নিরাপদে নেই কন্যাশিশুরা

আমাদের পরিবারে যখন দুটি শিশুর জন্ম হয়, সেই শিশু দুটির ওজন, চেহারা, ভিন্নতা এবং তাদের শক্তি, চিন্তা, কান্না, হাসি কোনো কিছুই পার্থক্য থাকে না; কিন্তু দেখা যায়, সেই শিশুটি যখন আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠে তার আশপাশের যে পরিবেশ, পরিবার, সমাজ আস্তে আস্তে মনে করিয়ে দেয় যে তুমি কন্যাশিশু, এ ছাড়া খাবার-দাবারের বৈষম্যের কারণে পুষ্টির দিক থেকে মেয়েশিশুটি অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়ে থাকে। একটি পুত্রশিশুকে যেভাবে স্বাগত জানানো হয় সে ক্ষেত্রে কন্যাশিশুকে সেভাবে জানানো হয় না। পুত্রশিশুকে জাঁকজমকভাবে এবং কন্যাশিশুকে অনাড়ম্বরভাবে স্বাগত জানানো হয়।

প্রকাশ | ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

নন্দিনী ডেস্ক
কিছু সামাজিক কথিত নীতির ফলে শিশুকাল থেকেই কন্যাশিশুদের এমনভাবে গড়ে তোলা হয়, যেন তারা আগামীর কিছু হতে না শেখে। তাদের প্রতি করা বৈষম্যমূলক আচরণকে অন্যায় হিসেবে না দেখে সহজাত ও সমঝোতার সঙ্গে গ্রহণ করতে শেখানো হয়। যা পরবর্তী সময়ে নারীর প্রতি নিযার্তন ও সহিংসতার পথটিকে প্রশস্ত করতে সাহায্য করে। শিশু মৃতু্যহার, অপুষ্টি এসব বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নতি করলেও শিশুর সুরক্ষা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। কিন্তু এখনো কন্যাশিশুদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিনিয়তই কন্যাশিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। দেশে প্রচলিত কুসংস্কার, সামাজিক অসচেতনতা, অশিক্ষা, ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব প্রভৃতি কারণে ছেলে শিশুদের তুলনায় কন্যাশিশুরা নানা দিক দিয়ে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে নিম্নবিত্ত কোথাও নিরাপদে নেই কন্যাশিশুরা। একটি কন্যাশিশু তার পরিবারের ভেতরেই প্রথম আপত্তিকর স্পর্শ, আচরণ, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। শিশুরা অনেক ক্ষেত্রে পরিবারেও নিরাপদ নয়। আমরা শিশুদের নিরাপদ পরিবেশ দিতে পারছি না। এর কারণ হচ্ছে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ একটি কন্যাশিশুকে আমরা শিশু হিসেবে দেখছি না। দেখছি মেয়ে হিসেবে। আমাদের পরিবারে যখন দুটি শিশুর জন্ম হয়, সেই শিশু দুটির ওজন, চেহারা, ভিন্নতা এবং তাদের শক্তি, চিন্তা, কান্না, হাসি কোনো কিছুই পার্থক্য থাকে না; কিন্তু দেখা যায়, সেই শিশুটি যখন আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠে তার আশপাশের যে পরিবেশ, পরিবার, সমাজ আস্তে আস্তে মনে করিয়ে দেয় যে তুমি কন্যাশিশু, তোমার জন্য একটি নির্দিষ্ট এরিয়া আছে এবং তুমি জোরে হাসতে পারবে না, জোরে কাঁদতে পারবে না, তোমার চাহিদার একটা সীমানা থাকবে। কিন্তু ছেলে শিশুটিকে অবাধ সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় এবং তাকে তার যত ধরনের বিনোদন বা তার উচ্ছলতা প্রকাশ করার সুযোগ, তার চলাফেরা বা তার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার সুযোগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সীমা নির্ধারণ করা হয় না। এ ছাড়া খাবার-দাবারের বৈষম্যের কারণে পুষ্টির দিক থেকে মেয়েশিশুটি অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়ে থাকে। যখন একটি কন্যাশিশু গর্ভে থাকে তখনো যদি আলট্রাসনোগ্রাফ বা অন্য কোনো মাধ্যমে জানতে পারা যায় যে কন্যাশিশু জন্ম হবে সেই ক্ষেত্রে মায়ের ওপর কন্যাশিশুর ভ্রূণ অবস্থা থেকেই নির্যাতন শুরু হয় এবং কন্যাশিশুটির যখন জন্ম হয় তখন তাদের যে স্বাগত জানানো হয় সেই একটি পুত্রশিশুকে যেভাবে স্বাগত জানানো হয় সে ক্ষেত্রে কন্যাশিশুকে সেভাবে জানানো হয় না। পুত্রশিশুকে জাঁকজমকভাবে এবং কন্যাশিশুকে অনাড়ম্বরভাবে স্বাগত জানানো হয়।