ধমীর্য় বিশ্বাসকে পুঁজি করে চলছে অপচিকিৎসা

প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০১৮, ১১:৩৫

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা

গাইবান্ধার প্রত্যন্ত এলাকায় জটিল সব রোগের জন্য চলছে কবিরাজি চিকিৎসা। মানুষের ধমীর্য় বিশ্বাসকে পুঁজি করে নেচে গেয়ে চলছে চিকিৎসার নামে ভÐামি আর প্রতারণা। এসব অপচিকিৎসায় রোগীরা আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হলেও কবিরাজের দাবি এমন চিকিৎসায় অনেক রোগীকে সুস্থ করে তুলেছেন তারা। প্রতিদিনেই গ্রামঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় শতশত মানুষের সামনে এ ধরনের অপচিকিৎসায় সাধারণ মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন; কিন্তু এসব ভÐ ও প্রতারক কবিরাজ-ফকিরের বিষয়ে উদাসীন পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ। গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের তিলকপাড়া গ্রাম। প্রত্যন্ত এ গ্রামের মুনছুর আলীর স্ত্রী সালেহা বেগম (৫২) তিন মাস আগে হঠাৎ করে হাত-পা অবস (প্যারালাইসিস) হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সরেজমিনে দেখা যায়, চলছে নাচ-গান। এ কোনো যাত্রাপালা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দৃশ্য নয়। চলছে রোগীর চিকিৎসা। কবিরাজের কথায় বাড়ির উঠানে টানানো হয় সামিয়ানা। সামিয়ার নিচে মাঝখানে চেয়ারে বসানো হয় রোগীকে। তার চারপাশে দঁাড় করে রাখা হয় চারটি কলাগাছ। আর এই কলা গাছের সঙ্গে লাইন করে রাখা হয় ৫ থেকে ১০ কন্যা শিশুকে। ভেতরে চলছে খঞ্জনি, দোতরা আর ঢোল-ঢাকের বাজনা। এসব বাজনার সঙ্গে কবিরাজ হিজড়াকে নিয়ে চারপাশে ঘুরছেন। ঘোরার মাঝে রোগীর হাত-পায়ে তেল মালিশ ও ঝাড়– দিয়ে অঁাচড় করেই নাকি রোগ ভালো করছেন কবিরাজ। এসব চিকিৎসা করতে কবিরাজ রোগীর স্বজনদের সঙ্গে আগেই চুক্তিভিত্তিক মোটা অঙ্কের টাকা ঠিকঠাক করেন। টাকা হাতে পেলেই কবিরাজ শুরু করেন তার চিকিৎসা কাযর্ক্রম। তবে এসব ঢাক-ঢোল আর গানের শব্দে কখনো কখনো রোগী নিজেই চিৎকার করে উঠছেন। তারপরেও চলছে চিকিৎসা। মুনছুর আলী জানান, সালেহা বেগমের রোগ নিয়ে কখনো কোনো চিকিৎসকের পরামশর্ নেননি। এমনকি তিনি কোনো চিকিৎসাকেন্দ্রেও যাননি। তবে স্ত্রীকে সুস্থ করে তুলতে মুনছুর তার বাড়িতে ডেকে আনেন পাশ্বর্বতীর্ পলাশবাড়ীর ফকিরহাটের কবিরাজ শহিদুল বাবরীকে। গত ৮ দিন ধরে কবিরাজ শহিদুল তার দলবল নিয়ে বেহুলার গানের সঙ্গে নেচে নেচে সালেহা বেগমের হাত-পায়ে মালিশ করছেন তেল। আবার কখনো দেওয়া হচ্ছে ঝাড়–র অঁাচড়। এভাবে তেল মালিশে তার স্ত্রী সুস্থ হচ্ছেন। আগের চেয়ে তিনি এখন অনেকটা সুস্থ। এভাবে আরও কিছুদিন চিকিৎসা চললে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হবেন বলে দাবি করেন তিনি। তিলপাড়া গ্রামের হুমায়ুন কবীর জানান, এভাবে চিকিৎসা একটি ভÐামী ছাড়া কিছুই নয়। রোগীকে চিকিৎসাকেন্দ্র বা ভালো চিকিৎসকের পরামশর্ নিলে রোগ ভালো হতো। কিন্তু এমন চিকিৎসা করাতে তারা বাধা দিয়েছেন কিন্তু রোগীর স্বজনরা তাদের উল্টো হুমকি দিয়েছেন। মধ্যপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনারুল ইসলাম জানান, মানুষের মধ্যে এখনো সেই পুরনো আমলের ধ্যান-ধারণা রয়েছে। এসব ধ্যান-ধারণার কারণে তারা তেল মালিশ ও ঝাড়-ফুঁকে বিশ্বাসী। এমন চিকিৎসা একটি ভÐামী ও প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। তবে এমন অপচিকিৎসায় বাধা দিলেও উল্টো তাদের হুমকির মধ্যে পড়তে হয়। এ কারণে তারা অনেকটাই অসহায়। কবিরাজ শহিদুল বাবরী বলেন, দীঘির্দন ধরে তিনি জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিসহ নানা রোগের চিকিৎসা করে আসছেন। এর মধ্যে তিনি প্যারালাইসিস রোগের চিকিৎসায় বেশি করেন। এ পযর্ন্ত তার হাতে অনেক রোগী সুস্থ হয়েছেন বলেও দাবি করেন। এ বিষয়ে সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মারদিয়া সারাহ বলেন, ‘আধুনিক যুগেও গ্রামগঞ্জের এমন অপচিকিৎসার পেছনে সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে জানালেন সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মারদিয়া সারাহ। কারও রোগ হলে প্রথমেই তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা চিকিৎকের কাছে গিয়ে রোগ শনাক্ত করতে হবে। তা না হলে এসব অপচিকিৎসার কারণে রোগী আরও জটিল রোগে ভুগবেন। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহলের সহায়তায় এসব চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগ পুলিশের সহায়তা নিয়ে এসব ভÐ কবীরাজদের আইনের আওতায় আনা হবে’।