স্বপ্ন ছড়াবে সাত রং-এ

সমাজে নারীর বঞ্চনা, নারীর সংকটের বিষয়টি তার মননে রেখাপাত করেছিল ছোট্ট বেলাতেই। পারিপার্শ্বিকতা দেখে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কিছুটা শক্তপোক্তভাবেই

প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রহমান মলিস্নক এক সংগ্রামী নারী আসমা সরকার। বাকপটুতা ও সাংগঠনিক ক্ষমতায় যে কোনো পরিস্থিতিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার অসাধারণ ক্ষমতা তার সহজাত। সহপাঠী ও আশপাশের নারীদের মধ্যে তাই তিনি সাহস সঞ্চার করার চেষ্টা করেছেন। নারীদের জন্য কিছু একটা করার প্রবল ইচ্ছা মনে লালন করেছেন বহুদিন। স্বামী-সন্তান নিয়ে মোটামুটি সচ্ছল জীবনের অধিকারী হলেও স্বপ্নবাস্তবায়নে গড়ে তুলেছেন বুটিক হাউস 'সাত রং'। যায়যায়দিনের পক্ষ থেকে আলাপচারিতায় উঠে আসে নানা প্রসঙ্গ। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন কুমিলস্নায়। পরে অর্থনীতিতে অনার্সে ভর্তি হন ঢাকার ইডেন কলেজে। ভর্তি হওয়ার পরপরই বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর অনার্স কোর্স শেষ করা হয়ে ওঠেনি। পরবর্তীতে বিএ, বিএড পাস করে শিক্ষকতায় মনোনিবেশ করেন। চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট হাই স্কুলে, ইনডেক্সধারী শিক্ষক হিসেবে। স্কাউটিং এবং সাংস্কৃতিক শিক্ষক হিসেবেও তার আলাদা পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা ছিল। পর পর তিন সন্তান জন্ম নেয়ায় এবং তাদের লেখাপড়ার জন্য শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দেন। বেছে নেন স্বাধীন পেশা ব্যবসা। পৈতৃক জমি থেকে কিছু টাকা পেয়েছিলেন, তা দিয়েই শুরু করেন ব্যবসা। ব্যবসা যখন জমে উঠেছে তখন দোকান মালিক দুইমাস পরপর ভাড়া বাড়াতে থাকলে তিনি বাধ্য হয়ে নিজের জায়গায় তা স্থানান্তর করেন। তুরাগ থানা রোডের নিউ উত্তরার ধউর এলাকায়। সন্তান ও সংসার ম্যানেজ করে পরিকল্পিত কাজের মধ্যদিয়ে গড়ে তোলেন প্রিয় প্রতিষ্ঠান সাত রং। সাত রং যেন তার আরেকটি সন্তান। তার দোকান বা শোরুমে কাজ করেন ৪ জন নারী বিক্রয়কর্মী। প্রয়োজনীয় মালামালের জোগান ও মার্কেটিংয়ের কাজ তিনি নিজেই করেন। আসমা সরকার দাবি করেন, তিনি শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যেই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেননি। তার উদ্দেশ্য মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ যাতে স্বল্পমূল্যে মানসম্মত পোশাক পরতে পারে, সেটিই তার লক্ষ্য। তিনি কখনও কখনও অসচ্ছল পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে বিভিন্ন ড্রেস বিতরণ করেন। তিনি জানান, ১৫ বছর ধরে এই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। পারিবারিকভাবে তাদের কাপড়ের দোকান ছিল। মূলত বাবার কাছ থেকেই ব্যবসার অনুপ্রেরণা পান। বস্নক ও বাটিকের কারখানা গড়ে তুললেও অধিক ব্যস্ততার কারণে তা বন্ধ করে দেন। ক্রেতাদের পছন্দের জামা-কাপড় তিনি বিভিন্নস্থান থেকে সংগ্রহ করে দোকানে প্রদর্শন করেন। ব্যবসাকে সম্প্রসারিত করাই তার লক্ষ্য। কোনো ব্যাংক লোন না নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে তিনি ব্যবসাটি পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, সাধ আছে সাধ্য নাই, এমন মানুষের জন্যই তার চেষ্টা। বড় বড় শপিং মলে যেটা আকাশচুম্বি দাম, সাধারণ মানুষ কিনতে পারে না, তারা সেই একই জিনিস তার দোকান থেকে সংগ্রহ করতে পারে। জীবন মানেই সংগ্রাম। আর সেই সংগ্রামে টিকে থাকতে হলে শুধু মনোবলই যথেষ্ট নয়, আর্থিকভাবেও সবল হতে হবে। তিনি মনে করেন, নারীরা অহেতুক সময় নষ্ট করে সিরিয়াল না দেখে, মোবাইল ফেসবুকে অধিক সময় ব্যয় না করে এমন কিছু করুক, যার প্রভাব, সংসার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রকেও প্রভাবিত করবে। তার এই সাফল্যের পেছনে স্বামীর সহযোগিতা ও অবদানকে স্মরণ করেন। স্বামী সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের সহকারী পরিচালক। দুই ছেলে এক মেয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। স্বামীর আন্তরিক সহযোগিতা ও ছেলেমেয়েদের উৎসাহে তিনি এগিয়ে চলছেন।