জীবনসংগ্রামে জয়িতা সালমা

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

আখতার হোসেন খান, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
'সংগ্রামী জীবনই যথার্থ জীবন'- কথাটি বলেছিলেন সিসি কার্লটন। এই অমিয় বাণীটি তখনো হয়তো শোনেনি অথবা শুনলেও বোঝার বয়স হয়নি সালমার। তবে জীবনসংগ্রামে নামতে হয়েছে স্কুল পড়ুয়া ছোট্ট মেয়েটিকে। সংগ্রাম করতে হবে, সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হবে, অসহায় জীবনটিকে টেনে তুলতে হবে উপরে- এমনটি বুঝতে পেরেছিল সে। তাই তো আজ সে জীবনযুদ্ধে জয়ী, পুরস্কার পেয়ে হয়েছে জয়িতা। দরিদ্র ঘরে জন্ম হয়েছিল সালমার। তিন ভাইয়ের একমাত্র ছোট বোন সালমা। মা গৃহিণী, বাবা দিনমজুর। তিন ভাই বিয়ে করে আলাদা হয়ে যান। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা একটি দুর্ঘটনায় হাত ভেঙে পঙ্গু হয়ে যায়। তখনই সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। নেমে পড়ে জীবনযুদ্ধে। টিউশনি করে সংসারের পাশাপাশি পড়ালেখার খরচ চালাতে হয় তাকে। এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হয় সালমা। অর্থের অভাবে আর এগোতে পারে না সে। বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়া। চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসীর সহযোগিতায় দর্জিবিজ্ঞানে ভর্তি হয়। এরপর উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন ও নগদ টাকা পায় সালমা। সেই সঙ্গে সহকারী প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পায়। আবার কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া শুরু করে। এরপর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বস্নক, বাটিক, শো-পিচ, কার্পেট, ম্যাট, চট ও কাপড়ের ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। একই সঙ্গে কম্পিউটারসহ শিল্পোদ্যোক্তার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, তার নিজ গ্রাম 'কুঠিবয়রা পশ্চিমপাড়া কারিগরি স্কুল' নামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করে সে। তার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছে বলে জানায় সালমা। সালমার কারিগরি স্কুল থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আয় উপার্জন করে সংসারের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে এনেছে একই এলাকার মিতু, সুমী, শাবানা, ঊষাসহ অনেকেই। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মিতু জানায়, সালমার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পেরেছি, যা আমাদের জীবন চলার পথকে সহজ ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা এনে দিয়েছে। সালমা এখন সমাজকর্ম বিষয়ে মাস্টার্স করছে এবং টাঙ্গাইল বিসিক শিল্পনগরীতে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাটিং ও সেলাই প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছে। বিসিক শিল্পনগরীর সহকারী প্রকৌশলী জসিমউদ্দিন জানান, সালমা খন্ডকালিন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাটিং ও সেলাই প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছে। সারা দেশে এ পদে মাত্র ১৫ জন স্থায়ীভাবে কর্মরত আছে। অচিরেই ৬৪ জেলায় এ পদে নিয়োগ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সালমারা অগ্রাধিকার পাবে বলে আমার বিশ্বাস। তার সহকর্মী খায়রুল ইসলাম বলেন, সালমা ভীষণ পরিশ্রমী এবং কাজের ক্ষেত্রে খুব আন্তরিক। সে ২০১৪ সালে বিশ্ব নারী দিবসে শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে জয়িতা পুরস্কার লাভ করে। সালমা খাতুন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের কুঠিবয়রা গ্রামের শাহজাহান আলী ও ফিরোজা বেগমের একমাত্র কন্যা এবং তিন ভাইয়ের একমাত্র ছোট বোন।