অপরিণত শিশু-মৃতু্যর আক্ষেপ ঘোচাবে কৃত্রিম মাতৃগর্ভ

প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মনিকা ইসলাম মাতৃত্বকালীন সময়ে রীতিমত একটি আতঙ্কের নাম 'অপরিণত শিশুর জন্ম'। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই গর্ভের শিশুটি যদি পৃথিবীতে চলে আগে তবে তার শারীরিক ভোগান্তির শেষ থাকে না। সাধারণত ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগে একটি শিশু জন্ম নিলে তাকে অপরিণত শিশু বলা হয়। বিশ্বব্যাপী এখনো নবজাতক শিশু মৃতু্যর অন্যতম বড় কারণ অপরিণত শিশু জন্ম। নেদারল্যান্ডসের একদল বিজ্ঞানী বলছেন, আগামী এক দশকের মধ্যে তারা কৃত্রিম মাতৃগর্ভ তৈরি করতে সক্ষম হবেন। এর ফলে প্রিম্যাচিউরড বেবি বা অপরিণত শিশু, অর্থাৎ মাতৃগর্ভে ৩৭ সপ্তাহ কাটানোর আগেই জন্ম নেয়া শিশুদের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে। একটা পস্নাস্টিকের ব্যাগের মতো দেখতে এই কৃত্রিম জরায়ুর ভেতরে থাকবে অপরিণত শিশুটি, তার সঙ্গে জুড়ে দেয়া পাইপ দিয়ে তার জন্য আসবে রক্ত ও অন্যান্য তরল। ঠিক মায়ের গর্ভের মতোই পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে সেখানে। নেদারল্যান্ডসের ম্যাক্সিমা মেডিকেল সেন্টারে এই মুহূর্তে এই কৃত্রিম মাতৃগর্ভ তৈরির কাজ চলছে, যা প্রধানত খুবই অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়া শিশুদের কথা মাথায় রেখে করা হচ্ছে। লিসা ম্যান্ডিমেকার কৃত্রিম মাতৃগর্ভের নকশা তৈরি করছেন। তিনি বলছেন, 'কৃত্রিম মাতৃগর্ভ হবে একটি পস্নাস্টিকের ব্যাগের মতো। নির্ধারিত সময়ের আগেই পৃথিবীতে চলে এসেছে যে শিশু, মায়ের পেট বের করে তাকে সেই ব্যাগে ঢোকানো হবে।' সেখানে সে চার সপ্তাহ সময় অবস্থান করবে। তারপর নতুন করে সে আরেকবার ভূমিষ্ঠ হবে পৃথিবীতে।' এই মুহূর্তে পাঁচটি বড় বড় বেলুন বানানো হয়েছে, প্রত্যেকটির সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে অসংখ্য পাইপ। এই বেলুনগুলোর মধ্যে শিশুরা মাতৃগর্ভে যে তরলের মধ্যে সাঁতার কাটে, তার ব্যবস্থা করা হবে। আর বিভিন্ন পাইপের মাধ্যমে সেখানে তরল ও রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা হবে।' লিসা বলছেন, প্রতিটি বেলুন তৈরি করা হবে একটি শিশু মাতৃগর্ভে সর্বশেষ যে ওজনে রয়েছে, তার দ্বিগুণ আকৃতিতে, যাতে শিশুটির চলাফেরা মাতৃগর্ভের মতোই স্বাভাবিক থাকে। এই ল্যাবের গাইনি চিকিৎসক গিড ওয়েই, ২৭ বছর ধরে এই পেশায় আছেন। তিনিও এই গবেষণার দলে রয়েছেন। কর্মজীবনে তিনি বহু নবজাতকের মৃতু্য প্রত্যক্ষ করেছেন, বহু মা-বাবার আক্ষেপ আর হতাশাও দেখেছেন। অপরিণত শিশুর জন্মের পরপরই প্রথমে যে সমস্যাটি হয়, সেটি হলো খুব দ্রম্নত ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা। তাছাড়া যেহেতু সে অপরিণত, তাই তার মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে চামড়া পর্যন্ত, প্রতিটি জায়গা অপরিণত থাকে। যেমন, তার মস্তিষ্কে সমস্যা হতে পারে। জন্মের পরপরই সে শ্বাস নিতে পারে না। এরপর তার ফুসফুসটা অপরিণত থাকতে পারে। এ ছাড়া শরীরের গস্নুকোজ ব্যবস্থাপনা করতে পারে না। লবণ, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়ামের ব্যবস্থাপনা করতে পারে না। আর এসব শিশু খুব সংক্রমণপ্রবণ হয়। যে কারণে খুব সহজেই তারা জীবাণু আক্রান্ত হয়। তাই কৃত্রিম মাতৃগর্ভের গবেষণাটি যদি সত্যি সফলতার মুখ দেখে তাহলে অনেক মায়ের অপরিণত সন্তান হারানোর যন্ত্রণা লাঘব হবে।