নারীর ক্ষমতায়নে তথ্যপ্রযুক্তি

নারীর ক্ষমতায়ন বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রধান লক্ষ্য। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ডিজিটাল নাগরিক হিসেবে নারীর আত্মপ্রকাশ তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। তাই তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদের এগিয়ে নিতে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের উলেস্নখযোগ্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মহিলা সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্প অন্যতম ভূমিকা পালন করছে

প্রকাশ | ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

শারমিন আক্তার
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীরা অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীরা তাদের এ দক্ষতাকে ব্যবহার করে যে কোনো কাজ করে নিজে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে এবং দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে পারে। শুধু তাই নয়- আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীরা আইসিটি ক্ষেত্রে কাজ করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারে। আত্মবিশ্বাস, নিজস্ব দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নারীরা অংশ নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারে এবং তাদের সামাজিক রীতিনীতি ও লিঙ্গসংক্রান্ত বাধার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য নিজেকে তৈরি করতে পারে। এই দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক উন্নতির জন্য আইসিটি কোর্সে প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের অবস্থানের ওপর আইসিটির প্রভাব হিসেবে বেশির ভাগ নারী আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও জ্ঞানার্জন করে তাদের কর্মসংস্থানে নিজের অবস্থান এবং রোজগারের ক্ষমতা বৃদ্ধি বা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবন-মান উন্নত করার চেষ্টা করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীদের কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন লাভ করার ক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে সমাজে একটি ইতিবাচক প্রভাব বোঝা যায়। নারীর সামাজিক ও সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য আইসিটি ব্যবহার করার ক্ষমতা একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে পারে। আইসিটি প্রশিক্ষণ ও ব্যবহার ব্যক্তিগত পর্যায়ে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারে। নারীর ক্ষমতায়নে তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বায়নের এই যুগে কোনো দেশকে এগিয়ে যেতে হলে, কোনো জাতিকে উন্নত করতে হলে, নারীর ক্ষমতায়নের বিকল্প নেই। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি সেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের সোপান খুলে দিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া যেমন উন্নয়ন সম্ভব নয়, তেমনি নারীদের এ খাতে অংশ নেয়া ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীর ক্ষমতায়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এ কারণেই অগ্রগণ্য। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে নারীর ক্ষমতায়নের উপায় তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে বসে নারীরা কম্পিউটারে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের দক্ষ করে তুলছে এবং স্বাবলম্বী হচ্ছে। এতে অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়নের পথ সুগম হচ্ছে। পথের দূরত্বকে অতিক্রম করে প্রযুক্তির কল্যাণে যে কোনো নারী আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে সক্ষম। দেশের বিশালসংখ্যক নারী অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হলে জাতীয় উন্নয়নে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়বে। বর্তমানে নারীরা উপার্জন থেকে শুরু করে অর্থ ব্যয় করে বিভিন্ন সেবার প্রতিটি পদক্ষেপ প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করছে। তথ্যপ্রযুক্তি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশ নেয়ার ব্যাপারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন- স্থানীয় সরকার, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু অবাধ ও গ্রহণযোগ্য তথ্য উপস্থাপন ও প্রচার এ প্রযুক্তির ব্যবহার নারীদের নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী করেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অবস্থার তাৎক্ষণিক তথ্যসমাহার প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে সবার হাতের নাগালে, যা নারীদের করেছে আত্মপ্রত্যয়ী ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আত্মবিশ্বাসী। জাতিসংঘ নারীদের জন্য রাজনৈতিক সহযোগিতামূলক কনসালটেশনের অনলাইন কমিউনিটি চালু করেছে, যা বিশ্বব্যপী নারী নেত্রীদের যোগাযোগের এক নতুন মাধ্যম। সামাজিক সহযোগিতায় সামাজিক সেবা ও নারীদের অধিকার ভোগের বিষয়টি অগ্রগণ্য। সমাজে নারী তথ্যপ্রযুক্তির সেবা দিয়ে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করতে পারে এবং এই ভূমিকা সমাজের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যপ্রযুক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য, শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ ত্বরান্বিত করা, পারিপার্শ্বিক বিষয়ে সচেতনতা বাড়ায়। পরিবেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঝুঁকিকে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবাইকে অবহিত করা এবং এ ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ সামাজিক সহযোগিতার অন্তর্ভুক্ত। নারীর ক্ষমতায়নে তথ্যপ্রযুক্তির সবচেয়ে বড় অবদান নারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। সঠিক নির্দেশনা, তথ্য ও জ্ঞানের সমাবেশে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে তারা অগ্রগামী। একমাত্র সচেতনতাই নারীদের মনে কর্মস্পৃহা তৈরি করেছে। সমাজে নানা কুসংস্কার, হুমকি উপেক্ষা করে নিজেদের অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে পথে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে মুহূর্তেই জেনে নিচ্ছে যে কোনো সমস্যার সমাধান, আইন, সহযোগিতার অবলম্বন। ইন্টারনেটের ব্যবহার, বিভিন্ন সময়োপযোগী অ্যাপস ও মিডিয়ার মাধ্যমে নারীরা আজ বিশ্বের সব বিষয় সম্পর্কে অবহিত। গ্রামীণ সমাজে মহিলাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে নারী ও শিশু, মহিলা উদ্যোক্তা, মহিলাবিষয়ক সংবাদ, নারী নীতি, সরকারি বিধি-বিধান, মহিলাবিষয়ক গবেষণা ও প্রকাশনা, আইনি সহায়তা, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাসহ নানা বিষয়ে সচেতনতায় প্রযুক্তির বিকাশ সাফল্য পেয়েছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ দিয়ে আন্তর্জাতিক অনলাইন মার্কেটের কর্মোপযোগী করে তুললে দেশের উন্নয়নে বিপস্নব ঘটবে। তাতে নারীদের ক্ষমতায়নের সঠিক আত্মপ্রকাশ ঘটবে। নারীর ক্ষমতায়ন বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রধান লক্ষ্য। সে জন্যই এসডিজির আলোকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ডিজিটাল নাগরিক হিসেবে নারীর আত্মপ্রকাশ তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। তাই তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদের এগিয়ে নিতে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের উলেস্নখযোগ্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মহিলা সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্প অন্যতম ভূমিকা পালন করছে।