কর্মক্ষেত্রে নারীর কর্মীবান্ধব পরিবেশ

সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাটা খুবই প্রয়োজনীয়। প্রয়োজনে সাহায্য করা, দেখা হলে সালাম দেয়া বা কেমন আছেন জানতে চাওয়া, হঠাৎ অনুপস্থিত হলে ফোন করে খোঁজ নেয়া এ সবই বন্ধু ও সহকর্মী হিসেবে আপনার কর্তব্য। কিন্তু সবার সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা করাটা বোধ হয় ঠিক নয়। সফল টিমওয়ার্কের জন্য নিজের ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি।

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

মেজর ডা. সুলতানা তানজিনা আল্‌ - মিজান
আপনি একজন প্রাণচঞ্চল, সহজ মনের মানুষ। সবাইকে নিয়ে আনন্দ করতে আপনি ভালোবাসেন। এর জন্যই আপনি বন্ধু-বান্ধবমহলে বেশ পছন্দের একজন। আপনাকে ছাড়া কোনো আড্ডা বা আলোচনা বন্ধুমহলে একেবারে হয় না বললেই চলে। এ তো গেল ছাত্রজীবন। আপনি এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর গন্ডি পেরিয়ে নিজেকে একটা জায়গায় দাঁড় করিয়েছেন অর্থাৎ আপনার কর্মক্ষেত্র। ভেবেছিলেন অফিসেও হয়তো এমনি হবে। আর তা না ভাবলেও অফিস আর ছাত্রজীবনের পরিবেশের মধ্যে যে যোজন যোজন তফাৎ তা হয়তো ভাবতেও পারেননি। কর্মক্ষেত্রে প্রথম প্রথম সবার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকলেও আস্তে আস্তে আপনার ইমেজটা যেন হয়ে উঠল আপনার শত্রম্ন। কেউ যেন আপনাকে সিরিয়াসলি নিতেই চায় না। পেছনেও বলে হরেক রকম কথা। কেউ ভাবেন আপনি টক লাভার তো কেউ ভাবেন আপনি গায়েপড়া, কেউ আবার বলেন একেবারে ভিন্ন কথা। আপনি নাকি আপনার অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বোঝাতেই এমন করেন, আপনি হয়তো আপনার চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী সহকর্মীদেরও আপনার বন্ধু ভেবে ফেলেছেন। নিজের মনের কথা উজাড় করে বলেছেন মনের কোনো এক নাজুক অবস্থায়। আপনার জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকীতে-আপনার হাসবেন্ডের দেয়া কোনো দামি সুন্দর উপহার দেখিয়েছেন মনের আনন্দ শেয়ার করার জন্য। আর এভাবেই হয়তো হয়ে উঠেছেন 'ল্যাক অফ পারসোনালিটি'র একজন। কিন্তু মনে রাখবেন, অফিসে সহকর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং ফর্মাল রিলেশনশিপের সঠিক ব্যালান্স অত্যন্ত জরুরি। কি করবেন : কর্মক্ষেত্রে প্রথমেই যা আপনার জন্য অত্যন্ত জরুরি তা হলো আপনার অফিস টাইমিং। অর্থাৎ সঠিক সময়ে অফিসে আসা এবং নির্ধারিত সময়েই অফিস ত্যাগ করা। সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কের রসায়নে প্রধান উপকরণ প্রোফেশনালিজম অর্থাৎ পেশাদারিত্ব। আপনার কাজই যেন হয় আপনার অফিস সময়ের প্রথম এবং প্রধান অগ্রগণ্যতা। সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময়ও কাজসংক্রান্ত আলোচনাকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিন। সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাটা খুবই প্রয়োজনীয়। প্রয়োজনে সাহায্য করা, দেখা হলে সালাম দেয়া বা কেমন আছেন জানতে চাওয়া, হঠাৎ অনুপস্থিত হলে ফোন করে খোঁজ নেয়া এ সবই বন্ধু ও সহকর্মী হিসেবে আপনার কর্তব্য। কিন্তু সবার সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা করাটা বোধ হয় ঠিক নয়। সফল টিমওয়ার্কের জন্য নিজের ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি। ছোট ছোট মন কষাকষি যেন ঝগড়াপর্যায়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অফিসে কখনো অবসর পেলে শুধু গল্প করে সময় নষ্ট না করে সেই সময় এমন কিছু করুন যা ব্যস্ততার জন্য অন্য সময় করতে পারেন না। শুধু ছোট ছোট মন্তব্য সবাই করে থাকে। কিন্তু সেটা অতিরঞ্জিত করে অসুস্থ পরিবেশ তৈরি করা বোকামির পরিচয়। পেছনে কথা বলার চেয়ে সামনাসামনি বুঝিয়ে বলাটাই শ্রেয়। প্রতিটি মানুষেরই কাজ করার একটা নিজস্ব ধরন থাকে। সেই নিজস্বতাকে সম্মান করা উচিত। নিজের চিন্তা-ভাবনা অন্যের ওপরে চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়। গায়ে পড়ে কাউকে উপদেশ না দেয়াটাই শ্রেয়। তবে কেউ যদি বিশেষ করে কনিষ্ঠদের যদি কোনো ব্যাপারে সাজেশন চায় সে ক্ষেত্রে অবশ্য নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সাহায্য করা যায়। কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন পদের মানুষ কাজ করেন। মনে রাখতে হবে সবারই একটা আত্মসম্মান আছে এবং সেই অনুযায়ীই ব্যবহার করতে হবে। সব শেষে বলি- অফিসের কাজ হচ্ছে একটা টিমওয়ার্ক। কাজেই সবাই মিলেমিশেই একত্রে কাজ করতে হবে, তবেই হবে সঠিক প্রফেসনালিজম অর্থাৎ পেশাদারিত্ব।