কর্মজীবী নারীর কাজের ব্যাপ্তি

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

য় নন্দিনী ডেস্ক
আছমাকে প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে নগরীর মাতুয়াইল এলাকার ইটভাঙার কাজের জায়গায় হাজির হতে হয়। সঙ্গে নিয়ে আসতে হয় মাত্র সাড়ে সাত-মাস বয়সী বাচ্চাকেও। কারণ, তিনি ছাড়া বাচ্চাকে দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই। থাকেন যাত্রাবাড়ীর এক বস্তিতে। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত টানা কাজ করতে হয় তাকে। শুধু দুপুরে খাওয়ার জন্য ৪৫ মিনিট ছুটি পান কাজ থেকে। আর বাচ্চা সঙ্গে থাকায় কাজের ফাঁকে মাঝেমধ্যে বাচ্চার দেখাশোনা করার সুযোগ পান আছমা। সারাদিন কাজ শেষে বাসায় পৌঁছেন কিন্তু তার শুয়ে-বসে বিশ্রাম নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। গোসল করেই ঢুকতে হয় রান্নাঘরে। সবার জন্য রান্না শেষ করে, সবার খাওয়া শেষে তারপর নিজে খেয়ে যখন বিছানায় যান তখন রাত প্রায় সাড়ে ১১টা। পরদিন আবার ভোর ৫টার মধ্যে উঠে সবার জন্য খাবার তৈরি করতে হয় তাকে। প্রায়ই ভোরবেলা নিজে কোনো কিছু না খেয়েই ছেলেকে নিয়ে চলে যান মাতুয়াইলে। অন্যদিকে, নাবিলা পেশায় ব্যাংকার। বছর দুয়েক আগে বিয়ে করেন আরেক ব্যাংকারকে। বছর ঘুরতেই তাদের কোলজুড়ে আসে এক মেয়ে সন্তান। তার নিত্যদিনের জীবনটাও অনেকটা আছমার মতোই। সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে গুলাশন-১-এ আমার অফিসে পৌঁছতে হয়। বাসা নগরীর মধ্য বাড্ডা এলাকায়। সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য নাশতা রেডি করি। তারপর নিজে ফ্রেশ হয়ে নাশতা করে অফিসের গাড়ির জন্য যখন রাস্তায় পৌঁছাই তখন ঘড়ির কাঁটা ৮টা ২০-এ। অফিস শেষ করে বাসায় পৌঁছাই রাত সাড়ে ৭টায়। আসার সময় আমার বাবার বাড়ি থেকে বাবুকে নিয়ে তারপর বাসায় ফিরি। এরপর বাবুর খাবার রেডি করে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিই। তারপর আমাদের রান্না-বান্না শেষ করে খেতে খেতে রাত প্রায় সাড়ে ১১টা বেজে যায়। এভাবেই দিনের পর দিন চলছে আছমা, নাবিলাসহ লাখো নারীর কর্মজীবন আর সংসার। তারা দুই হাতে একই সঙ্গে সামলাচ্ছেন সংসার ও কর্মস্থল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, একজন কর্মজীবী নারী, পুরুষের দ্বিগুণ কাজ করেন। তবে কর্মজীবী নারীর গৃহস্থালি কাজের কোনো আর্থিক মূল্যায়ন করা হয় না বলেই এর গুরুত্ব দৃশ্যমান হয় না। বিবিএস পরিচালিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপে কর্মজীবী নারীর ঘরের কাজকে দ্বিগুণ বোঝা বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। জরিপ মতে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই কর্মজীবী এমন পরিবারে শতকরা ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই রান্নার কাজ করেন নারী। অন্যদিকে কর্মজীবী পুরুষ যারা রান্না করেন তাদের সংখ্যা মাত্র আড়াই শতাংশ। এ ছাড়া ১০০ জন কর্মজীবী নারীর মধ্যে ৮৯ জনই কাপড় ধোয়ার কাজ নিজেরা করে থাকেন। অন্যদিকে মাত্র ১২ শতাংশ পুরুষ তাদের নিজেদের কাপড় নিজেরা ধুয়ে থাকেন। অন্য পুরুষদের কাপড় ধোয়ার কাজ করেন মূলত বাড়ির অন্য নারী অথবা গৃহকর্মীরা। কর্মজীবী নারীর মধ্যে ৫৩ শতাংশ নারী পরিবারের অন্যান্য সদস্য যেমন- শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ সদস্যদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন। আর মাত্র ২১ শতাংশ কর্মজীবী পুরুষ এ দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে, ২৬ শতাংশ কর্মজীবী নারী চাকরির পাশাপাশি সংসারের জন্য কেনাকাটার দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। জরিপ মতে, এসব কাজের বাইরেও সংসারের অন্যান্য কাজগুলোতে কর্মজীবী নারীর অংশগ্রহণ কর্মজীবী পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি। জরিপে বলা হয়, কর্মজীবী নারীরা পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ পাচ্ছেন না।