্য যদি আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে সামাজিকভাবে তাদের কদর বাড়বে, আবার তাদের আর্থিক সংকটেরও অবসান হবে এবং আরও বেশিসংখ্যক কিশোরী খেলাধুলায় এগিয়ে আসবে। মেয়েদের খেলাধুলা শেখানোর জন্য ভালো প্রশিক্ষকের ব্যবস্থা করতে হবে। মেয়েদের খেলার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নারীদের খেলাধুলায় উৎসাহিত করে তৈরি হওয়া দরকার জনসচেতনাতামূলক বিজ্ঞাপন, টিভি স্পট, বিলবোর্ড, পোস্টার, কার্টুন ইত্যাদি। ক্রীড়াবিদ মেয়েদের যদি চাকরির নিশ্চয়তা থাকে, তাহলে তাদের বিয়ের ক্ষেত্রে বিরাজমান সামাজিক বাধা অনেকটাই দূর হবে। মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়াতে দরকার নিয়মিত অনুশীলনের ব্যবস্থা, নিয়মিত টুর্নামেন্ট আয়োজন, খেলাধুলার জন্য বিশেষ বৃত্তি প্রদান। দরকার নারী প্রশিক্ষকও। মেয়েদের সমাজের জটিল-কুটিল নিয়মগুলো ভেফু স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে শিখতে হবে। নিজেকে সুস্থ-সবল রাখতে আগ্রহী হতে হবে খেলাধুলার প্রতি। এ দেশের ক্রীড়াঙ্গন নারীর পদচারণায় মুখরিত হোক। আমাদের শিশু ও কিশোরীরা মুক্ত পাখির মতো বেড়ে উঠুক। সব বাঁধা পেরিয়ে মেয়ে মানুষ নয় মানুষ হিসেবে বাঁচুক।