শাসন বা ক্ষমতা নয় দরকার মমতা

সন্তান অনেক সময় ভুল করে, বাবা-মা তাকে শাসন করে। তবে তাদের শাসনেও থাকে সহানুভূতি। সহানুভূতির সঙ্গে শিশুকে সংশোধন করার চেষ্টা করে আর সে চেষ্টা শারীরিক শাস্তির চেয়ে অনেক বেশি সুফল বয়ে আনে। সন্তানকে মা শেখায় পরিবারে বড়দের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ছোটদের প্রতি আদর-স্নেহ প্রদর্শন করতে।

প্রকাশ | ৩০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মনিরা মিতা
সন্তানের জীবনে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক মা। মা হয়তো ক্লাসের ব্যাক বেঞ্চের অথবা লাস্ট গার্ল। পরীক্ষায় ফেল করে শিক্ষকের বকা খেয়ে চোখ আর নাকের পানি এক করা মা তবুও সেই সন্তানের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। শ্রেণি কক্ষের রোল, গ্রেডিং কোনো কিছুই মাযের প্রতি সন্তানের মাত্রাকে প্রভাবিত করে না। যা প্রভাবিত করে তা তার স্বপ্ন, ত্যাগ, মমতা আর ভালোবাসার তীব্রতা। মায়ের কাছেই সন্তান প্রথম পড়তে শেখে। মা-ই প্রথম শিক্ষার আলো জ্বালায় সন্তানের মনে। সন্তানকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে মায়ের ভূমিকাই প্রধান ও মুখ্য। একজন সচেতন, মা-ই পারেন তার সন্তানকে যথার্থ মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে। একজন শিশুর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় আর সাথী তার মা। মা শুধু একজন জন্মদাত্রী নয়। সুন্দর চরিত্রবান সন্তান তৈরির কারিগরও বটে। মা যতটা নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার ও দরদের সঙ্গে শিশুর পরিচর্যা ও লেখাপড়া করান তা অন্য কারও পক্ষে অসম্ভব। বই-খাতা থেকে শুরু করে চুলের সিঁথি পর্যন্ত পরিপাটি করে সাজিয়ে সন্তানকে স্কুলে পাঠানো কেবল মায়ের পক্ষেই সম্ভব। সন্তান অনেক সময় ভুল করে, মা তাকে শাসন করে। তবে মায়ের শাসনেও থাকে সহানুভূতি। মা সহানুভূতির সঙ্গে শিশুকে সংশোধন করার চেষ্টা করে আর সে চেষ্টা শারীরিক শাস্তির চেয়ে অনেক বেশি সুফল বয়ে আনে। সন্তানকে মা শেখায় পরিবারে বড়দের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ছোটদের প্রতি আদর-স্নেহ প্রদর্শন করতে। পৃথিবীর সব রোগের সবচেয়ে কার্যকার ওষুধ হলো একটি প্রশান্ত মন। আর সন্তানের মনকে প্রশান্ত রাখার মহৌষধ হলো মা। সন্তান জন্মের পর থেকেই মা কল্পনার ক্যানভাসে ছবি আঁকে। মানবিক, মূল্যবোধ আর দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত হয়ে গড়ে উঠবে তার সোনামণি, হবে আদর্শ নাগরিক। দেশপ্রেম ফেরিওয়ালার কাছে কিংবা দোকানে কিনতে পাওয়ার মতো কোনো বস্তু নয়। দেশপ্রেম একটি গভীর অনুভূতির নাম। যে অনুভূতি শিহরিত করে দেশের জন্য, মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে। সন্তানের মনে এই দেশপ্রেম মা-ই প্রথম ভালোবাসা গেঁথে দেয়। সূর্যের ঘুম ভেঙে জেগে ওঠার দৃশ্য দেখতে কতই না সুন্দর। মা তার সন্তানকে ঘুম থেকে তুলে দেখান সেই সৌন্দর্য। সেই সঙ্গে দিনের প্রথম ভাগে মনোবাক্যে স্রষ্টার ইবাদত করে মনকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করতে মা-ই শেখায় সন্তানকে। মা সন্তানকে শোনায় সততা, মানবতা, শুদ্ধাচারের গল্প যা সন্তানকে দেখায় আলোর পথ। সন্তানের জীবনের সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী তার মা-বাবা তাই সন্তানকে তাদের কথার গুরুত্ব দিতে হবে। সন্তান জন্মগ্রহণের দিন থেকেই মা-বাবা তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নের অনেক শাখা-প্রশাখা থাকে কিন্তু মূল বিষয় হলো 'সন্তান একজন ভালো মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে।' সন্তানের জন্য স্বপ্ন বুনতে বুনতে জীবনের পথচলায় একজন ফেরিওয়ালা হয়ে একজন মা অনেক মাঠঘাট, বন্দর পেরিয়ে পড়ন্ত বেলায় এসে পৌঁছে। চোখের চারপাশে জমে ওঠে ক্লান্তির ছোপ ছোপ কালো দাগ। এ বয়সে একটু শান্তি চায় বৃদ্ধ মা-বাবা বৃদ্ধাশ্রম না। আদরের সন্তান বড় হয়ে যেন শেকড়কে ভুলে না যায়। সন্তানকে মনে রাখতে হবে তার বড় হওয়ার পিছনে ছিল তার মা-বাবা এবং সারাজীবনে তারাই হয়ে থাকবেন সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী।